ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দুর্নীতি, হত্যা, অর্থ পাচার ও জঙ্গীবাদ চালিয়ে আর পার পাওয়া যাবে না

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

দুর্নীতি, হত্যা, অর্থ পাচার ও জঙ্গীবাদ চালিয়ে আর পার পাওয়া যাবে না

সংসদ রিপোর্টার ॥ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার ঘোষিত রায়কে ‘আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার এক অনন্য দৃষ্টান্ত’ উল্লেখ করে জাতীয় সংসদে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সিনিয়র নেতারা বলেছেন, অন্যায় করলে কেউ পার পায় না, আইনের উর্ধে কেউই নয়; আজ তা প্রমাণ হয়েছে। এই মামলার রায় দেশের জন্য একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। দুর্নীতি, হত্যা, অর্থ পাচার ও জঙ্গীবাদ চালিয়ে আর পার পাওয়া যাবে না, এটাও প্রমাণিত। শুধু দুর্নীতি মামলায় নয়, আন্দোলনের নামে শত শত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা, বিদেশে অর্থ পাচার এবং সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের অপরাধেও খালেদা জিয়ার বিচার করতে হবে। তারা (বিএনপি) যে অপরাধ করেছে, দেশের মানুষ আর তাদের গ্রহণ করবে না, বরং প্রত্যাখ্যানই করবে। এই অপরাধীদের রাজনীতি আর এদেশে চলবে না। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে পয়েন্ট অব অর্ডারে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ঘোষিত রায় নিয়ে এক অনির্ধারিত বিতর্কে অংশ নিয়ে তারা এসব কথা বলেন। সংসদে এই বিতর্কের সূত্রপাত করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী শেখ ফজলুল করিম সেলিম। আলোচনায় অংশ নেন জাসদের একাংশের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার, অপর অংশের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান, তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভা-ারী, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের সভাপতি এস এম আবুল কালাম আজাদ ও সংরক্ষিত নারী আসনের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য ফজিলাতুন নেসা বাপ্পি। অনির্ধারিত বিতর্কের সূত্রপাত করে শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, খালেদা জিয়ার এই মামলা ১০ বছর ধরে চলছে। মামলা যাতে না চলে সে জন্য বিভিন্নভাবে মামলাকে বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে। বার বার হাজিরার তারিখ পাল্টানো হয়েছে, ৩ জন বিচারক পাল্টানো হয়েছে। পুলিশের ওপর হামলা হয়েছে, আসামি ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। নাটোরে রেললাইনের ফিশ-প্ল্টে তুলে ফেলে নাশকতার চেষ্টা করা হয়েছিল। তিনি বলেন, মামলার রায় ঘোষণার তারিখ আগে থেকেই ঘোষণা করা হয়। মামলার বিচারক নির্ধারিত সকাল ১০টায় এসে বসে আছেন অথচ খালেদা জিয়া যাননি। তিনি সাড়ে ১১টার পরে আদালতে গেলেন। এতেই প্রমাণ হয় আদালতের প্রতি, আইনের প্রতি, বিচারকের প্রতি তার কোন সম্মান নেই। শেখ সেলিম বলেন, পুলিশ খালেদা জিয়াকে আদালতে আনার সময় যে পথে আনতে চেয়েছে তিনি সেই পথে যাননি। তিনি গেলেন মগবাজার দিয়ে। সেখানে আগে থেকে বিএনপির কর্মীরা ছিল, তারা এসে একটা সিন ক্রিয়েট করার চেষ্টা করেছে, পুলিশের সঙ্গে মারমুখি আচরণ করেছে। পুলিশ ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রেখে তাকে আদালতে নিয়েছে। কোন ঘটনা ঘটলে খালেদা জিয়া অজুহাত দেখিয়ে বলত আদালতে যেতে পারলাম না। এরা অপরাধ করবে, দুর্নীতি করবে, তাদের কিছু বলা যাবে না; এটা হতে পারে না। মামলার রায় বানচালের জন্য লন্ডনে বাংলাদেশের হাইকমিশনে হামলা করে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি ভাংচুর করা হয়েছে। তিনি বলেন, জেনারেল জিয়া বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার, জেল হত্যার বিচার, যুদ্ধাপরাধীদের হত্যার বিচার বন্ধ করে দিয়েছিল। তার দল বিএনপির মুখে গণতন্ত্রের কথা শোভা পায় না। জেনারেল জিয়ার মতো মার্শাল ল মার্কা গণতন্ত্র এ দেশে আর কোনদিন আসবে না। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে বলেছিলেন দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা হবে, আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান। বঙ্গবন্ধু ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে। খালেদা জিয়ার দুর্নীতির বিচার হলো। এর মধ্য দিয়ে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হয়েছে। