ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রথমদিনেই চাপে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

প্রথমদিনেই চাপে বাংলাদেশ

মিথুন আশরাফ ॥ বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মধ্যকার দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট শুরু হয়েছে বৃহস্পতিবার। মাত্র টেস্টের প্রথমদিন গেল। এই এক দিনেই চাপে পড়ে গেছে বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে শ্রীলঙ্কার করা ২২২ রানের জবাব দিতে নেমে দিনের শেষ সেশনেই ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। ৫৬ রান করে প্রথমদিন শেষ করে। এখনও শ্রীলঙ্কা থেকে ১৬৬ রানে পিছিয়ে আছে। প্রথম ইনিংসে হাতে আছে ৬ উইকেট। গুরুত্বপূর্ণ চার ব্যাটসম্যানের মধ্যে তামিম, ইমরুল, মুমিনুল, মুশফিক আউট হয়ে গেছেন। তাতেই ‘ব্যাকফুটে’ আছে বাংলাদেশ। চাপেও পড়ে গেছে। এ অবস্থা থেকে এখন ভাল কিছু বের করে নেয়ার পথ একটাই, প্রথম ইনিংসে বাকি ৬ ব্যাটসম্যানকে মিলে বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে ভাল রান জমা করতে হবে। আজ লিটন কুমার দাস (২৪*) ও মেহেদী হাসান মিরাজ (৫*) মিলে ব্যাট করতে নামবেন। এরপর স্প্যাশালিস্ট ব্যাটসম্যান হিসেবে থাকবেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও সাব্বির রহমান রুম্মন। নিচের সাড়িতে আব্দুর রাজ্জাক, তাইজুল ইসলাম ও মুস্তাফিজুর রহমানও থাকছেন। কিন্তু যা করার লিটন, মিরাজ, মাহমুদুল্লাহ ও সাব্বিরকেই করতে হবে। কারণ, রাজ্জাক, তাইজুল, মুস্তাফিজরা হচ্ছেন স্প্যাশালিস্ট বোলার। যদি ব্যাটসম্যানরাই বিশেষ কিছু করে দেখাতে না পারেন, তাহলে বোলাররা আর দলকে কতদূর নিয়ে যেতে পারবেন। তাই ব্যাটসম্যানদের হাতেই এখন চাপ দূর করার ভার রয়েছে। এজন্য চট্টগ্রাম টেস্ট হতে পারে প্রেরণা। চট্টগ্রাম টেস্টে চতুর্থদিনের শেষদিকে যখন তামিম, ইমরুল, মুশফিক আউট হয়ে যান, তখন হারের শঙ্কা জাগে। সেখান থেকে মুমিনুল-লিটন মিলে ম্যাচ বাঁচান। ম্যাচ থেকে ড্র ফল বের করে আনেন। মিরপুর টেস্টেও যখন বাংলাদেশ বিপদে পড়ে আছে, এমন মুহূর্তে লিটন, মিরাজ, মাহমুদুল্লাহ বা সাব্বিরকেই হাল ধরতে হবে। পারবেন তারা তা করতে? তা সম্ভব? সেই সম্ভাবনার কথা চার বছর পর আবার টেস্টে ফেরা স্পিনার আব্দুর রাজ্জাকের কণ্ঠেই শোনা গেছে। দিন শেষে রাজ্জাক বলেছেন, ভাল অবস্থায় যাওয়া সম্ভব। টেস্টতো এমনই। এক সেশন খারাপ যায়। আরেক সেশন ভাল যায়। একটা দল এক সেশনে এগিয়ে যায়। আরেক সেশনে পেছনে পড়ে যায়। দ্বিতীয় দিনে শুরুটা ভাল করা গেলে সম্ভব। সেই সম্ভাবনার ছোঁয়া যদিও বাংলাদেশ ইনিংসের শুরুতে মিলেনি। ১২ রান করতেই তিন উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। তামিমের আউটের পর চট্টগ্রাম টেস্টে দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরি করা মুমিনুল অহেতুক রান আউট হয়েছেন। এরপর মুশফিক যেন ব্যাটিংই করতে জানেন