ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সাকিবের অভাব অপূরণীয়!

প্রকাশিত: ০৬:২২, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

সাকিবের অভাব অপূরণীয়!

মোঃ মামুন রশীদ ॥ অভিষেক হওয়ার পর থেকে দেশের মাটিতে কোন টেস্ট মিস করেননি সাকিব আল হাসান। কিন্তু এবার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজেই অনুপস্থিত তিনি। চট্টগ্রাম টেস্টে খেলেননি, যার অভাবটা প্রতি মুহূর্তেই অনুভব করেছে দল। বিশ্বসেরা এ অলরাউন্ডার ইনজুরির কারণে খেলতে পারবেন না, তাই দলে টানা হয়েছিল বাড়তি স্পিনার। তবে ব্যাটসম্যানদের দৃঢ়তায় সাগরিকা টেস্ট ড্র হয়েছে। এবার মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে আজ শুরু সিরিজ নির্ধারণী দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট। উইকেটের পরিস্থিতি দেখে উভয় দলের অধিনায়কই দাবি করেছেন এখানে স্পিনাররা রাজত্ব করবেন। উভয় দলেই আছেন বেশ কয়েকজন স্বীকৃত এবং ভালমানের স্পিনার। তবে বাংলাদেশ দল তাদের অন্যতম স্পিন শক্তি বাঁহাতি সাকিবকে পাচ্ছে না এবারও। তার অনুপস্থিতিতে নিশ্চিতভাবেই বড় রকমের সমস্যায় পড়বে স্বাগতিক দল। অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদও বুধবার ম্যাচ পূর্ববর্তী সংবাদ সম্মেলনে দাবি করলেন সাকিবের অভাব পূরণ করা চ্যালেঞ্জিং দলের জন্য। দেশের হোম অব ক্রিকেট মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে এখন পর্যন্ত ১৬ টেস্ট অনুষ্ঠিত হয়েছে। সব টেস্টেই খেলেছেন সাকিব আল হাসান। এই ভেন্যুতে ৩ টেস্ট জিতেছে দল এবং ৩টি করেছে ড্র। তিনটি জয়ের ম্যাচেই সাকিব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন বল হাতে। এ বাঁহাতি স্পিনার ২০১৪ সালের অক্টোবরে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে প্রথমবার জয় পেয়েছিল টেস্টে। সেই ম্যাচে সাকিব প্রথম ইনিংসে ৬টি এবং দ্বিতীয় ইনিংসে ১টি উইকেট শিকার করেছিলেন। ২০১৬ সালের অক্টোবরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয়ের ম্যাচে দুই ইনিংসে ১ ও ৪ উইকেট নিয়েছিলেন সাকিব। সর্বশেষ গত বছর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয়ের ম্যাচে উভয় ইনিংসে ৫টি করে ম্যাচে ১০ উইকেট নিয়েছিলেন। বাংলাদেশের স্পিন আক্রমণের অন্যতম শক্তি সাকিব। ব্যাটে-বলে তিনি অলরাউন্ডার হলেও স্পিন বিভাগের নেতৃত্বে থাকেন তিনিই। উল্টো তার সঙ্গী হিসেবে জেনুইন স্পিনারই বার বার বদলেছে। দেশের পক্ষে সর্বাধিক ৫১ টেস্টে ১৮৮ উইকেট তার দখলে। আর মিরপুরে তিনি একেবারেই অপ্রতিরোধ্য। ১৬ টেস্টের সব খেলে তিনি শিকার করেছেন ৫৯ উইকেট। ক্যারিয়ারে ১৭ বার ইনিংসে ৫ উইকেট বা তার বেশি এবং দুইবার ম্যাচে ১০ উইকেট শিকার করেছেন সাকিব। এর মধ্যে মিরপুরেই তিনি ৭ বার ইনিংসে ৫ উইকেট এবং ১ বার ম্যাচে ১০ উইকেট নিয়েছেন। ক্যারিয়ারের বোলিং গড়ের (৩২.