ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সোনার খনি বিমানবন্দর

প্রকাশিত: ০৩:৩৮, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

সোনার খনি বিমানবন্দর

ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর যেন সোনার খনি! অবশ্য এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিমানবন্দরও কম যায় না কোন অংশে। সার্বিক অবস্থাদৃষ্টে প্রতীয়মান হয় যে, দেশের বিমানবন্দরগুলো প্রায় অরক্ষিত ও অনিরাপদ হয়ে উঠেছে, বিশেষ করে সোনা চোরাচালানের ক্ষেত্রে। তবে বিমানবন্দরগুলো দিয়ে মাদক, ক্ষুদ্রাস্ত্র, সাপের বিষ, নিষিদ্ধ ওষুধ কিংবা অন্যবিধ পণ্যও যে পাচার হয় না, তা নয়। তবে সব মিলিয়ে সোনা চোরাচালানের জ্বালাতনই বেশি। বিমানের টয়লেট, সিটের নিচে অথবা যাত্রীর শরীরে পেট ও পায়ুপথসহ কোথায় মেলে না সোনা? ছোট ছোট সোনা চোরাচালানের পাশাপাশি বৃহৎ সোনা চোরাচালানের ঘটনাও ঘটে প্রায় নিয়মিত। এসব সোনা প্রধানত আসে দুবাই, আবুধাবী, কুয়েত, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড থেকে। রাজধানীসহ সারাদেশে অসংখ্য সোনার দোকান, ভাঙ্গারি কারখানা ও জুয়েলারি রয়েছে। অথচ দেশে কোন সোনার আকরিক খনি নেই। আমদানিও অবৈধ। কিছু পরিমাণ সোনা এসে থাকে প্রবাসী বাংলাদেশীদের উপার্জনের অর্থে। তবে তার পরিমাণ নগণ্য চাহিদার তুলনায়। সে অবস্থায় সন্দেহের কোন অবকাশ নেই যে, দেশে সোনা আসছে প্রধানত অবৈধ পথে, চোরাচালানের মাধ্যমে। কিছু পরিমাণে ধরা পড়ছে, অধিকাংশই ধরা পড়ছে না বিমানবন্দরগুলো অরক্ষিত থাকার কারণে। কিছু সোনা আবার বাংলাদেশের মাধ্যমে পাচারও হয়ে যাচ্ছে প্রতিবেশী দেশে। কেননা, জুয়েলারির চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি মাদক, নারী ও শিশু পাচার সর্বোপরি অস্ত্রশস্ত্র, ওষুধসহ নিষিদ্ধ পণ্যদ্রব্যের মূল্য পড়িশোধ তথা লেনদেনের অন্যতম মাধ্যম সোনা অথবা মার্কিন ডলার। আর এর জন্য বিমানবন্দরগুলো প্রায়ই অপেক্ষাকৃত নিরাপদ রুট বলে বিবেচিত হয়ে থাকে। মাঝে মধ্যে পুলিশ ও কাস্টমসের সহায়তায় সোনাসহ যে বা যাদের ধরা হয়, অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাদের জেল-জরিমানাসহ শাস্তি হয় খুব কম। অল্প সময়ের মধ্যেই জামিন নিয়ে বেরিয়ে যায় তারা। রাঘব বোয়াল তথা মূল হোতারা থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে। অরক্ষিত ও অনিরাপদ বিধায় বহির্বিশ্বের চাপে পড়ে দীর্ঘদিন পর অবশেষে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বসানো হয়েছে এক্সপ্লোসিভ ডিটেকশন সিস্টেম বা ইডিএস মেশিন। উল্লেখ্য, এই যন্ত্রের মাধ্যমে সহজেই বোমা, বিস্ফোরক, অস্ত্রশস্ত্র, ধাতব পদার্থ শনাক্ত করা সম্ভব। যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানিকৃত সবচেয়ে অত্যাধুনিক ও নির্ভরযোগ্য মেশিন বসানো হয়েছে শাহজালালে। ঢাকা বিমানবন্দরে যাত্রীদের লাগেজ পরীক্ষার মান আন্তর্জাতিক মানসম্মত নয়। ফলে তখন সমূহ বিপাকে পড়তে হয় বাংলাদেশের যাত্রী ও মালামাল পরিবহনে, যাদের গন্তব্য ছিল লন্ডন ও অন্যত্র। পরে ঢাকার আহ্বানের পরিপ্রেক্ষিতে ব্রিটিশ সরকার নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণে তদন্ত দল প্রেরণ করে। এ নিয়ে দু’দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ে আলাপ-আলোচনাও হয়। পরে পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে দুটো ব্রিটিশ কোম্পানিকে দায়িত্ব দেয়া হয় শাহজালালে যাত্রীদের লাগেজ পরীক্ষা, তল্লাশি ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের জন্য প্রায় শত কোটি টাকার বিনিময়ে। এ পর্যন্ত ঠিকই আছে। তবে দুঃখজনক হলো, এরপরও শাহজালালে চোরাচালান বন্ধ হয়নি। সে অবস্থায় বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ, কাস্টমস, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে শাহজালালসহ বিমানবন্দরগুলোর সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং চোরাচালান প্রতিরোধে আরও সতর্ক ও যতœবান হতে হবে। এর সঙ্গে জড়িত প্রত্যেক কর্মকর্তা-কর্মচারীর সততা ও নৈতিক মানদ- নিশ্চিত করতে হবে। আর তাহলেই বন্ধ হবে চোরাচালান।
×