আফগানযুদ্ধে ব্রিটেনের জড়ানোর কোন প্রয়োজন ছিল না, সদ্য পরিচালিত এক জনমত জরিপে এটি দেখা গেছে। সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বুধবার ঘোষণা করেছেন যে, আগামী ১৩ মার্চ সেন্ট পল-ক্যাথিড্রালে আফগানিস্তানে সম্মুখ যুদ্ধ থেকে ব্রিটিশ সৈন্য প্রত্যাহারের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে স্মরণ সভা হবে। তের বছর ধরে চলমান আফগান যুদ্ধ কি আফগানদের জন্য কোন সুখবর বয়ে এনেছে না ব্রিটেনের নিরাপত্তা ব্যবস্থার কোন উন্নতি হয়েছেÑ এ নিয়ে এক জনমত জরিপে অধিকাংশ ব্রিটিশ নাগরিকের ধারণা যে, এ দুটির লক্ষ্যের কোনটিই বাস্তবায়িত হয়নি। টেলিগ্রাফ।
সম্প্রতি লন্ডন কিংস কলেজের ওয়ার স্টাডিজ বিভাগের পক্ষে ইপসোস মোরি নামের এক জরিপ সংস্থা মধ্য জানুয়ারির এক টেলিফোন জরিপ পরিচালনা করে। সংস্থাটির পরিচালিত জরিপে মাত্র ৪২ শতাংশ মানুষ মনে করে যে, আফগানিস্তানে ব্রিটিশ বাহিনীর অভিযান যুক্তিযুক্ত ছিল, পক্ষান্তরে ৪৯ ভাগ মানুষের অভিমত যে এটি ছিল একটি ব্যর্থ প্রয়াস। ৫শ’ মানুষের ওপর পরিচালিত এই জরিপে যখন অপর একটি প্রশ্ন উত্থাপন করা হয়, ব্রিটিশ স্থাপনা বা স্বার্থের ওপর পরিচালিত বিদ্রোহী হামলা কী আফগানিস্তানে অভিযান চালানোর পর কোনভাবে কমে গেছে বা প্রভাব ফেলেছে? এর জবাবে অনেকটা আগের মতো ৪১ শতাংশ পক্ষে এবং ৪৯ শতাংশ নেতিবাচক জবাব দেয়। আফগান যুদ্ধে এ পর্যন্ত ৪৫৩ সৈন্য এবং ২৭ বিলিয়ন পাউন্ডের মতো খরচ হয়েছে। এই বিপুল পরিমাণ অর্থ ও রক্ত ক্ষয়ের আদৌ কোন প্রভাব ব্রিটিশ নিরাপত্তা ব্যবস্থার ওপর পড়েছে কিনা এ নিয়ে ৫১৩ জনের ওপর পরিচালিত জরিপে দেখা যায় ৩৬ জনের অভিমত যে, এতে আফগান নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে। অপরদিকে ৫৮ ভাগ মানুষ তার বিপরীত মনোভাব পোষণ করে।
অনুরূপভাবে, ৩৯ শতাংশ মানুষের ধারণা বিদ্রোহ দমনে এই অর্থ ও জনবল নিয়োজিত করার ফলে সন্ত্রাসীরা ব্রিটিশদের ওপর হামলা পরিচালনার ক্ষেত্রে আফগান ভূখ- ব্যবহার করতে পারবে না এবং ব্রিটেন এখন আগের চেয়ে অনেক নিরাপদ। অপরদিকে ৫৫ শতাংশের ধারণা যে, পরিস্থিতি আগের মতোই আছেÑ এর কোন পরিবর্তন হয়নি।
কোন কোন বিশ্লেষকের মতে, আফগানিস্তানের স্থিতিশীলতা বজায় রয়েছে ঠিকই তবে তার নিরাপত্তা ব্যবস্থা খুবই ভঙ্গুর। ২০১৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আশরাফ গনি ও আব্দুল্লাহ আব্দুল্লাহর মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হওয়ার প্রেক্ষিতে শেষ পর্যন্ত আপোসমূলক ব্যবস্থার ফলশ্রুতিতে আশরাফ গনি প্রেসিডেন্ট এবং দ্বিতীয় জন আফগানিস্তানের প্রধান নির্বাহী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এটিকে একটি জোড়াতালি দেয়া রাজনৈতিক সম্পর্ক বলা চলে যাতে কোন আন্তরিকতার লেশমাত্র নেই। যার দরুন চার মাসের অচলাবস্থার পর এমন একটি পার্লামেন্ট গঠিত হয় যারা প্রস্তাবিত কতিপয় মন্ত্রীকে মন্ত্রী হিসেবে মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানায়। এতে এই সরকারের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের প্রকট রূপ দৃশ্যমান হয়।
এছাড়া, পাশ্চাত্য দেশগুলোর সহায়তায় আফগানিস্তান সেনা সদস্য ও জাতীয় পুলিশ বাহিনীর সমন্বয়ে একটি বিশাল নিরাপত্তা বাহিনী গড়ে তোলে। যার সংখ্যা তিন লাখ ৪৫ হাজারের মতো। তবে আফগানিস্তানের নিরাপত্তা বিধানে এই বাহিনীর কর্মদক্ষতাকে অনেকে সন্দেহের চোখে দেখেন। কারণ দেশের উত্তর ও পূর্বাঞ্চলে পাশ্চাত্য বাহিনী অপসারণের পর সেখানে তালেবান বাহিনীর ক্রমবর্ধমান তৎপরতা মোকাবেলায় আফগান বাহিনী খুব একটা সাফল্য দেখাতে পারেনি। গত গ্রীষ্মে হেলমান্দের উত্তরাঞ্চলে তালেবান বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে আফগান বাহিনী রীতিমত অসহায় অবস্থায় পড়েছিল। তালেবান জঙ্গী গোষ্ঠী সেদেশের দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলের অধিকাংশ গ্রামীণ জনপদে নিজেদের আধিপত্য বজায় রেখেছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।