৩৭) চেয়ে শুধু মিরপুরের পরিসংখ্যানে সাকিবের বোলিং গড়টা (৩১.৭৬) বেশ সমৃদ্ধ। সেই সাকিব শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আজ নেই মিরপুরে সিরিজ নির্ধারণী টেস্টে। এ বিষয়ে অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে গেলে সাকিবের অভাব পূরণ করা অবশ্যই চ্যালেঞ্জিং। ও আমাদের অন্যতম চালিকাশক্তি। ওর কারণে দলের ভারসাম্য থাকে। কারণ সে একইসঙ্গে বিশ্বমানের ব্যাটসম্যান ও বিশ্বমানের বোলার। সব দিক থেকে পরিপূর্ণ একজন খেলোয়াড়। তারপরও আমাদের যে স্পিন আক্রমণ আছে, তাদের উপর আমার বিশ্বাস আছে, হয়ত বা তার অভাবটা পূরণ করতে পারব। সাকিবের চোট নিয়ে ফিজিও কাজ করছে। আশা করছি সে শীঘ্রই ফিরে আসবে।’ সাকিবের অভাব পূরণের জন্য দলে আছেন অভিজ্ঞ বাঁহাতি স্পিনার আব্দুর রাজ্জাক ও তাইজুল ইসলাম। বোলিংটাকে সামাল দেয়া গেলেও যেতে পারে, কিন্তু সাকিবের ব্যাটিংয়ের সঙ্গে তাদের কারও পক্ষে খাপ খাওয়ানো সম্ভবপর নয়। মিরপুরে সর্বাধিক টেস্ট রানের মালিক সাকিব। তিনি এই ভেন্যুতে ৪৪.০৩ গড়ে ১ সেঞ্চুরি ও ৮ হাফসেঞ্চুরিসহ করেছেন ১২৩৩ রান। চট্টগ্রাম টেস্টেও সাকিবকে ছাড়া খেলেছে বাংলাদেশ দল। ব্যাটিংটা দুর্দান্ত ছিল দলের। সেদিক থেকে হয়তো সাকিবের অভাবটা বোঝা যাবে না। কিন্তু স্পিন বোলিংয়ের পুরোধা সাকিবের বিকল্প কী পাওয়া সম্ভব! এ বাঁহাতি স্পিনার অনেকবারই প্রতিপক্ষের ত্রাস হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন এবং সেটা নিয়মিতভাবেই। যে কারণে সাগরিকা টেস্টে লঙ্কানরা ৭১৩ রানের বিশাল পাহাড় গড়েছিল, অনেকেই তখন সাকিবের অনুপস্থিতিত হাড়ে হাড়ে অনুভব করেছেন। হয় তো সাকিব থাকলে এত বেশি রান করতে পারত না লঙ্কানরা। তবে সেটি ছিল ব্যাটিং স্বর্গ। এবার মিরপুরে রাখা হচ্ছে স্পিন উইকেট। যে বিষয়ে শ্রীলঙ্কা অধিনায়ক দিনেশ চান্দিমাল এবং বাংলাদেশ অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহও নিশ্চিত করেছেন যে মিরপুর টেস্টে স্পিনাররাই বড় ভূমিকা রাখবে। লঙ্কান স্কোয়াডে অভিজ্ঞ ও নির্ভরযোগ্য রঙ্গনা হেরাথ আছেন। কিন্তু বাংলাদেশের হয়ে নেই সাকিব। পার্থক্যটা হয় তো এখানেই গড়ে উঠবে। সাকিব ৯ টেস্ট খেলুড়ে দেশের বিপক্ষে ৫ উইকেট শিকারী বোলারের কীর্তি গড়া ক্রিকেটার। বিরল সেই রেকর্ডটি নেই অনেক কিংবদন্তি বোলারেরও। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেও ৭ টেস্টে ২৯ উইকেট শিকার করেছেন তিনি। ২ বার আছে ৫ উইকেট দখলের কীর্তি। তাই সাকিবকে এই টেস্টে বেশ ভালভাবেই মনে পড়বে বাংলাদেশ দলের।
×