ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যাংকের দেয়া ঋণের ৬৫ হাজার কোটি টাকাই মন্দ ঋণ

প্রকাশিত: ০৪:১৭, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

ব্যাংকের দেয়া ঋণের ৬৫ হাজার কোটি টাকাই মন্দ ঋণ

সংসদ রিপোর্টার ॥ ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকসমূহের শ্রেণীকৃত ঋণের পরিমাণ ছিল ৮০ হজার ৩০৭ কোটি টাকা। এই শ্রেণীকৃত ঋণের মধ্যে মন্দমানে শ্রেণীকৃত ঋণের পরিমাণ ৬৫ হাজার ৮৬০ কোটি টাকা। যা মোট ঋণের ৮ দশমিক ৭৫ ভাগ। ঋণ খেলাপী প্রবণতা বন্ধে অর্থাৎ খেলাপী ঋণ আদায়ে সরকার তথা বাংলাদেশ ব্যাংক সময়ে সময়ে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে সরকার দলীয় সংসদ সদস্য এম আবদুল লতিফের প্রশ্নের লিখিত জবাবে এ তথ্য জানান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি জানান, খেলাপী/শ্রেণীকৃত ঋণ আদায়ের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও তদারকির জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে একটি পৃথক টাস্কফোর্স সেল রয়েছে। এই সেলের মাধ্যমে অর্থ ঋণ আদালতসহ অন্যান্য আদালতে দায়েরকৃত মামলাসমূহ দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে নিয়মিত তদারকি করা হচ্ছে। অর্থমন্ত্রী জানান, খেলাপী ঋণ আদায়ের লক্ষ্যে স্থানীয় ও বিশ্ব বাণিজ্য পরিস্থিতি পর্যালোচনাপূর্বক সময়ে সময়ে পুনঃতফসিলীকরণ ও পুনর্গঠন নীতিমালার শর্ত শিথিল করা হয়েছে। এছাড়া অর্থ ঋণ আদালত আইন ২০০৩-এর অধীনে আদালতের বাইরে বিকল্প পদ্ধতিতে বিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যমেও শ্রেণীকৃত ঋণ আদায়ের ব্যবস্থা রয়েছে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, ব্যাংকিং খাতে খেলাপী ঋণ আদায় পরিস্থিতি উন্নয়ন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সরকার খেলাপী গ্রাহক শনাক্তকরণ এবং তাদেরকে আইনের আওতায় আনার লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। খেলাপী গ্রাহকদের বিরুদ্ধে মামলা করার মাধ্যমে খেলাপী ঋণ আদায় করা হচ্ছে। এছাড়া শ্রেণীকৃত ও অবলোপনকৃত ঋণ আদায়ে দায়েরকৃত মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে অভিজ্ঞ আইনজীবী নিয়োগ করতে হবে এবং মামলাগুলোর যথাযথ তদবির করা। মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহারে কিছু ঝুঁকি রয়েছে ॥ এম আবদুল লতিফের অপর প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, যে কোন অর্থ পরিশোধ পদ্ধতির মধ্যে কতিপয় ঝুঁকি থাকে। পুরাতন ম্যানুয়াল পদ্ধতিসমূহ আধুনিকায়নের মাধ্যমে এসব ঝুঁকি অনেকাংশে হ্রাস করা সম্ভব হলেও পরিশোধ প্রক্রিয়াসমূহকে সম্পূর্ণ ঝুঁকিমুক্ত করা সম্ভব হয়নি। এছাড়া মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) একটি অতি আধুনিক এবং জনপ্রিয় সেবা যা বাংলাদেশে অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে বিস্তার লাভ করেছে। তিনি জানান, এই আধুনিক প্রক্রিয়া পদ্ধতিগতভাবে অত্যন্ত নিরাপদ হলেও এর ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ঝুঁকি রয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তির বিষয়ে খুব বেশি ওয়াকিবহাল নন, এমন জনগণ অজান্তেই পাসওয়ার্ড শেয়ার করে এবং নিজের মোবাইল অন্যকে ব্যবহার করতে দিয়ে ঝুঁকি তৈরি করেন। এছাড়া প্রযুক্তির দ্রুততার সুযোগ নিয়ে অসাধু ব্যক্তিগণ অপরাধলব্ধ আয় স্থানান্তর করতে পারেন যা এ পরিশোধ প্রক্রিয়ায় ঝুঁকি তৈরি করে। তবে সরকার এ বিষয়ে অত্যন্ত সচেতন এবং বাংলাদেশ ব্যাংক এ পরিশোধ প্রক্রিয়ার নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে সদা তৎপর। সাড়ে ১৮ লাখ ব্যক্তি আয়কর দেন ॥ সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য বেগম উম্মে রাজিয়া কাজলের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, একজন নাগরিকের বার্ষিক আয় আড়াই লাখ টাকা হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে আয়কর প্রদান করতে হয়। এ বিবেচনায় কোন কোটিপতির করের বাইরে থাকার সুযোগ নেই। বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় সাড়ে ১৮ লাখ ব্যক্তিকে আয়কর প্রদান করতে হয়। তাই কোন কোটিপতির করনেটের বাইরে থাকার কোন সুযোগ নেই। সংসদ সদস্য বেগম সানজিদা খানমের প্রশ্নের জবাবে আবুল মাল আবদুল মুহিত জানান, বর্তমানে (২০১৬-১৭) দেশে মাথাপিছু জাতীয় আয়ের পরিমাণ এক হাজার ৬১০ মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশী মুদ্রায় এক লাখ ২৭ হাজার ৪০১ টাকা। দেশের আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকার নানাবিধ কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে।
×