ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো

প্রকাশিত: ০৬:০১, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশ বিভাগের পর ১৯৪৮ সালের ১৯ মার্চ মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ প্রথম ঢাকা (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) সফরে আসেন। ২১ মার্চ তিনি রেসকোর্স ময়দানে (সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) বক্তৃতা করেন। বক্তৃতায় তিনি বাংলাকে পূর্ব বাংলার সরকারী ভাষা করার বিষয়ে এ অঞ্চলের লোকের দাবি পাশ কাটিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা উর্দু বলে ঘোষণা দেন। বলেন, আমি সুস্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই যে, উর্দুই পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হইবে, অন্য কোন ভাষা নয়। যে কেহ অন্য পথে চালিত হইবে সেই পাকিস্তানের শত্রু। একটি রাষ্ট্রভাষা ব্যতীত কোন জাতির সংহতি থাকিতে পারে না এবং কাজ করিতে পারে না। ওই বছরের ২৪ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে সমাবর্তন অনুষ্ঠানে তিনি ভাষার প্রশ্নে একই বক্তব্য রাখেন। কিন্তু জিন্নাহর এই বক্তব্যে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বাঙালীরা নো নো বলে চিৎকার করে ওঠেন। জিন্নার ওই সভায়ও তমদ্দুন মজলিশের পক্ষ থেকেও বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে সম্মিলিত লিফলেট বিতরণ করা হয়। জিন্নার এই বক্তব্যের পর মসজিল কর্মী ও ছাত্র জনতা মিলে প্রতিবাদ শুরু করে। কার্জন হলের বক্তৃতার সময় সঙ্গে সঙ্গে আব্দুল মতিন ও একেএম আহসানসহ অনেকেই উঠে দাঁড়িয়ে নো নো বলে চিৎকার শুরু করেন। উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা ঘোষণা দেয়ার বক্তব্যের প্রতিবাদে এটাই ছিল প্রথম প্রতিক্রিয়া। তার এই বক্তব্যের প্রতিবাদে প্রথম পত্রিকায় বিবৃতি দিয়ে প্রতিবাদ করেন তমদ্দুন মজলিশের পক্ষ থেকে অধ্যাপক আবুল কাসেম ও অধ্যাপক শাহেদ আলী। ২২ মার্চ তারা এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেন, ভাষা সমস্যা সম্পর্কে প্রাদেশিক গবার্মেন্ট আমাদের শ্রেষ্ঠ নেতা কায়দে আজমকে ভুল সংবাদ দিয়েছেন দেখে আমরা অত্যন্ত মর্মাহত হয়েছি। আমাদের বিশ্বাস, আমরা যদি তার সহিত এ বিষয় সম্বন্ধে আলোচনা করার সুযোগ পেতাম, তাহলে আমরা তাকে স্পষ্ট বুঝিয়ে দিতে পারতাম যে, মুসলিম লীগের পাকিস্তান নির্মাণকারী সদস্যগণই এই আন্দোলন সম্পর্কে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছেন। আমাদের উদ্দেশ্য পাকিস্তানকে সুদৃঢ় করা ও শক্তিশালী করা। পাকিস্তানকে দুর্বল করার লক্ষ্য নহে। সত্যের জয় নিশ্চয় হবে এবং অভিসন্ধিকসহকারে যে ভ্রম ধারণার সৃষ্টি করা হয়েছে তা দীর্ঘকাল সূর্যের আলোক চেপে রাখতে পারবে না। এদিন জিন্নাহ বক্তব্যে প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দেন একে ফজলুল হকও। তিনি তার বিবৃতিতে বলেন, কায়দে আজম উর্দুকে পাকিস্তানের সরকারী ভাষা বলিয়া ঘোষণা করিয়াছেন। ইহা প্রতিহিংসামূলক, স্বৈরাচারী। সরকারী ভাষা কি হইবে তাহা ঘোষণা করা গবর্নর-জেনারেলের কাজ নহে। জনসাধারণ তাহা স্থির করিবে।
×