ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আমৃত্যু গান গাইতে চাই ॥ সালমা

প্রকাশিত: ০৬:৩৮, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

আমৃত্যু গান গাইতে চাই ॥ সালমা

সব্যসাচী দাশ ‘সে ছিল আসলেই প্রাকৃতিক গায়িকা। আমি সব সময় তার কণ্ঠে বাংলাদেশের গন্ধ পাই। আমি কিছুতেই অবাক হয়নি তার প্রথম পুরস্কারে’ আমমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল, সাল ২০০৬। এনটিভির রিয়েলিটি শো ‘ক্লোজআপ ওয়ান তোমাকেই খুঁজছে বাংলাদেশ’-এর দ্বিতীয় আসরে অসংখ্য দর্শকদের ভোট এবং বিচারকদের রায়ে সেরার মুুকুট পরেছিলেন সেই সময়ের গ্রাম-বাংলার মিষ্টি গানের পাখি মৌসুমি আক্তার সালমা। যার কণ্ঠে এবং সুরে আবহমান বাংলার রূপ-রস দারুণভাবে শোভা পেয়েছে। জন্ম শিল্পীর মতো খুব ছোটবেলা থেকেই গানের সঙ্গে তার সখ্য। দুই হাজার ছয় থেকে ২০১৮ সাল। সময়ের বিচারে এক যুগ সালমার সঙ্গে বাংলার অসংখ্য মানুষের পরিচয়। সম্প্রতি এই গুণী মানুষটির সঙ্গে অতীত বর্তমান এবং ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কথা হয় আনন্দকণ্ঠের সঙ্গে। শুরুতেই কেমন আছেন সালমা? ভাল! আপনি? ভাল। এক সময় অবিরত সারা বাংলার মাটির ঘর থেকে ইট পাথরের দালান ঘর, আপনার গানের সুরে আলোকিত হয়েছে! সেই গানের পাখি সালমা এখন কি করছে? জানতে চাইলে সালমা বলেন, এখনও আমি গানের পথেই হাঁটছি। নতুন নতুন গান করছি, স্টেজ শো করছি, আসলে গানই আমার অন্তপ্রাণ। নতুন গানের খবর বলেন? সালমা, তিনটা গান ইতোমধ্যে শেষ করেছি খুব শীঘ্রই সকলে শুনতে পাবে। গানের টাইটেল? ‘দাগা দিয়া চইলা গেলি’ ‘আউলা প্রেম’ আর একটার টাইটেল এখনও ঠিক হয়নি। এ মাসের মাঝামাঝি ‘আশায় আশায় মনের খাঁচায় রাখছি তোরে পুষে’ এই গানের মিউজিক ভিডিও চলে আসবে। আপনার এই ছোট্ট জীবনে বলতে গেলে পুরোটা সময় কেটেছে গানের সঙ্গে, মাঝখানে ব্যক্তিগত কারণে একটা অল্প সময়ের বিরতি ছিল। এখন আবার সেই সুরের ভুবনে! এক্ষেত্রে আগামী দিনে সালমার পরিকল্পনা? সালমা, দেখেন দেশী-বিদেশী অগণিত শ্রোতার ভোটে একটা একটা ধাপ পার করে আমি ক্লোজআপ ওয়ান হয়েছিলাম। বহু মানুষের অফুরন্ত ভালবাসায় সিক্ত হয়েছি। জীবনের আগামী দিনগুলোতেও তাদের ভালবাসার আশিষ পেতে চাই, পাশাপাশি মানুষের মঙ্গলে নিঃস্বার্থ কাজ করে যেতে চাই। যে মানুষগুলো আজ আমাকে সালমা বানিয়েছে তাদের জন্য কিছু করে যেতে চাই। যে কারণে, গানের পাশাপাশি আইন পেশার উচ্চতর ডিগ্রী ব্যারিস্টারি পড়ছি, এই আশা ভালবাসার মধ্যেই আমার আগামী দিনের জীবন। ব্যক্তিগত সালমার জীবন বা সংসার? উত্তর, আমার সবকিছুই তো দর্শক-শ্রোতা জানে। আমার ব্যক্তিগত বলে তো কিছুই নেই। তবে হ্যাঁ, একটা সময় যখন চিন্তা আসবে তখন বাবা-মা সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে একান্ত ভাবনা হলো, যে মানুষটা আমার সুরকে ভালবাসবে, আমাকে মানুষ হিসেবে মূল্যায়ন