ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিএনপি কর্মীদের সহিংসতার চেষ্টা প্রতিহত

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

বিএনপি কর্মীদের সহিংসতার চেষ্টা প্রতিহত

জনকণ্ঠ রিপোর্ট ॥ খালেদা জিয়ার রায়কে কেন্দ্র করে সারাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ছিল অনেকটাই স্বাভাবিক। বিএনপি নেতাকর্মীরা বিক্ষিপ্তভাবে দেশের বিভিন্ন জায়গায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর চেষ্টা করেছে। তারই প্রেক্ষিতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এসব সংঘর্ষে কয়েকজন সামান্য আহত হয়েছেন। কোন কোন জায়গায় পুলিশকে টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছুড়তে হয়েছে। বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের ঘটনায় ঢাকা থেকে বিএনপি চেয়ারপার্সনের বিশেষ সহকারী শিমুল বিশ্বাসসহ সারাদেশ থেকে দেড় শতাধিক নেতাকর্মী আটক হয়েছে। বৃহস্পতিবার মামলার রায় উপলক্ষে গত এক সপ্তাহ ধরেই সারাদেশের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই বকশীবাজারের বিশেষ আদালত ঘিরে গড়ে তোলা হয় কঠোর নিরাপত্তা বলয়। আদালতের চারদিকে প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। কাঁটাতারের বেরিকেড ফেলে বন্ধ করে দেয়া হয় রাস্তা। নগরীর বিভিন্ন সড়কের মোড়ে মোড়ে সতর্ক অবস্থান নেয় পুলিশ। চালানো হয় তল্লাশি। রাস্তায় যানবাহনের চলাচল ছিল কিছুটা কম। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়, গুলশানসহ বিভিন্ন জায়গায় অতিরিক্ত পুলিশ ও র‌্যাব মোতায়েন করা হয়। ডিএমপি কমিশনার মোঃ আছাদুজ্জামান মিয়া সরেজমিনে ঢাকার নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন। যে কোন ধরনের নাশকতামূলক কর্মকা- ঠেকাতে পুলিশ প্রস্তুত বলে তিনি জানান। বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে এগারোটার পর গুলশান থেকে আদালতের উদ্দেশে রওনা হন খালেদা জিয়া। তার সঙ্গে বেশকিছু নেতাকর্মীও ছিলেন। খালেদা জিয়ার গাড়িবহরটি গুলশান থেকে হাতিরঝিল মোড়ে পৌঁছলে আচমকা কয়েকশ’ নেতাকর্মী পুলিশের বাধা ভেঙ্গে গাড়িবহরের কাছে চলে যায়। নেতাকর্মীরা রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে। এ সময় পুলিশ তাদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। পুলিশের সঙ্গে এ নিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের দফায় দফায় ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। মগবাজার মোড়ে পৌঁছার পর খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে আরও কিছু নেতাকর্মী বিভিন্ন গলি থেকে বের হয়ে যোগ দেন। এ সময় পুলিশ রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়। এখানেও পুলিশের সঙ্গে নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। নেতাকর্মীরা এ সময় একটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয়। একই অবস্থা হয় কাকরাইল মোড়, মৎস্য ভবন ও হাইকোর্টের সামনে। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি নেতাকর্মীরা আগ থেকেই এফডিসি, কাওরানবাজার, মগবাজারের বিভিন্ন গলি, কয়েক দফায় বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের ঘটনা ঘটার পর খালেদা জিয়া আদালতে হাজির হন। এর আগে সকাল দশটার দিকে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা জোর করে আদালতে প্রবেশ করতে গেলে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয়। আদালত প্রাঙ্গণ থেকে খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী শিমুল বিশ্বাসকে আটক করে পুলিশ। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আমাদের নিজস্ব সংবাদদাতারা এ সংক্রান্ত আরও খবর জানান। চট্টগ্রাম ॥ রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে সকাল থেকে নানা উদ্বেগ উৎকণ্ঠা বিরাজ করতে থাকলেও রাজপথ ছিল আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনগুলোর দখলে। বিএনপি নাসিমন ভবন কার্যালয় প্রাঙ্গণে সমাবেশ করতে চাইলে পুলিশের সঙ্গে মৃদু সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনাকে নিয়ে নগর বিএনপির সভাপতি ডাঃ শাহাদাত হোসেনসহ ৫০ জনকে আটক করা হয়েছে। এছাড়া নগরীর বাটালি রোড এলাকায় বিএনপির কিছু কর্মী বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাইলে পুলিশী ধাওয়া খেয়ে তারা পালিয়ে যায়। দুপুর দেড়টার দিকে নাসিমন ভবনের ফটকের সামনে বিএনপি নেতাকর্মীরা অবস্থান নেয়। এ সময় মহিলা দলের এক নেত্রীর সঙ্গে পুলিশের ধাক্কাধাক্কি হয়। তখন পুলিশ তাদের নিবৃত্ত করতে চাইলে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া শুরু হয়। একপর্যায়ে বিএনপির কর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়ে। পুলিশ তাদের ধাওয়া দেয়। নাসিমন ভবনের ফটকের সামনে থেকে নেতাদের কার্যালয় অভ্যন্তরে নিয়ে যায় পুলিশ। এরপর সেখান থেকে ডাঃ শাহাদাত হোসেনসহ ১০ জনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। আটককৃতদের মধ্যে মহিলা দল নেত্রী আঁখি সুলতানাও রয়েছে। জামালপুর ॥ রায় প্রত্যাখ্যান করে জামালপুর পৌর এলাকার রশিদপুরে বিএনপি নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করে। তারা দুটি সিএনজি অটোরিক্সা ভাংচুর করে। হবিগঞ্জ ॥ জেলার শায়েস্তাগঞ্জে বিএনপি নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল করে। মিছিল থেকে হামলার চেষ্টা করলে নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশ, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় আহত হয়েছে উভয় দলের অন্তত ১৫ নেতাকর্মী। কিশোরগঞ্জ ॥ জেলায় বিভিন্ন জায়গায় বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। শহরের পুরানথানা এলাকায় একটি পিকআপ ভ্যান ভাংচুর ও একরামপুরে একটি অটোতে আগুন দিয়েছে নেতাকর্র্মীরা। এলাকায় বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। সিলেট ॥ নগরীর বন্দরবাজারের কোর্ট পয়েন্টে ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের মধ্যে সংঘর্ষে এক পুলিশ সদস্যসহ ৪ জন আহত হয়েছেন। ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের সংঘর্ষ থামাতে কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি করেছে পুলিশ। খুলনা ॥ জেলার বিএনপি কার্যালয় ছিল পুলিশ বেষ্টিত। দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে নগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি সাহারুজ্জামান মোতুর্জাসহ ১৬ জনকে আটক করে পুলিশ। শেরপুর ॥ বিএনপি নেতাকর্মীরা খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে একটি ট্রাকে আগুন দিয়েছে। এছাড়া নওগাঁয় বিক্ষোভকালে ২৭ বিএনপি নেতাকর্মী, রংপুরে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও পুলিশের তরফ থেকে সাউন্ড গ্রেনেড (বিকট শব্দ করে মানুষকে ভয়া দেখানোর জন্য ব্যবহৃত হয়-প্রাণঘাতী নয়) এবং টিয়ারশেল নিক্ষেপ, মাগুরা থেকে ১৪ নেতাকর্মী, ফরিদপুরের সদরপুরের দুই বিএনপি নেতা, নীলফামারীতে বিএনপির ঝটিকা মিছিল থেকে ৩৪ জন, নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ থেকে দুই নেতাকর্মী, লক্ষ্মীপুরে বিএনপির প্রতিবাদ মিছিলে দুর্বৃত্তদের হামলায় ১৫ জন আহত, দিনাজপুর থেকে ২১, ঝিনাইদহ থেকে ৮০, লক্ষ্মীপুর থেকে ৩৪ জন গ্রেফতার ও বিজিবি মোতায়েন, বরগুনা থেকে ৮ নেতাকর্মী, নাটোর উপজেলা বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা মহিলা দলের সভাপতিসহ ৫ জন, নড়াইলে বিএনপি-জামায়াতের ৬ নেতাকর্মীসহ ৩৬ জন ও গোপালগঞ্জে বিএনপি-জামায়াতের ৫ নেতাকর্মী আটক, রায়ের প্রতিবাদে সাতক্ষীরায় একটি সড়কের পাশে রাখা পরিত্যক্ত একটি বাসে ও ময়মনসিংহের নান্দাইলে একটি বাসে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটেছে।
×