ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের জীর্ণদশা ॥ রাজনীতির অবস্থাও বেহাল

প্রকাশিত: ০৭:৪৩, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের জীর্ণদশা ॥ রাজনীতির অবস্থাও বেহাল

ব্রিটেনের পার্লামেন্ট ভবনের অবস্থা খুবই নাজুক। যেকোন মুহূর্তে ভেঙ্গে পড়তে পারে এই জরাজীর্ণ ভবনটি। যত দ্রুত সম্ভব ভবনটির মেরামত করা প্রয়োজন। প্রাচীন পার্লামেন্ট ভবনটি পোড়ামাটির ফলক দিয়ে তৈরি ছিল। পরে এতে কিছু আধুনিকার সংযোজন করা হয়। প্রতি বছর পার্লামেন্ট ভবন মেরামত ব্যয় আট কোটি ৫০ লাখ পাউন্ড করে বাড়ছে। প্রাচীন ওয়েস্টমিনস্টার প্যালেসটি আধুনিক আইনসভা হিসেবে নকশা করে তৈরি করা হয়নি। স্টেটসম্যান। ১৮৩৪ সালের ১৬ অক্টোবর ওয়েস্টমিনস্টার ভবনের বেশিরভাগ অংশই পুড়ে যায়। পরে ভবনটি পুননির্মাণ করা হয়। পার্লামেন্ট ভবন আট একর জমির ওপর তৈরি। এটি পুরোপুরি তৈরি হয় ১৮৭০সালে। ভবনে এক হাজার একশ’ ৮০টি ঘর, চার হাজার জানালা, একশ’ ২৬টি সিঁড়ি, তিনটি ভবনজুড়ে, দুই মাইল লম্বা বারান্দা ও নদীর তীরে অবস্থিত। ভবনটি তৈরিতে ৩০ বছর সময় লেগেছে। ভবনটি তৈরির সময় অনেক শ্রমিকও মারা গেছেন। তবে তাদের সংখ্যা লিপিবদ্ধ রাখা হয়নি। ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ভবন পুরোপুরি মেরামত করতে তিন শ’ ৫০ থেকে তিন শ’ ৯০ কোটি পাউন্ড দরকার। প্রতি বছর এতে আরও ব্যয় যোগ হচ্ছে আট কোটি ৫০ লাখ পাউন্ড করে। ওয়েস্টমিনস্টার প্যালেসটি একটি জলাভূমির পাশে সোজাসুজি করে ও আক্ষরিকভাবে তৈরি হয়েছে। ২০১২ সালে তৈরি এক প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়েছে, ভবনটির সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দিকগুলো পুনঃনির্মাণ করতে শত শত কোটি পাউন্ড ব্যয় হবে। তবে প্রয়োজনীয় মেরামতগুলো জোড়াতালি দিয়ে চলছে। ঐতিহ্যবাহী ভবন বলে পার্লামেন্ট সদস্যরা অন্যস্থানে সরিয়ে নিতে বা অস্থায়ীভাবে কোন ভবনে যেতে রাজি নয়। কেননা পৌরাণিক মত রয়েছে, যদি পাখিরা চলে যায় তবে তাহলে রাজার পতন হবে। এটি বিশ্বাস করে এমপিরা। তাদের মতে, একবার এমপিরা পার্লামেন্ট ছেড়ে গেলে তারা আর কখনও ফিরে আসবেন না। ব্রিটেনের পার্লামেন্ট ভবনের মত রাজনীতিতেও অবক্ষয় দেখা দিয়েছে। পার্লামেন্টের ক্ষমতাসীন রক্ষণশীল ও লেবার উভয় দলের মধ্যেই রাজনৈতিক দূরদর্শিতা, প্রজ্ঞা ও জ্ঞানের অভাব দেখা দিয়েছে। গণতন্ত্রের মূল সূতিকাগার হওয়া সত্ত্বেও রাজনৈতিক দলের মধ্যে সহিষ্ণুতার ঘাটতি রয়েছে। একে অপরের পরিপূরক ও প্রতিদ্বন্দ্বী না হয়ে;বরং তারা একে অপরের শত্রুতে পরিণত হয়েছে। দলের মধ্যে ভাঙ্গন, শিষ্টাচার, প্রতিযোগিতার হার কমে গেছে। নিজেরা নিজেদের আর্থিক সামর্থ্য অর্জনের দিকে দৃষ্টি দিচ্ছেন। ক্ষমতাসীনরা আরও বেশি করে ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে চাইছে। আবার সংখ্যালঘু সরকার হওয়ায় প্রতিটি সিদ্ধান্তে জোটের অন্যান্য শরিকদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করছে। সরকারের দুর্বলতা দিন দিন প্রকাশ পাচ্ছে। যাতে জনগণ ত্যক্ত, বিরক্ত হয়ে উঠছে। জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলনের ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রতা দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দেখা দিয়েছে ব্রেক্সিট ইস্যু। এই ইস্যুতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে টানাপোড়েন চলছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন কোন ছাড় দিতে প্রস্তুত নয়। তারা ব্রিটেনকে বিভিন্ন শর্ত দিয়েছে। যা মেনে চলা ব্রিটেনের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি ব্রিটেনের অর্থনৈতিক দুরবস্থার শঙ্কা প্রকাশ পাচ্ছে। ব্রেক্সিট কার্যকর হলে ব্রিটেন থেকে অনেক ইউরোপীয় নাগরিক দেশটি ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হবেন। তখন ব্রিটিশদের বাজারব্যবস্থা খুবই সংকীর্ণ হয়ে পড়বে। এরই প্রেক্ষিতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বিদেশে ব্রিটেনের বাজার সৃষ্টির প্রয়াস চালাচ্ছেন। ব্রেক্সিটউত্তর ব্রিটেনের অবস্থা খুবই সঙিন হয়ে পড়বে। তখন ব্রিটেনের প্রয়োজনীয় সেবাখাতে নতুন নতুন চাকরি সৃষ্টি হলেও দক্ষ কর্মী পাওয়া খুবই কঠিন হয়ে যাবে।
×