ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

খুলনায় সরকারী খাবার স্যালাইন উৎপাদন কেন্দ্র বন্ধ ৫ মাস

প্রকাশিত: ০৩:৫১, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

খুলনায় সরকারী খাবার স্যালাইন উৎপাদন কেন্দ্র বন্ধ ৫ মাস

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ কাঁচামাল সঙ্কটে খুলনা বিভাগের একমাত্র সরকারী খাবার স্যালাইন উৎপাদন কারখানাটি পাঁচ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে। এ কারণে যশোরসহ বিভাগের দশ জেলার স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে খাবার স্যালাইন সরবরাহ হচ্ছে না। ফলে সরকার এই সেবাকেন্দ্রগুলোতে খাবার স্যালাইন সঙ্কট তীব্র আকার ধারণ করেছে। তবে এ সমস্যার কবে সমাধান হবে সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কিছুই বলতে পারছেন না। স্যালাইন উৎপাদন ও বিতরণ বিভাগ খুলনা বিভাগীয় কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এ বিভাগের সব সরকারী হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রে এই কারখানায় উৎপাদিত খাবার স্যালাইন সরবরাহ করা হয়। এছাড়া এখান থেকে ফরিদপুর জেলাতেও খাবার স্যালাইন সরবরাহ করা হয়ে থাকে। তবে গত বছর ১৬ আগস্ট থেকে এই উৎপাদন কেন্দ্রে খাওয়ার স্যালাইন উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা যায়, সিভিল সার্জনের অধীনে ১৯৭৯ সাল থেকে যশোর শহরের আরএন রোডে প্রথমে একটি বাড়ি ভাড়া করে খুলনা বিভাগীয় উৎপাদন কেন্দ্রে খাবার স্যালাইন উৎপাদন কার্যক্রম শুরু হয়। পরে ১৯৮১ সালে শহরের ঘোপ নওয়াপাড়া রোড এলাকায় অফিস স্থানান্তরিত হয়। সেই থেকে এখনও ভাড়া নেয়া একই বাড়িতে খাবার স্যালাইন উৎপাদন করা হয়। খাবার স্যালাইন উৎপাদন ও বিতরণ খুলনা বিভাগীয় অফিসের ম্যানেজার অধীর কুমার ঘোষ জানিয়েছেন, খুলনা বিভাগের দশ জেলা ও ফরিদপুর জেলায় খাবার স্যালাইন সরবরাহ করে কিছু স্যালাইন উদ্বৃত্ত থাকে। তবে প্রায় ৯১ লাখ চাহিদার বিপরীতে ২০১৬-১৭ সালে উৎপাদন হয়েছে ৮৬ লাখ ৪০ হাজার প্যাকেট। সরকারী প্রতিষ্ঠান বলে এই স্যালাইনের গুণগত মান অন্যান্য কোম্পানি তুলনায় অনেক ভাল। এখানে উৎপাদিত স্যালাইনে যেসব কাঁচামাল ব্যবহার করা হয় তা চীন থেকে আমদানি করা হয়। এই স্যালাইন ডায়রিয়া ও পানিবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য কার্যকরী ভূমিকা রাখে। কিন্তু স্যালাইনের কাঁচামাল গ্লুকোজ, সোডিয়াম ক্লোরাইড, পটাশিয়াম ক্লোরাইড এবং ট্রাইসোডিয়ামের অভাবে গত বছর ১৬ আগস্ট থেকে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। কাজ না থাকায় কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অলস সময় পার করছেন। আর কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচীর আওতায় ১২ জন শ্রমিক মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এদিকে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত পাঁচ মাস ধরে এই হাসপাতালে সরবরাহ না থাকায় রোগীদের খাবার স্যালাইন কিনে খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন সেবিকারা। কিছু স্যালাইন স্টোরে আছে তা অসহায় গরিবদের সরবরাহ করা হচ্ছে। হাসপাতালের স্টোর কিপার আফজাল হোসেন জানিয়েছেন, প্রতিবছর ২৫/৩০ হাজার প্যাকেজ স্যালাইন হাসপাতালের জন্য প্রয়োজন। সেখানে চলতি অর্থবছর সরবরাহ করা হয়েছে ১৫ হাজার স্যালাইন। যা বর্তমানে শেষের দিকে। নতুন করে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। কিন্তু খুলনা বিভাগের একমাত্র স্যালাইন উৎপাদন কেন্দ্রের কর্মকর্তারা লিখিতভাবে জানিয়েছেন, উৎপাদন বন্ধ থাকায় সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। একইভাবে জেলার আট উপজেলায় স্যালাইন সঙ্কট দেখা দিয়েছে। তিনি আরও জানান, অন্য মাসের তুলনায় মে-জুন মাসে ডায়রিয়ার প্রকোপ থাকে। এজন্য তখন স্যালাইনের চাহিদাও বেশি থাকে। কিন্তু সরবরাহ না থাকায় চলতি বছরের ডায়রিয়া মৌসুমে হাসপাতালের রোগীরা বিপাকে পড়তে পারেন। যশোরের সিভিল সার্জন দিলীপ কুমার রায় জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন থেকে খুলনা বিভাগের একমাত্র স্যলাইন উৎপাদন কেন্দ্রটি খুলনা বিভাগের ১০ জেলা ও ফরিদপুর জেলায় ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। কিন্তু স্যালাইন উৎপাদনের কাঁচামাল গ্লুকোজ, সোডিয়াম ক্লোরাইড, পটাশিয়াম ক্লোরাইড এবং ট্রাইসোডিয়াম স্বাস্থ্য অধিদফতরের বিশেষ শাখা থেকে সরবরাহ করা হচ্ছে না। যে কারণে বর্তমানে স্যালাইন উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।
×