করবে, বিপদে কখনও হাত ছেড়ে দেবে না, যার আশীর্বাদ সব সময় ছায়ার মতো থাকবে। কখনও এমন মানুষের যদি দেখা পাই তবেই ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে আবার আমি ভাবব... লোকগীতি, লালনগীতি এর বাইরে যেমন, ম্যালোডিয়াস, আধুনিক গান করার যাওয়ার ইচ্ছা? সালমা, আমি তো লোকগীতি, লালনগীতির বাইরে গেল বছর বেশ কয়েকটা গান করেছি। অবশ্য তখন অনেক খবর হয়েছে, সালমা চেনা পথের বাইরে কেন? দেখেন, বাউল গান আমার রক্তে-মাংসে মিশে আছে। আমৃত্যু আমি এই গান গেয়ে জেতে চাই। কিন্তু এর বাইরে যারা অন্য গানের শ্রোতা তারা আমার গান শুনবেন না তা তো হতে পারে না। সুতরাং শিল্পী হিসেবে সব ধরনের গান গেয়ে যেতে চাই। আচ্ছা, আপনার পরে আমাদের সুরের ভুবনে আর একটা সালমা কেন পেলাম না? দেখেন, এ বিষয়টা যারা আমাদের ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধি তারা ভাল বলতে পারবেন। এক সময় ‘ক্লোজআপ ওয়ান তোমাকেই খঁজছে বাংলাদেশ’ আমাদের মতো বেশ কয়েকজন শিল্পীর উঠে আসার ভাল প্লাটফর্ম ছিল। কিন্তু ওই প্রোগ্রামটা যদি আরও কয়েকটা বছর হতো তাহলে কিন্তু আর জনপ্রিয় থাকত না। মনোটনাস বা একঘেয়েমি হয়ে যেত। দরকার ছিল নতুন উদ্যোগ, নতুন প্লাটফর্ম। তাহলে হয়ত, আমরা আরও কয়েকটা সালমা পেতাম! ¯েœহা কেমন আছে? ও ভাল আছে। ওর এখন বয়স কত? ছয় বছর। স্কুলে যায়? ও তো আড়াই বছর বয়স থেকেই স্কুলে যায়। ওকে নিয়ে কি প্ল্যান? ও তো ছোট! এখনও ওরকম কোন প্ল্যান করিনি। তবে ওর মেধা যেদিকে ফোকাস করবে সে দিকেই অগ্রসর হতে সাহায্য করব। ও এখন কোথায়? বাবার কাছে? বাবার কাছেই থাকে? না ওর যখন যেখানে ভাল লাগে! ওর বাবার সঙ্গে ডিভোর্সের সময় বলেছি, তোমার কাছে আমার একটাই অনুরোধ; আমার মেয়েকে তুমি কখনও কষ্ট দিয়ো না। ওর বাবা ওকে খুব ভালবাসে, ন্সেহাও বাবাকে খুব ভালবাসে। দেখেন সন্তান তো আর কোন ব্যবহারিক পণ্য নয় যা নিয়ে কোর্ট-কাছারি করব। ওর মানসিক স্থিতিশীলতা বিবেচনা করেই আমাদের দু’জনার কাছে ওকে রাখি, যখন যেখানে ওর ভাল লাগে তখন সেখানেই থাকে। তবে যখন দূরে থাকে তখন ভীষণ কষ্ট হয়! আপনার এবং ন্সেহার বাবার সঙ্গে কোন দেখা সাক্ষাত কিংবা কোন দ্বন্দ্ব? ডিভোর্সের পর তার সঙ্গে আমার আর দেখা হয় নাই। আর কোন দিন দেখা করার ইচ্ছেও নেই। আর দ্বন্দ্ব? না তার সঙ্গে আমার কোন দ্বন্দ্ব নেই, সে আমার সন্তানের বাবা। মাত্র ষোলো বছর বয়েসে প্রেম-ভালবাসার কোন কিছু না বুঝেই তাকে বিয়ে করে ছিলাম। ষোলো বছর বয়সে একটা মানুষ কি বুঝতে শেখে, কতটুকু বোঝে। সেটা নিশ্চয়ই সকলের বোধগম্য! কিন্তু আমি অবাক হই তার মতো একজন বিচক্ষণ মানুষ আমি এবং আমার অবুঝ মেয়েকে বুঝতে পারল না! এটাই আমার দুঃখ। যাই হোক আগামী দিনে সব কিছু উতরে গানের সঙ্গেই জীবন অতিবাহিত করতে চাই। আমার ভক্ত-শ্রোতার কাছে গানের পাখি সালমা হয়ে থাকতে চাই। ভাল থাকবেন। আপনিও ভাল থাকবেন। ছবি : আরিফ আহমেদ
×