ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আতঙ্ক ॥ যোগাযোগ ব্যবস্থা কার্যত অচল

প্রকাশিত: ০৮:৩৯, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

আতঙ্ক ॥ যোগাযোগ ব্যবস্থা কার্যত অচল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আদালতের রায়কে কেন্দ্র করে সারাদেশে সড়ক ও নৌ যোগাযোগ কার্যত অচল ছিল। ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও কিছু ট্রেন বিলম্বে ঢাকা থেকে ছেড়ে গেছে। তেমনি বিলম্বে ঢাকায় এসেছে। রাজধানীর প্রবেশ দ্বারগুলোতে ছিল বিশেষ নিরাপত্তা তল্লাশি। সব ধরনের পরিবহনেই পুলিশের তল্লাশি দেখা গেছে। পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রায়কে কেন্দ্র করে নাশকতার আশঙ্কায় বাস ও নৌযান কার্যত বন্ধ ছিল। তাছাড়া আতঙ্কের কারণে যাত্রী না হওয়াও বাস চলাচল না করার ক্ষেত্রে একটি বড় কারণ ছিল বলে জানান তারা। এদিকে নিরাপত্তার কড়াকড়ির মধ্যে রাজধানী শহর ছিল অনেকটাই ফাঁকা। নামমাত্র চলেছে বাস। রায় ঘোষণার পর একেবারেই যানবাহনসহ সাধারণ মানুষের চলাচল কমে যায়। যানজটমুক্ত শহরে চলাচলের একমাত্র বাহন ছিল রিক্সা। তাও বাড়তি ভাড়া গুনে যাত্রীদের যাতায়াত করতে হয়েছে। তবে নাশকতা প্রতিরোধে নগরীর অলিগলিসহ বিভিন্ন পয়েন্টে ক্ষমতাসীন দলের লোকদের অবস্থান করতে দেখা গেছে। বিরোধী দল জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকেও নেতাকর্মীরা রাজপথে ছিলেন। রাজধানীর চারটি বাস টার্মিনালে অবস্থান নেন পরিবহন মালিক শ্রমিকরা। বৃহস্পতিবার পরীক্ষা থাকায় শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। এদিকে রায় ঘোষণার পর স্বস্তি প্রকাশ করেছেন নগরীর সাধারণ মানুষ। তারা বলছেন, আদালত বিচার করেছে। কেউ অন্যায় করলে শাস্তি পাবে এটাই স্বাভাবিক। এ নিয়ে রাজনৈতিক উত্তেজনা বা সাধারণ মানুষদের দুর্ভোগের মধ্যে ফেলে দেয়া ঠিক নয়। রংপুরের রিক্সাচালক আশরাফ বলেন, খালেদা জিয়ার বিচার হওয়ায় আমি আনন্দিত। গ্রামে গিয়ে মানুষকে দাওয়াত করে খাওয়াব। তিনি বলেন, যারা এতিমের টাকা মেরে খায় তাদের বিচার হবে এটাই স্বাভাবিক। বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কাজ করা রতন প-িত বলেন, বিচার বিভাগের রায় নিয়ে দেশ অচল হয়ে যাবে এটা কোন সভ্য দেশের আলামত নয়। বিচার বিভাগকে স্বাধীনভাবে চলতে দেয়া উচিত। রাজনৈতিক উত্তেজনার জন্য ক্ষোভ প্রকাশ করে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের সামনের অভিভাবকরা বলেন, এটা কেমন বাস্তবতা। পাবলিক পরীক্ষা চলছে দেশে। অথচ আতঙ্কে যানবাহন বন্ধ। রাজনৈতিক হুমকি-পাল্টা হুমকি থেকে সরে আসতে দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানান তারা। বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, মোড়ে মোড়ে যানবাহনের জন্য অপেক্ষা করছে রাজধানীবাসী; একেবারেই হাতে গোনা গণপরিবহন চলছে সড়কে। পাঠাও, উবার ও বাহনের মতো এ্যাপভিত্তিক রাইড শেয়ারিং সেবাগুলো সাময়িকভাবে বন্ধের নোটিস আগেই গ্রাহকদের জানানো হয়েছিল। ফলে রায় ঘিরে উত্তেজনা আর উৎকণ্ঠার মধ্যে জরুরী প্রয়োজনে রাস্তায় নামা অফিসগামী