ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিএনপি নেত্রী এখন নাজিমুদ্দীন রোডের পুরনো কারাগারে;###;তারেকের দশ বছর কারাদণ্ড

৫ বছর জেল ॥ জিয়া অরফানেজ দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার সাজা

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

৫ বছর জেল ॥ জিয়া অরফানেজ দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার সাজা

বিকাশ দত্ত ॥ বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। অন্যদিকে বিএনপির সিনিয়ার ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ৫ আসামিকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে তাদের সবার ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। অন্য আসামিরা হলেন মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী (পলাতক) এবং সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান (পলাতক)। একই সঙ্গে তাদের সবার ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুর ২টা ২৯ মিনিটে রাজধানীর বকশীবাজার আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ আদালতের বিচারক ড. মোঃ আখতারুজ্জামান টানটান উত্তেজনার মধ্যে ঐতিহাসিক এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। ২৫ জানুয়ারি রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক শেষে রায়ের জন্য এ দিন নির্ধারণ করা হয়। বৃহস্পতিবার পিনপতন নীরবতার মধ্যে বিচারক জানান, আসামিদের বিরুদ্ধে ৪০৯ ও ১০৯ ধারার অপরাধ প্রমাণ হয়েছে। সামাজিক অবস্থান ও শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় খালেদা জিয়ার সাজা কমানো হয় বলে রায়ে উল্লেখ করে আদালত। মোট ৬৩২ পৃষ্ঠার রায়ের বিশেষ অংশ পাঠ করেন বিচারক। রায়কে কেন্দ্র করে আদালত প্রাঙ্গণে নেয়া হয় স্মরণকালের নিরাপত্তা । রায়ের পর বিকেল ৩টার কিছু আগে খালেদা জিয়াকে আদালত প্রাঙ্গণ থেকে বের করে নাজিমউদ্দীন রোডের পুরাতন ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে নেয়া হয়। সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদের পর খালেদা জিয়া হলেন বাংলাদেশের দ্বিতীয় সরকারপ্রধান, যাকে দুর্নীতির দায়ে কারাগারে যেতে হলো। আসামি পক্ষের আইনজীবীগণ বলেছেন রায়ের সার্টিফায়েড কপি পেতে আবেদন করেছি। আগামী রবিবার আপীল করব বলে আশা করছি। রায় ঘোষণার পর পরই আসামি পক্ষের আইনজীবীরা নো নো বলে চিৎকার করে ওঠে। উল্লেখ্য, খালেদা জিয়ার রিরুদ্ধে চলমান ৩৭টি মামলার মধ্যে বৃহস্পতিবার প্রথম মামলার রায়টি এলো। আদালতে রায় ঘোষণার সময় বিমর্ষ ছিলেন খালেদা জিয়া। তিনি পুরোটা সময় মাথা নিচু করে বসেছিলেন। রায় ঘোষণার পর এ মামলার দুদকের প্রধান কৌঁসুলি মোশারফ হোসেন কাজল বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়ার সাজার পরিমাণ কম হয়েছে তবু সন্তুষ্ট। সংবিধান মোতাবেক তিনি নির্বাচন করতে পারবেন না। আসামি পক্ষের আইনজীবী আব্দুর রেজ্জাক খান বলেছেন, এটা রাজনৈতিক প্রতিহিংসাবশত করা হয়েছে। খালেদা জিয়া আমাদেরকে আপীল করার কথা বলেছেন। সার্টিফায়েড কপির জন্য আবেদন করা হয়েছে। কপি পেলেই রবিবারের মধ্যেই আপীল করা হবে বলে আশা করছি। খালেদা জিয়াকে সশ্রম কারাদ- দেয়াটা একটি নজিরবিহীন ঘটনা। