ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ঠাকুরগাঁওয়ে ইটভাঁটির আগুনে ধ্বংস হচ্ছে আবাদি জমি

প্রকাশিত: ০৩:৫১, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

ঠাকুরগাঁওয়ে ইটভাঁটির আগুনে ধ্বংস হচ্ছে আবাদি জমি

নিজস্ব সংবাদদাতা, ঠাকুরগাঁও, ৮ ফেব্রুয়ারি ॥ জেলার বিভিন্ন এলাকায় ইটভাঁটির আগুনে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে এলাকার ফসলের ক্ষেত ও পরিবেশ। সেইসঙ্গে ভূমিদস্যু ও দালালদের প্রলোভনে শত শত আবাদি জমি হয়ে যাচ্ছে অনাবাদি। সদর উপজেলার সালন্দর, ফারাবাড়ি, আকচা, জগন্নাথপুর, নারগুন ইউনিয়ন ও পীরগঞ্জের ভিমটিয়া, গোয়াগাঁও মৌজা ও তার আশপাশ এলাকার আবাদি জমিগুলোর মাটি কেটে ভাঁটিগুলোতে নিয়ে ইট প্রস্তুত করা হচ্ছে। উল্লেখিত এলাকার সহস্রাধিক একর আবাদি জমির মাটি কেটে বড় বড় পরিখা, পুকুর ও খাল করায় ওইসব জমিতে ২০ বছরেও ফসল ফলানো সম্ভব হবে না বলে ভূমি বিশেষজ্ঞরা মত প্রকাশ করেছেন। ভাঁটি মালিকরা তাদের এক শ্রেণীর দালাল চক্রের মাধ্যমে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক আবাদি জমির মালিকদের মোটা অংকের অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে আকৃষ্ট করে তাদের আবাদি জমিগুলোর ওপর অংশের মাটি খুঁড়ে ইট ভাঁটিগুলোতে সরবরাহ করছে। যেসব জমিতে এ ধরনের ধ্বংসাত্মক তৎপরতা চালাচ্ছেন তার সংলগ্ন জমিগুলোও অনাবাদি হয়ে পড়ছে। কারণ খাল সংলগ্ন জমির উঁচু অংশে আর পানি জমে থাকছে না। ফলে ওইসব জমিগুলোতে এখন বোরো ধান আবাদে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। গম ক্ষেতগুলোতে সেচের পানি জমছে না। সেচের পানি চুইয়ে খাল, গর্ত ও পরিখাগুলোতে চলে যাচ্ছে। ভাঁটি মালিকদের লেলিয়ে দেয়া দালালরা প্রতি বিঘা জমির মাটি কাটার জন্য অভাবী কৃষককে ২৫ হাজার টাকা থেকে ৪০ হাজার টাকা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিলেও পরিশোধ করা হচ্ছে অর্ধেক টাকা। এমনি করে জমির মালিক হয়ে উঠছে ভূমিহীন আর চিরদিনের জন্য এই জমিগুলো পরিণত হচ্ছে অনাবাদি খালে। ইটভাঁটি মালিক শাহাজাহান আলী (এসবি ভাঁটি) জানান, দালালরা তাদের ইটভাঁটির মাটি সরবরাহ করে থাকে। ভাঁটি মালিকরা কেউ সরাসরি জড়িত নয়। উত্তরাঞ্চলের বগুড়ায় পরিবেশ অধিদফতরের দফতর থাকলেও ঠাকুরগাঁও অঞ্চলে তারা সরেজমিন পরিদর্শন না করায় ইটভাঁটি মালিক ও দালালচক্র ভূমিদস্যুতায় মেতে উঠে। জেলার উল্লেখিত ইউনিয়ন ও মৌজাগুলোতে ধান, গম, সরিষা ফসল উৎপাদনে সেরা রেকর্ড ছিল। কিন্তু ইটভাঁটিগুলোর আগ্রাসী তৎপরতায় এই মৌজা দুটি এখন ফসলহীন মাঠে পরিণত হতে চলেছে। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়ালকে জানালে তিনি উপজেলা এ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার অব ল্যান্ডকে (অ.ঈ.খধহফ) সরেজমিন তদন্ত করে রিপোর্ট প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান। এদিকে এই ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থ হলে তারা মরিয়া হয়ে অবশিষ্ট জমিগুলোকে ধ্বংস করে অনাবাদি ও ফসলহীন এলাকা হিসেবে গড়ে তোলার চক্রান্তে আরও শক্তিশালী হয়ে গরিব ক্ষুদ্র জমির মালিকদের পথে বসাতে বাধ্য করবে বলে এলাকাবাসী আশঙ্কা করছেন।
×