ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে খালেদার গাড়িবহরে নেতাকর্মীদের জমায়েত

প্রকাশিত: ০৮:৩৮, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে খালেদার গাড়িবহরে নেতাকর্মীদের জমায়েত

শংকর কুমার দে ॥ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলার রায়ের দিন পুলিশের চোখে ফাঁকি দিয়ে আদালতে যাওয়ার পথে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে মগবাজার এলাকা থেকে বিএনপির নেতা-কর্মীদের জমায়েত হওয়ার ঘটনার বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে পুলিশ। ঢাকা মহানগর পুলিশ প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সভা, সমাবেশ, মিছিল নিষিদ্ধ ঘোষণা করার পরও কারা কিভাবে বিএনপির নেতা-কর্মীদের জড়ো করিয়েছে তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হচ্ছে। পুলিশ বলছে, বিএনপির একটি অদৃশ্য মহলের এটা র্ছিল কর্ম কৌশলের পূর্বপরিকল্পিত পরিকল্পনা, যা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখে ধুলো দিতে সক্ষম হয়। বড় ধরনের নাশকতা ও নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করার আগেই বিএনপির এই পূর্বপরিকল্পিত পরিকল্পনাটি আঁচ করতে পারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচালনা কর্তৃপক্ষ। আর এ কারণেই বেগম খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে জমায়েত হওয়া নেতা-কর্মীদের আদালত পর্যন্ত যেতে দিয়ে বড় ধরনের নাশকতা-নৈরাজ্য এড়ানোর কৌশল নেয় পুলিশ। পুলিশের বিচক্ষণতা ও বুদ্ধির খেলার কাছে হার মানে বিএনপির নেতা-কর্মীদের পরিচালনাকারী অদৃশ্য মহলটি। এই তথ্য জানিয়েছেন জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলার রায় ঘোষণার দিনটি মনিটর করেছেন এমন গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা। বেগম জিয়ার গাড়ি বহরে বিএনপির নেতা-কর্মীদের জড়ো হওয়া এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ধৈর্য্য, সহ্য, বুদ্ধি, বিচক্ষণতার সঙ্গে কিভাবে বড় ধরনের নাশকতা-নৈরাজ্য এড়িয়েছেন তা গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাদের কাছে নেপথ্য কাহিনী জানা গেছে। গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তা জানান, ৮ ফেব্রুয়ারি ‘১৮ তারিখে বকশীবাজারের বিশেষ আদালতে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলার রায় ঘোষণার সময়ে বেগম খালেদা জিয়ার উপস্থিত থাকার জন্য গুলশানের বাসভবন থেকে রওনা হওয়ার কথা ছিল সকাল প্রায় দশটায়। নির্ধারিত সময় অনুযায়ী সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়া গুলশানের বাসভবন থেকে বের হতে বিলম্ব করছেন। কালক্ষেপণ করছেন পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী। নির্ধারিত সময়ের প্রায় ঘণ্টাখানেক পর বেলা এগারোটার দিকে বাসভবন থেকে রওনা দেন বেগম খালেদা জিয়া। বেগম খালেদা জিয়া বাসভবন থেকে বের হওয়ার পর গাড়ির গতিটি কমিয়ে দেয় গাড়ির চালক। যাতে হাতিরঝিল অতিক্রম করে মগবাজারগামী রাস্তায় বিএনপির নেতা-কর্মীরা জড়ো হতে পারে। যেই মাত্র বেগম খালেদা জিয়াকে বহনকারী গাড়িটি হাতিরঝিল পার হয়ে মগবাজারগামী রাস্তায় এসে পৌঁছায় তখন পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী আগে থেকে জমায়েত হওয়া বিএনপির নেতা-কর্মীরা তার গাড়িবহর ঘিরে ফেলে। গাড়িবহরে থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের চেয়ে সংখ্যায় অনেক বেশি বিএনপির নেতা-কর্মীরা গাড়িবহরে মিশে গিয়ে শ্লোগান দিয়ে এগুতে থাকে। আশঙ্কা দেখা দেয়, বড় ধরনের নাশকতা ও নৈরাজ্যের। এমনকি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদেরও আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা স্পষ্ট হয়। এই খবরটি দেয়া হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার মোঃ আছাদুজ্জামান মিয়া তখন রাজধানী ঢাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষায় গোটা ঘটনা মনিটর করছেন। ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার নেতৃত্বে পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তারা তাৎক্ষনিক বসে সিদ্ধান্ত নেন যে, বেগম খালেদা জিয়াকে নিরাপদে, নিষকণ্টকে আদালতে পৌঁছে দিতে হবে। বেগম খালেদা জিয়ার গাড়িবহর যখন মগবাজার ফ্লাইওভারের কাছে আসে তখন তাদের গাড়িবহরটি ফ্লাইওভার দিয়ে যেতে বলা হয়। কিন্তু বেগম জিয়ার গাড়ির চালক ফ্লাইওভার দিয়ে গাড়িটি না নিয়ে নীচ দিয়ে খুবই শ্লথ গতিতে চালিয়ে যান। উদ্দেশ্য, বিএনপির নেতা-কর্মীরা জড়ো হয়ে জমায়েতের সংখ্যা বাড়িয়ে কিছু একটা করুক। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাৎক্ষনিক সিদ্ধান্ত নেন যে, বেগম জিয়ার গাড়িবহরে জমায়েত হওয়া বিএনপির নেতা-কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করতে গেলে বড় ধরনের অপৃতিকর ঘটনা ঘটবে এবং দেশী-বিদেশী সংবাদ মাধ্যমে ফলাও করে প্রচার হবে। এমনকি এই ঘটনার সূত্র ধরে বিএনপি আরও বড় ধরনের কর্মসূচী ঘোষণার সুযোগ পাবে। এসব বিষয় মাথায় নিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ সদর দফতর থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যাতে কোন ধরনের হঠকারিতায় পা না দিয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের তাদের নেত্রী বেগম জিয়ার গাড়ির বহরের সঙ্গে যেতে দেয়। বেগম জিয়াকে বহনকারী গাড়িটি এত আস্তে আস্তে চালানো হয় যাতে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীরা বেশিসংখ্যক জড়ো হতে পারেন। মগবাজার অতিক্রম করে রাস্তায় বিচ্ছিন্নভাবে কিছু ঘটনা ঘটলেও বড় ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে দেয়নি বেগম জিয়ার গাড়ি বহরের কর্তব্যরত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা বলেন, বেগম খালেদা জিয়া গুলশানের বাসভবন থেকে রওনা হয়ে মগবাজারে আসার পর তার গাড়িবহরের সঙ্গে বিএনপি নেতা-কর্মীদের বকশীবাজার আদালতের কাছাকাছি আসার পর কাটাতারের ব্যারিকেড দিয়ে বেশিসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়া হয়। বেগম জিয়ার গাড়িবহরের সঙ্গে আসা বিএনপির নেতা-কর্মীরা বকশীবাজার আদালতের কাছে জড়ো হয়ে বড় ধরনের নাশকতা-নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির যাতে সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য টিয়ারগ্যাস সেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে দিয়ে বড় ধরনের অপৃতিকর ও অবাঞ্ছিত ঘটনা থেকে রক্ষা করা হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্তৃপক্ষের বুদ্ধি ও বিচক্ষণতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবেলা করায় মাঠের খেলায় হেরে যান বিএনপির নেতা-কর্মীদের পরিচালনাকারী অদৃশ্য মহলটি। গোটা পরিস্থিতি মোকাবেলায় গাড়িবহরে কর্তব্যরত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদস্যরা ধৈর্য্য ও সহ্যের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবেলা করেন। ঢাকা মহানগর পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, ঢাকা মহানগর পুলিশ আগের দিন ৭ ফেব্রুয়ারি রাজধানী ঢাকায় সভা, সমাবেশ, মিছিল নিষিদ্ধ করার পরও ৮ ফেব্রুয়ারি রায়ের দিন রাজধানীর হাতিরঝিল পার হওয়ার পর থেকে মগবাজারগামী রাস্তায় এত লোক কোথা থেকে কে বা কারা এনে বেগম খালেদা জিয়ার গাড়িরবহরে জমায়েত করার মাধ্যমে মিছিল করে শ্লোগান দিয়েছে তা চিহ্নিত করা হচ্ছে। সিসি ক্যামেরা, ভিডিও ফুটেজ দেখে কারা পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী বড় ধরনের নাশকতা ও নৈরাজ্যের চেষ্টায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের জড়ো করেছিল এবং অদৃশ্য মহলটি কে বা কারা তা শনাক্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে পুলিশ কর্মকর্তার দাবি।
×