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুনীতি মামলায় খালেদা জিয়ার সাজাকে ‘ফরমায়েশি রায়’ আখ্যায়িত করে এর বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাওয়ার কথা বলেছেন আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন। এদিকে আইনমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছেন, এ রায়ের মধ্যে দিয়ে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হয়েছে এবং আইনের উর্ধে যে কেউ নয়, তা প্রমাণ হলো। তিনি (খালেদা জিয়া) দোষী প্রমাণিত হওয়ায় বিজ্ঞ বিচারক তাকে পাঁচ বছর কারাদ- দিয়েছেন। আমি শুধু বলতে পারি, এই রায়ে প্রমাণ হলো যে, বাংলাদেশে বিএনপি আমলে অপরাধীদের যে স্বর্গ ছিল তার অবসান হয়েছে। রায়কে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই আদালতের আশেপাশে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়। আলিয়া মাদ্রাসার সামনে ও আদালতের সামনে দুইবার চেক করে সাংবাদিকদের আদালতে প্রবেশ করতে দেয়া হয়। এর আগে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের সামনে রাস্তা বন্ধ করে দেয়া হয়। সকাল নয়টার দিকে আলিয়া মাদ্রাসার সামনে সাংবাদিকদের নাম ও পত্রিকার নাম মোবাইল নম্বর লিখে ছাড়া হয়। দ্বিতীয় দফায় আদালতের সামনে আবার নাম চেক করে প্রবেশ করতে দেযা হয়। আদালতের ভেতরে দীর্ঘ সময় সাংবাদিক, আইনজীবী ও পুলিশ সদস্যদের দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। এর আগেই সকাল ৮টা ২০ মিনিটে আসামি শরফুদ্দিন আহমেদ, সকাল ৯টা ৮মিনিটে কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামালকে আদালতের কাঠগড়ায় নিয়ে আসা হয়। এর পর ১০টা ১৮ মিনিটের সময় বিচারক ড. মোঃ আখতারুজ্জামান আদালতের খাস কামরায় উপস্থিত হন। ১টা ১০মিনিটের সময় খালেদা জিয়ার নিরাপত্তা বাহিনী সিএসএফের কর্মকর্তারা খালেদা জিয়ার বসার চেয়ার ও টেবিল চেক করেন। এর পর ১টা ৫২ মিনিটে বেগম খালেদা জিয়া আদালতে প্রবেশ করেন। বিচারক ২টা ১২ মিনিটের সময় এজলাসে ওঠেন। এজলাসে ওঠার পর বিচারক ড. মোঃ আখতারুজ্জামান বলেন, প্রাইভেট সিকিউরিটি না থাকলেই ভাল। তারা (সিএসএফ) যেন না থাকে। তিনি বলেন, জাজমেন্টটা বড়। ৬৩২ পৃষ্ঠার। শুধু সারসংক্ষেপ পড়া হবে। সংক্ষিপ্ত ১১টি বিবেচ্য বিষয়ে অর্থ আত্মসাত হয়েছে কিনা এ ধরনের ১১টি বিবেচ্য বিষয় উল্লেখ করে বিচারক বলেন, প্রসিকিউশন অভিযোগ প্রমাণ করতে পেরেছে। দণ্ড বিধির ১০৯ ও ৪০৯ ধারা মতে খালেদা জিয়াসহ অন্য আসামিদের দ- প্রদান করা হয়। খালেদা জিয়াকে সশ্রম ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড আর বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ অন্যদের ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড প্রদান করা হয়েছে। আদালত বলেছে, অভিযোগ প্রমাণিত হলেও খালেদা জিয়ার সাজা অন্য আসামিদের তুলনায় কম হয়েছে তার ‘বয়স ও সামাজিক মর্যাদা’ বিবেচনা করে। আসামিদের মধ্যে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান মুদ্রা পাচারের এক মামলায় সাত বছরের সাজার রায় মাথায় নিয়ে দশ বছর ধরে পালিয়ে আছেন দেশের বাইরে। কামাল সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমানও পলাতক। কারাগারে থাকা সালিমুল হক কামাল ও শরফুদ্দিনকে রায়ের জন্য সকালে আদালতে হাজির করা হয়েছিল। সাজা ঘোষণার পর আবারও তাদের কারাগারে ফিরিয়ে নেয়া হয়। আদালতে দুদকের পক্ষে ছিলেন প্রধান কৌঁসুলি মোশারফ হোসেন কাজল, মীর আব্দুল সালাম, মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর, মোহাম্মদ রেজাউল করিম, আব্দুল্লাহ আবু, খন্দকার আব্দুল মান্নান। অন্যদিকে আসমি পক্ষে উপস্থিত ছিলেন খালেদা জিয়ার প্রধান আইনজীবী আব্দুর রেজ্জাক খান, খন্দকার মাহবুব হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহম্মেদ, জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, নিতাই রায় চৌধুরী, মীর্জা আল মাহমুদ প্রমুখ। বিএনপি নেতাদের মধ্যে ছিলেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ড. খন্দকার মোশারফ হোসেন, মীর নাসির উদ্দিন, আমীর খসরু মাহমুদ প্রমুখ। বিবেচ্য বিষয়সমূহ ॥ বিচারক ড. মোঃ আখতারুজ্জামান ৬৩২ পৃষ্ঠার রায়ের সংক্ষিপ্তসারে উল্লেখযোগ্য বিবেচ্য বিষয়গুলো তুলে ধরেন। বিবেচ্য অংশটুকু উল্লেখ করে বিচারক বলেন, প্রসিকিউশন অভিযোগের বিবেচ্য বিষয় প্রমাণ করতে পেরেছে। আসামি পক্ষ ডিসপ্রুভ করতে ব্যর্থ হয়েছে। বিবেচ্য বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে (১) ১৯৯১ সাল থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় সাবেক মুখ্যসচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকীকে দিয়ে প্রাইম মিনিস্টার কোম্পানিজ ফান্ড নামীয় সোনালী ব্যাংক রমনা শাখায় হিসাব খুলেছিলেন কিনা? (২) ওই হিসাবে ১৯৯১ সালের ৯ জুন ১২ লাখ ৫৫ হাজার ইউএস ডলার জমা করেছিলেন কিনা? (৩) ওই ১২ লাখ ৫৫ হাজার ডলারের সমপরিমাণ বাংলাদেশী টাকায় চার কোটি ৪৪ লাখ ৮১ হাজার ৩১৬ টাকা প্রাইম মিনিস্টার কোম্পানিজ ফান্ডে জমা হয়েছিল কিনা? (৪) ওই টাকা বৃদ্ধি পেয়ে চার কোটি ৬৬ লাখ ৭৬ হাজার ২৯৮ টাকায় উন্নীত হয়েছে কিনা? (৫) প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টে দুই কোটি ৩৩ লাখ ৩৩ হাজার ৫০০ টাকা স্থানান্তরিত হয় কিনা এবং আসামি তারেক রহমান ও মমিনুর রহমান প্রাইম ব্যাংকে স্থানান্তর করেছেন কিনা? (৬) কাজী সালিমুল হক কামাল প্রাইম ব্যাংক গুলশান শাখা থেকে ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিউ ইস্কাটন শাখায় স্থানান্তর করেন কিনা? (৭) কাজী সালিমুল হক কামাল অবৈধভাবে ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে লাভবান হয়ে ব্যক্তিবিশেষকে লাভবান করতে সহায়তা করেন কিনা? (৮) খালেদা জিয়াসহ আসামিরা পরস্পর সহযোগিতায় অবৈধভাবে লাভবান হওয়ার উদ্দেশে এবং অন্যদের লাভবান করার অসৎ মানসে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার অপব্যবহার করে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টে টাকা স্থানান্তর করাতে পারেন কিনা এবং ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাত করা হয় কিনা? (৯) আসামিরা ৪০৯ ও ১০৯ ধারার অপরাধ করেছেন কিনা? (১০) আসামিরা শাস্তি পাওয়ার যোগ্য কিনা? রায়ের পর কারাগারে ॥ রায়ের পর বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে রাজধানীর নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে নেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে সাদা রঙের গাড়িতে করে তাকে পুরনো কারাগারে নেয়া হয়। এর আগে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে বহনকারী সাদা রঙের একটি গাড়ি আদালত থেকে পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডের কারাগারের দিকে রওনা দেয়। সেখানে এক সময় ব্যবহৃত কিডস ডে কেয়ার সেন্টারের তিনতলা ভবনের নিচতলায় দুটি রুমে তার থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বুধবার থেকেই কারাগারের আশপাশে নতুন করে সিসি ক্যামেরা বসানো হয়। মোতায়েন করা হয় র‌্যাব ও পুলিশ। রায়ের সময় বিমর্ষ ছিলেন ॥ আদালতে রায় ঘোষণার সময় বিমর্ষ ছিলেন খালেদা জিয়া। তিনি পুরোটা সময় মাথা নিচু করে বসেছিলেন। বিচারক কারাদ- ঘোষণা করার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি তার জন্য নির্ধারিত চেয়ারে মাথা নিচু করে বসেছিলেন। বিচারক রায় ঘোষণা শেষে এজলাস ত্যাগ করলে পুলিশ আদালত কক্ষে ঢুকে ব্যারিকেড তৈরি করে। এ সময় খালেদা জিয়াকে আর দেখা যায়নি। এর আগে আদালতে প্রবেশের সময় খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার গৃহকর্মী ফাতেমাও ছিলেন। এছাড়া আফরোজা আব্বাস ও সুলতানা আহমেদ খালেদার চেয়ারের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এরপর খালেদা জিয়ার আইনজীবী আব্দুর রাজ্জাক খান, মওদুদ আহমদ, শাহজাহান ওমর ও জমিরউদ্দিন সরকার পুলিশের ব্যারিকেডের মধ্যেই তার সঙ্গে পাঁচ মিনিট কথা বলেন। তাদের মধ্যে কী কথা হয়েছে জানতে চাইলে আব্দুর রেজ্জাক খান বলেন, ‘তার ওষুধ এবং প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কী লাগবে সেসব বিষয়ে এবং মামলার পরবর্তী কার্যক্রম নিয়েও কথা হয়েছে।’ সাজার পরিমাণ কম হলেও সন্তুষ্ট ॥ এ মামলায় দুদকের প্রধান আইনজীবী মোশারফ হোসেন কাজল জনকণ্ঠকে বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার সাজার পরিমাণ কম হয়েছে তবু সন্তুষ্ট। এ মামলায় ১০ বছর ধরে দুদকের পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেছিলাম। মামলার রায়ে আল্লাহ পাকের কাছে শুকরিয়া। যেটা প্রমাণ করতে পেরেছি এতিমের অর্থ আত্মসাৎ হয়েছে। খালেদা জিয়া ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুই পুত্রকে টাকা দিয়েছে। তারা অন্যদের সহায়তায় তা আত্মসাত করেছে। একটা কথা বাব বার বলতে চাই মামলাটি দুদক করেছে। এখানে সরকার কোন প্রভাব বিস্তার করেনি। রায়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিযাকে ৫ বছরের সশ্রম কারাদ- আর তারেকসহ অন্যদের ১০ বছরের সশ্রম কারাদ- ও অর্থদ- প্রদান করা হয়েছে। এই সাজার ফলে সংবিধান মতে খালেদা জিয়া নির্বাচন করতে পারবেন না। কপি পেলে জামিনের আবেদন ॥ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, জাল কাগজ দিয়ে বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে শাস্তি ঘোষণা করা হয়েছে। রায়ে অন্যদের অপরাধের বিষয়ে উল্লেখ করা হলেও বেগম জিয়ার অপরাধের বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। ৪০৯ ধারায় এমন শাস্তি হতে পারে না। রায়ের কপি তোলা গেলে রবিবার খালেদা জিয়ার জামিনের আবেদন করা হবে জানিয়ে মওদুদ বলেন, এটি একটি ফৌজদারি মামলা হলেও তা রাজনৈতিক মামলা হিসেবে পরিচালিত হয়েছে। তাই মামলার রায় আইন সঙ্গত হয়নি। বেগম জিয়া নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন কি না তা আদালত সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে জামিনের পর বেগম জিয়া নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। দুর্নীতি করায় সাজা হয়েছে ॥ দুর্নীতির মামলায় বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার সাজার রায়ের প্রতিক্রিয়ায় আইনমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলছেন, এর মধ্যে দিয়ে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হয়েছে এবং আইনের উর্ধে যে কেউ নয়, তা প্রমাণ হলো। রায়ের পর সচিবালয়ে নিজের দফতরে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় মন্ত্রী বলেন, তিনি (খালেদা জিয়া) দোষী প্রমাণিত হওয়ায় বিজ্ঞ বিচারক তাকে পাঁচ বছর কারাদ- দিয়েছেন। আমি শুধু বলতে পারি, এই রায়ে প্রমাণ হলো যে বাংলাদেশে বিএনপি আমলে অপরাধীদের যে স্বর্গ ছিল তার অবসান হয়েছে। এখন এটাই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে, অপরাধ করলে তার বিচার হয় এবং সুষ্ঠু বিচার হওয়ার পরে তার শাস্তি হয়। আমি যতদূর জানি দুদক কাগজপত্রে প্রমাণ করেছে এবং সেজন্য আজকে এই সাজা। খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের সাজার রায় হওয়ায় তিনি জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন কি পারবেন না তা উচ্চ আদালত এবং নির্বাচন কমিশনের ওপর নির্ভর করছে বলে জানান আইনমন্ত্রী।