অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাণিজ্য চুক্তির আওতায় তৃতীয় কোন দেশে পণ্য রফতানিতে ভারতের কলকাতা বিমান বন্দর ব্যবহার করতে পারবে বাংলাদেশ। এ জন্য চুক্তিটির ধারা সংশোধনের প্রস্তাব দিয়েছে ভারত। বাংলাদেশ এই প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে চুক্তিটির সংশোধনে শীঘ্রই কাজ শুরু করবে। ভারতের প্রস্তাবে আরও ৬টি বর্ডার হাট দ্রুত চালুর ব্যাপারে সম্মত হয়েছে বাংলাদেশ। এতে সীমান্ত এলাকায় বাণিজ্য বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। বর্তমান চারটি বর্ডার হাট চালু রয়েছে। এ ছাড়া বিএসটিআই অনুমোদিত ২১টি ফুড আইটেমের স্বীকৃতি রয়েছে ভারতের। এবার আরও ৫টি পণ্য এ তালিকায় যুক্ত হয়েছে।
রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত দুই দিনব্যাপী এই বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে বাণিজ্য সচিব শুভাশিষ বসু এবং ভারতের পক্ষে দেশটির বাণিজ্য সচিব রিতা তিওতিয়া নেতৃত্ব দেন। বৃহস্পতিবার বৈঠকটি আনুষ্ঠানিকভাবে সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাণিজ্য সচিব জানান, সচিব পর্যায়ের দু’দিনের বৈঠকে ফলপ্রসু আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে পণ্য রফতানিতে কলকাতা বিমান বন্দর ব্যবহার করার প্রস্তাব ভারত গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। দেশটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বাণিজ্য চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ এ ধরনের সুযোগ নিতে পারে। তিনি বলেন, এখন বাণিজ্য চুক্তির ধারা সংশোধনের মাধ্যমে কলকাতা বিমান বন্দর ব্যবহারের বিষয়টি এগিয়ে নেয়া হবে। এ বিষয়ে কূটনৈতিক প্রক্রিয়া শীঘ্রই শুরু হবে।
জানা গেছে, ট্রানজিট সুবিধায় এয়ার কার্গোতে পণ্য পরিবহনের জন্য কলকাতা বিমানবন্দর ব্যবহারে আগ্রহ রয়েছে বাংলাদেশের। অন্যদিকে দুই দেশের সীমান্তে আরও ১০টি বর্ডার হাট স্থাপনের বিষয়ে ভারতের দিক থেকে আগ্রহ প্রকাশ করা হয়েছে। বাংলাদেশ এ বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছে। এ ছাড়া ট্যারিফ কমিশনের সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য দুই দেশের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক সইয়ের বিষয়ে দুই পক্ষ ঐকমত্যে পৌঁছেছে।
জানা গেছে, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতে ভোজ্যতেল রফতানির ক্ষেত্রে এজিমার্ক সার্টিফিকেশন সুবিধা চাওয়া হয়েছিল। এই সার্টিফিকেশন সুবিধাটি কেবলমাত্র ভারতীয় কোম্পানিগুলোকে দেয়া হয়। এটি ছাড়া ভারতে ভোজ্যতেল সরবরাহ করা যায় না। এ ছাড়া বিএসটিআই অনুমোদিত ২১টি ফুড আইটেমের স্বীকৃতি আগেই দিয়েছে ভারত। এর সঙ্গে এবার আরও পাঁচটি পণ্য যুক্ত করা হয়েছে। যদিও বৈঠকে আরও ছয়টি ননফুড আইটেমের স্বীকৃতি চাওয়া হয়েছিল। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতের এলসি স্টেশনগুলোর সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোরও প্রস্তাব দেয়া হয়। বিশেষ করে এলসি স্টেশনগুলোতে পণ্য পরীক্ষার সুযোগ রাখার প্রস্তাব দেয় বাংলাদেশ। ভারত তাদের এলসি স্টেশনগুলোর আধুনিকায়নে কাজ করছে বলে জানিয়েছে। সচিব পর্যায়ের এবারের বৈঠকে আরও যেসব ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়েছে সেগুলো হচ্ছে ভারত কর্তৃক কিছু বাংলাদেশী রফতানি পণ্যের ওপর এ্যান্টিডাম্পিং শুল্ক আরোপ, পণ্য আমদানি-রফতানি সংক্রান্ত বাণিজ্য বিরোধ ও জটিলতা দূর করা, স্থল শুল্ক বন্দরের মাধ্যমে অধিক সংখ্যক পণ্য আমদানির সুযোগ প্রদান, সড়ক ও রেলপথে পণ্য পরিবহন সুবিধা সম্প্রসারণ করা এবং বাংলাদেশে ভারতীয় চিনি রফতানি সংক্রান্ত ভারতীয় প্রস্তাব।
জানা গেছে, ২০১১ সালে ভারত বাংলাদেশী পণ্য (মদ ও সিগারেট ছাড়া) আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকারের ঘোষণা দিয়ে রেখেছে। দুটি দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণও ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অতিক্রম করেছে। বছরে ভারত থেকে ৬ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করলেও বাংলাদেশের রফতানি করে মাত্র ৮০০ মিলিয়ন ডলারের পণ্য।
ব্যবসায়ীদের মতে, এই বাণিজ্য বৈষম্য দূর করতে হলে বাংলাদেশের রফতানি পণ্যের ওপর আরোপিত এ্যান্টিডাম্পিং ও কাউন্টার ভেইলিং, মানসনদ, অশুল্ক বাধার মতো মাঝপথের এসব প্রতিবন্ধকতা দূর করতে হবে। এ জন্য আমলাতান্ত্রিক জটিলতাকে পাশ কাটিয়ে দুই দেশের রাজনৈতিক সদিচ্ছাকে কাজে লাগাতে হবে।