ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দ্বিতীয় অধ্যায় প্রস্তুতি-১ ॥ সৃজনশীল অনুশীলন;###;সুধীর বরণ মাঝি

অষ্টম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়

প্রকাশিত: ০৬:৪২, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

অষ্টম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়

শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া শিক্ষক, হাইমচর কলেজ, হাইমচর-চাঁদপুর। মোবাইল : ০১৭৯৪৭৭৭৫৩৫ ক) আত্মসমর্পণ দলিলে যৌথবাহিনীর পক্ষে কে স্বাক্ষর করেন? খ) ’গণহত্যার’ধারণাটি ব্যাখ্যা কর। গ) চিত্র-১ বাংলাদেশের ইতিহাসে কোন ঘটনার প্রতিচ্ছবি? ঘ) চিত্র-২ এ উল্লিখিত বাহিনীর কার্যক্রমই কি এ দেশের স্বাধীনতা ত্বরান্বিত করেছিল ? বিশ্লেষণ কর। ক) উত্তর ঃ যৌথবাহিনীর কমান্ডার লে. জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা আত্মসমর্পণ দলিলে যৌথবাহিনীর পক্ষে স্বাক্ষর করেন । খ) উত্তর ঃ গণ অর্থ জনগণ আর হত্যা অর্থ নির্বিচারে খুুন করা। অর্থাৎনির্বিচারে মানুষ বা জনগণকে খুুন করাই হলো’গনহত্যা’। জাতিসংঘের দৃষ্টিতে গণহত্যা হলো একটি জাতি বা ধর্মীয় সম্প্রদায় যা নৃ-তাত্ত্বিক গোষ্ঠীকে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে নিশ্চিহ্ন করার প্রয়াস। ১৯৭১সালের ২৫ মার্চ তৎকলীন পূর্ব পাকিস্তানের নিরীহ মানুষের ওপর পাকিস্তানি হানাদাররা যে নির্মম হত্যাকান্ড ও ধ্বংসযজ্ঞচালায় তাকে গণহত্যা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। গ) উত্তর ঃ চিত্র-১ বাংলাদেশের ইতিহাসে ১৯৭১সালের ২৫ মার্চের গণহত্যার প্রতিচ্ছবি। ১৯৭১সালের ২৫মার্চ মধ্য রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী (সোনাবাহিনী) ঘুমন্ত নিরিহ বাঙালিদের ওপর অত্যাচার ও আক্রমণ চালায়। ভয়াবহ সেই রাতে শিশু, বৃদ্ধ, নারী, পুরুষ, ছাত্র-শিক্ষকদের নির্বিচারে হত্যা করা হয়। শুধু ২৫ মার্চ রাতেই ঢাকা শহরে ৭-৮ হাজার নিরিহ মানুষ অকাতরে প্রাণ হারায়। অন্যদিকে চিত্র-১ এ দ্বিতীয়বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহ গনহত্যার দৃশ্য উঠে এসছে। ১৯৩৯-১৯৪৫ সালব্যাপী এ মহাযুদ্ধে অসংখ্য গণহত্যার ঘটনা ঘটে। যাতে নিরপরাদ বহু মানুষ প্রাণ হারায়। একইভাবে ১৯৭১সালের ২৫মার্চ রাতেওপাকিস্তানি হানাদার বাহিনী (সোনাবাহিনী) ঘুমন্ত নিরিহ বাঙালিদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। ভারী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত পাক বাহিনীর পরিকল্পিত আক্রমণ ঠেকানোর প্রস্তুতি বাঙালির ছিল না। ফলে ঢাকার বিভিন্ন এলাকা পিলখানা ওরাজারবাগ পুলিশ লাইন, বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাসহ সারাদেশে চলে বাঙালি নিধন। ঢাকার বাহিরেও এ আক্রমন ছড়িয়ে পড়ে। পাকিস্তানিদের এই হত্যাযজ্ঞই প্রতিচ্ছবিই চিত্র-১ ফুটে উঠেছে। ঘ) উত্তর ঃ হ্যাঁ, চিত্র-২ এ উল্লিখিত বাহিনীর কার্যক্রমই এ দেশের স্বাধীনতাকে ত্বরান্বিত করেছিল। চিত্র-২ এ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে যৌথবাহিনীর কার্যক্রম বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে ত্বরান্বিত করেছে। ১৯৭১ সালের ২৬মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এই ঘোষণার পর থেকেই মুক্তিযুদ্ধ বাস্তব রূপ লাভ করে।পরবর্তীতে মুক্তিযুদ্ধকে সঠিক নির্দেশনা দেওয়ার লক্ষ্যে ১০এপ্রিল মুজিবনগর সরকার গঠিত হয়। এই সরকার যুদ্ধ পরিচালনার জন্য দেশকে এগারটি সেক্টরে ভাগ করে এবং সেক্টর ভিত্তিক যুদ্ধ পরিকল্পনা করেন। যার ফলে বাঙ্গালি মুক্তিযোদ্ধরা রণাঙ্গনে সাহসের সাথে পাকিস্তানি বাহিনীর মোকাবিলা করতে থাকেন। এই আক্রমণকে আরো গতিশীল করতেই মুজিবনগর সরকার এবং ভারত সরকার ২১নভেম্বর মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী সম্মিলিতভাবে যৌথবাহিনী গঠন করে। যৌথবাহিনীর অধীনে ডিসেম্বর থেকেবাংলাদেশ সীমান্তে আক্রমণ জোড়ালো হয়। মূলত পাকিস্তানি বাহিনীর ভারী অস্ত্রশস্ত্রের বিপরীতে যৌথবাহিনী তার অত্যাধুনিক যুদ্ধ সরঞ্জাম এবং সুনিপুন রণকৌশল ব্যবহার করে। আকাশপথে যৌথবাহিনীর বিমান আক্রমণ শুরু হওয়ার পর স্থলপথে বাঙালি মুক্তিযোদ্ধরা পাকবাহিনীর ওপর গেরিলা হামলা বৃদ্ধি করে। যৌথবাহিনীর এই মুর্হুমুহ আক্রমণ পাকবাহিনীর রণকৌশল এবং মনোবলকে কাঁপিয়ে দেয়। ফলে ডিসেম্বরের শুরু থেকেই বাংলাদেশেরএলাকাগুলো শত্রুমুক্ত হতে থাকে। যৌথবাহিনীর আক্রমণ এবং মুক্তিবাহিনীকে সহায়তার মধ্য দিয়ে আমাদের স্বাধীনতা অর্জন ত্বরান্বিত হয়।
×