তিনি বলেন, আমাদের সংবিধানে বলা আছে নৈতিক স্খলনের জন্য দুই বছরের অধিক সময় যদি কারও সাজা হয় তাহলে তিনি সংসদ নির্বাচন করতে পারবেন না। ‘হাইকোর্ট ও সুপ্রীমকোর্টের দুটি রায় আছে, যেখানে এ ব্যাপারে কিন্তু সুনিশ্চিত বলা হয়েছে আপীল যতক্ষণ পর্যন্ত শেষ না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত এই মামলাটা পূর্ণাঙ্গ স্থানে যায়নি সেজন্য দ-প্রাপ্ত হননি সেজন্য ইলেকশন করতে পারবেন, আবার আরেকটা রায়ে আছে পারবেন না। এখন উনার ব্যাপারে আপীল বিভাগ এবং স্বাধীন নির্বাচন কমিশন কি সিদ্ধান্ত নেবেন সেটা তাদের ব্যাপার।’ ‘মামলার রায়ের সার্টিফাইড কপি পাওয়ার পরে তারা আপীল করতে পারে এবং আপীল করার সঙ্গে সঙ্গে তারা বেইল পিটিশনও দিতে পারে।’ সার্টিফাইড কপি পাওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে আপীল করতে হবে জানিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, হাইকোর্ট থেকে আপীল বিভাগে ৩০ দিনের মধ্যে আপীল করতে হয়। ‘যে মুহূর্তে রায় দেয়া হয় সেই মুহূর্তে সময় গণনা শুরু হয়। কিন্তু যে মুহূর্তে সার্টিফাইড কপির জন্য দ-প্রাপ্ত আসামি দরখাস্ত করেন সেই মুহূর্ত থেকে সময় গণনা বন্ধ হয়ে যায়, সার্টিফাইড কপি প্রস্তুত না হওয়া পর্যন্ত। যে মুহূর্তে সার্টিফাইড কপি প্রস্তুত হবে সেই মুহূর্তে আবার সময় গণনা শুরু হবে। তার মানে হচ্ছে সার্টিফাইড কপি তিনি যতদিন না পাবেন ততদিন পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে এই ৬০ দিনের সময় গণনা করা হবে না। খালেদা আপীল করতে বলেছেন ॥ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার ঘোষিত রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপীলের নির্দেশ দিয়েছেন খালেদা জিয়া। বৃহস্পতিবার দুপুরে খালেদা জিয়ার আইনজীবী মাহবুব উদ্দিন খোকন সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি জানান, রায় ঘোষণার পর খালেদা জিয়া তার আইনজীবীদের সঙ্গে দেখা করে এ নির্দেশ দিয়েছেন।, আমরা রায়ের সার্টিফায়েড কপি পেতে আবেদন করেছি। আগামী রবিবার আপীল করব বলে আশা করছি। মামলা থেকে রেহাই পেতে বার বার উচ্চ আদালতে ॥ দীর্ঘ এই বিচার প্রক্রিয়ায় মামলা থেকে রেহাই পেতে খালেদা জিয়া উচ্চ আদালতে গেছেন বার বার। তার অনাস্থার কারণে সুপ্রীমকোর্টের নির্দেশে তিনবার এ মামলার বিচারক বদল হয়। শুনানিতে হাজির না হওয়ায় তিনবার তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি করে আদালত। এসব কারণে দুদক ও আওয়ামী লীগ নেতারা খালেদা জিয়া ও তার আইনজীবীদের বিরুদ্ধে মামলা বিলম্বিত করারও অভিযোগ করেছে বহুবার। অন্যদিকে বিএনপির অভিযোগ, ক্ষমতাসীনরা রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে জরুরী অবস্থার সময় দায়ের করা এই ‘মিথ্যা’ মামলাকে রায় পর্যন্ত নিয়ে এসেছে। জরুরী অবস্থার সময় ২০০৭ সালে গ্রেফতার হওয়ার পর খালেদা জিয়া এক বছর সাত দিন কারাগারে থাকার সময় দুদক এ মামলা দায়ের করে। পরে এ মামলায় খালেদা ও তারেককে গ্রেফতার দেখানো হয়। এ মামলার বিচার শেষ করতে মোট ২৬১ কার্যদিবস আদালত বসেছে। এর মধ্যে ২৩৬ কার্য দিবসে রাষ্ট্রপক্ষে ৩২ জন সাক্ষ্য দেন। আসামিরা আত্মপক্ষ সমর্থন করে বক্তব্য দেন ২৮ কার্যদিবস। বিচারের শেষ ভাগে দুই পক্ষ মোট ১৬ কার্যদিবস যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন করে।
×