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, পার্শ্ববর্তী দেশে মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা, বিহারের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী লালু প্রসাদ যাদবের দুর্নীতির বিচার হয়েছে, তারা তো কোন বিশৃঙ্খলা করেনি, নাটক সাজায়নি। তবে খালেদা জিয়ার মামলার ক্ষেত্রে কেন করা হবে? এই রায়ের মাধ্যমে প্রমাণিত, এদেশে আর দুর্নীতিবাজ অপরাধীরা পার পাবে না। খালেদা জিয়ার সৌদি আরবে টাকা পাচারের যে তথ্য বেরিয়েছে সেটিরও বিচার হবে। তারা যে অপরাধ করেছে, দেশের মানুষ আর তাদের গ্রহণ করবে না, প্রত্যাখ্যান করবে। এই অপরাধীদের রাজনীতি আর এদেশে চলবে না। জাসদের শিরীন আখতার বলেন, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায়ের মাধ্যমে বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে দেশ বের হয়ে এসেছে। দীর্ঘ ১০ বছর পর হলেও দুর্নীতির মামলায় জনগণের প্রত্যাশিত রায়ই হয়েছে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে। এ রায়কে কেন্দ্র করে কোথাও প্রতিবাদ হয়নি, বরং সারাদেশের মানুষ স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, দুর্নীতি খালেদা জিয়া করেছেন, তার ফলও পেয়েছেন। খালেদা জিয়ার পুরো জীবনটাই মিথ্যা ও দুর্নীতি দিয়ে ভরা। একজন নেত্রীর (খালেদা জিয়া) চার চারটি জন্মদিন, দুর্নীতি ভরা জীবন, বিদেশে বিপুল অর্থ পাচার করার ইতিহাস। নির্বাচন না করে গণতন্ত্র ও সাংবিধানিক ব্যবস্থাকে ধ্বংস করতে খালেদা জিয়া অগ্নিসন্ত্রাস চালিয়ে শত শত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছেন। শুধু দুর্নীতিই নয়, এসব মানুষ হত্যার জন্যও খালেদা জিয়াকে আইনের মুখোমুখি হতে হবে। দুর্নীতি, হত্যা, অর্থ পাচার ও জঙ্গীবাদ চালিয়ে আর পার পাওয়া যাবে না, এটা প্রমাণিত। তরিকত ফেডারেশনের সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভা-ারী বলেন, অন্যায় করলে কেউ পার পায় না আজ তা প্রমাণ হয়েছে। আইনের উর্ধে কেউ-ই নয়। এই মামলার রায় দেশের জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। মানুষ পাপ করতে করতে এমন একটা জায়গায় যায়, আল্লাহ তার সাজা দেন। খালেদা জিয়া শত শত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছেন, অগ্নিসন্ত্রাস চালিয়েছেন, দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা দুই পুত্রকে দিয়ে পাচার করিয়েছেন। এসব পাপের কারণেই তার সাজা হয়েছে। তিনি বলেন, এই বিচারকে বানচাল করতে হেন কোন অপকর্ম নেই যা জঙ্গীগোষ্ঠীরা করেনি। এই রায়কে কেন্দ্র করেও তারা নাশকতা চালাতে চেয়েছিল। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর পদক্ষেপের কারণে তারা কিছুই করতে পারেনি। চোরের সাতদিন গৃহস্থের একদিন, তা প্রমাণ হয়েছে। জাসদের নাজমুল হক প্রধান বলেন, খালেদা জিয়া যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে ক্ষমতার ভাগাভাগি করে বাংলাদেশকে আফগানিস্তানে পরিণত করতে চেয়েছিলেন। দীর্ঘ ১০ বছর পর এই রায় হলো। বর্তমান সরকার বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে বলেই অনেকদিন পর বঙ্গবন্ধু হত্যা ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা করতে খালেদা জিয়া বছরের পর বছর অগ্নিসন্ত্রাস ও নাশকতা চালিয়েছেন। সাজা মেনে নিয়ে দেশে নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির পথে ফিরে আসার জন্য বিএনপি নেত্রীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আবারও সন্ত্রাসের পথে হাঁটলে দেশবাসী আর আপনাকে ছাড় দেবে না। বিএনএফের চেয়ারম্যান এস এম আবুল কালাম আজাদ বলেন, দুর্নীতির কারণেই আদালত সাজার রায় ঘোষণা করেছে। জনগণ আবার আতঙ্কিত হয়েছিল যে উনি (খালেদা জিয়া) হয়ত আবারও অতীতের মতো লাগাতার অবরোধের ঘোষণা দেবেন। এটা না দেয়ায় তাকে ধন্যবাদ জানাই। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থাকার সময় একজন মুক্তিযোদ্ধা হওয়া সত্ত্বেও রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দিয়ে আমাকে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়েছিল। এটা কী ভুলে গেছেন মির্জা ফখরুল সাহেবরা। ১০ বছর পরে হলেও এতিমের টাকা মেরে খাওয়ায় আদালত খালেদা জিয়াকে জেল দিয়েছে, এর মাধ্যমে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সরকারী দলের ফজিলাতুন নেসা বাপ্পি বলেন, ঐতিহাসিক এই রায়ের মাধ্যমে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার রায়। ঠিকানায় নিজের বাড়িতে এতিমখানা দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাত করেছিলেন খালেদা জিয়া। এতিমের হক মেরে খেয়ে কেউ পার পায় না, তা প্রমাণ হয়েছে। কুখ্যাত খুনী ও দুর্নীতিবাজ তারেক রহমান গু-া বাহিনী লেলিয়ে দিয়ে লন্ডনে বাংলাদেশের দূতাবাসে হামলা চালিয়েছে। শেখ হাসিনার বাংলাদেশে দুর্নীতিবাজ খালেদা জিয়াদের ঠাঁই হবে না।
×