না! লাইনের বল ছেড়ে তার বোল্ড হওয়াটা যেন আত্মহত্যা! দিনের দুই ওভার বাকি থাকতে যখন ইমরুল ‘রিভিউ’ নিয়েও এলবিডব্লিউয়ের হাত থেকে বাঁচতে পারেননি, তখনই বাংলাদেশ চাপে পড়ে যায়। যেখানে বাংলাদেশ স্পিনাররা ঝলক দেখিয়েছেন, সেখানে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের ভুলে পেসার লাকমাল ২ উইকেট শিকার করে ফেলেছেন। দিনটিতেই তাই শ্রীলঙ্কাই এগিয়ে গেছে। কিন্তু যেই এগিয়ে যাওয়া এখন পেছনের দিকে ঠেলে দেয়ার দায়িত্ব লিটন, মিরাজ, মাহমুদুল্লাহ, সাব্বিরদের। যদি প্রথম সেশনটা এ চার ব্যাটসম্যান কাটিয়ে দিতে পারেন। বড় ইনিংস খেলতে পারেন, তাহলে চাপ এড়ানো যাবে। উল্টো শ্রীলঙ্কাকে চাপে ফেলা যাবে। না হলে চাপে পড়ে থাকবে বাংলাদেশই। শ্রীলঙ্কার ব্যাটিং কোচ থিলান সামারাবিরা অবশ্য বলার চেষ্টা করেছেন, ম্যাচ এখনও সমান-সমান অবস্থানে আছে। তবে দ্বিতীয় দিনটি দুই দলের জন্যই যে গুরুত্বপূর্ণ তাও বুঝিয়েছেন। সকালের সেশনই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। যদি এই সেশনে বাংলাদেশের ইনিংস ধসে দেয়া যায়, তাহলে শ্রীলঙ্কা পুরোপুরি ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ফেলবে। আর যদি বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা নৈপুণ্য দেখাতে পারেন, তাহলে শ্রীলঙ্কাও বিপাকে পড়ে যেতে পারে। আর তাই সামারাবিরার কাছে আজ সকালের সেশনটিই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। এই সেশনের আগ পর্যন্ত তার কাছে দুই দলই সমান অবস্থানে আছে। শ্রীলঙ্কাও প্রথম ইনিংসের শুরুতে বিপদে পড়েছিল। বল এমনই টার্ন করেছে, চার বছর পর টেস্টে ফিরে স্পিনার আব্দুর রাজ্জাকের যেন রাজকীয় প্রত্যাবর্তনই ঘটেছে। ৯৬ রানে যে শ্রীলঙ্কার ৪ উইকেট পড়ে, তিন উইকেটই শিকার করেন রাজ্জাক। যে কুশল মেন্ডিস (৬৮) দলকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন, তাকেও ফেরান রাজ্জাক। প্রথমবারের মতো টেস্ট ক্যারিয়ারে এক ইনিংসে ৪ উইকেট শিকার করেন রাজ্জাক। ১১০ রানের সময় ডিকভেলাকে যখন তাইজুল আউট করে দেন, শ্রীলঙ্কার ৬ উইকেটের পতন ঘটে যায়। তখন মনে হয়, শ্রীলঙ্কা ২০০ রানও করতে পারবে না। কিন্তু সপ্তম উইকেটে সিলভা ও একবার ‘নতুন জীবন’ পাওয়া পেরেরা মিলে ৫২ রানের জুটি গড়েই দলের স্কোরবোর্ড ১৬২ রানে নিয়ে যান। এ মুহূর্তে পেরেরা আউট হওয়ার পর সিলভা ও আকিলা মিলে যে ৪৩ রানের জুটি গড়েন, সেখানে দল দুই শ’ রানের উপরে চলে যায়। এই দুই জুটিই শ্রীলঙ্কার স্কোরবোর্ডে রান জমা করে ফেলে। শেষপর্যন্ত ৪ উইকেট নেয়া তাইজুল ও ২ উইকেট নেয়া মুস্তাফিজের বোলিং তোপে ২২২ রান করতেই গুটিয়ে যায় শ্রীলঙ্কা। দুর্দান্ত বোলিং করেন বাংলাদেশ বোলাররা। স্পিন ট্র্যাকে নিজেদের মেলে ধরেন রাজ্জাক ও তাইজুল। তাতে শ্রীলঙ্কাকে অল্প রানেই থামানো যায়। কিন্তু টপঅর্ডারের চার ব্যাটসম্যান শেষ সেশনে এমনই ব্যর্থ হলেন, তাতে প্রথমদিনেই চাপে পড়ে গেছে বাংলাদেশ।
×