যাত্রী ও এসএসসি পরীক্ষার্থীদের পোহাতে হয়েছে দুর্ভোগ। ব্যাংক কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলাম বলেন, সকাল ১০টার অফিস ধরতে ভোর সাড়ে ৬টায় রামপুরা ব্রিজ এলাকা থেকে রওনা দেই। উত্তরা যেতে কত সময় লাগবে বলতে পারি না। তিনি বলেন, গণপরিবহন সঙ্কট হতে পারে, এজন্য অনেক আগেই বাসা থেকে বের হয়েছি। অফিসে গুরুত্বপূর্ণ কাজ রয়েছে। টঙ্গীগামী বাসের অপেক্ষায় আছি, কিন্তু বাসের দেখা নেই। বুধবার রাতে যে বাসগুলো রামপুরা টিভি সেন্টার এলাকায় ছিল, সে বাসগুলোর কর্মীরা বলছে, তারা কুড়িল পর্যন্ত যাবে। যেগুলো যাচ্ছে টঙ্গী, সেগুলোতেও তিলধারণের ঠাঁই নেই। মিরপুর যাওয়ার জন্য বাসের অপেক্ষায় ছিলেন শয়ে শয়ে মানুষ। মালিবাগ রেলগেট এলাকায় বাসের অপেক্ষা করছিলেন অনেকে। উত্তরাগামী তুরাগ, অনাবিল, ছালছাবিল ও রাইদা পরিবহনের যে বাসগুলো আসছিল, সবগুলো ছিল যাত্রীতে পূর্ণ। সুপ্রভাত পরিবহন গুলিস্তান থেকেই দরজা বন্ধ করে আসছিল। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাস চলাচল কমতে থাকে। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকেও গুলিস্তানের গোলাপশাহ্ মাজার ও সার্জেন্ট আহাদ পুলিশ বক্স এলাকা ঘুরে দেখা যায়, গুলিস্তান থেকে মাওয়াঘাটগামী ইলিশ পরিবহন, নরসিংদীগামী মেঘালয় ও বিআরটিসি পরিবহন, দক্ষিণবঙ্গগামী টুঙ্গীপাড়া পরিবহন, মধুমতি পরিবহন, ইমাদ এন্টারপ্রাইজ, বান্দুরা, মুন্সীগঞ্জ ও মাওয়াগামী বিভিন্ন পরিবহনের বাস একেবারেই কম। সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল ও গুলিস্তানের বাস ডিপো থেকে দূরপাল্লার কয়েকটি বাস ছেড়ে গেলেও যাত্রী ছিল অনেক কম। মহাখালী বাস টার্মিনাল মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম বলেন, যাত্রী কম বিধায় গাড়ি ছেড়ে যাচ্ছে না। সকালের দিকে নগরীর নিউমার্কেট এলাকা ও সায়েন্স ল্যাব এলাকার চিত্র ছিল থমথমে। দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো সেভাবে খুলেনি। ধানমন্ডি হকার্স মার্কেট ও চন্দ্রিমা সুপার মার্কেটের কটি দোকান খুললেও সকালে ক্রেতা ছিল অনেক কম। অন্যান্য এলাকায় একই চিত্র দেখা গেছে। মতিঝিল থেকে ফার্মগেট যেতে সময় লেগেছে সর্বোচ্চ ১৫ মিনিট। যেখানে এক ঘণ্টারও বেশি সময়ে পৌঁছার নিশ্চয়তা থাকে না। এদিকে সকালে মগবাজার এলাকা দিয়ে খালেদা জিয়ার গাড়ি বহর যাওয়ার সময় বিএনপির নেতাকর্মীরা ব্যাপক শো-ডাউন করার চেষ্টা করে। এতে এলাকার দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। এরপর কাকরাইল এলাকায় একটি মোটরসাইকেলে আগুন দেয় বিএনপি নেতাকর্মীরা। এদিকে রায়কে কেন্দ্র করে সদরঘাটে ঢাকা নদী বন্দরে বিভিন্ন এলাকা থেকে বুধবার রাত থেকে লঞ্চ আসা বন্ধ হয়। বৃহস্পতিবার খুব কমসংখ্যক লঞ্চ ঘাটে আসে। রাজপথে সরব জাপা ॥ খালেদা জিয়ার রায়কে কেন্দ্র করে নিজ নির্বাচনী এলাকায় যে কোন ধরনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি এড়াতে ভোর থেকেই ঢাকা-৪ আসনের এমপি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলার নেতৃত্বে রাজপথে অবস্থান নেন শ্যামপুর কদমতলী থানার জাতীয় পার্টির নেতারা।
×