ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সিরিজ ফয়সালার টেস্ট শুরু আজ মিরপুরে

প্রকাশিত: ০৬:২১, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

সিরিজ ফয়সালার টেস্ট শুরু আজ মিরপুরে

মিথুন আশরাফ ॥ একটা সময় ছিল, যখন চট্টগ্রামে খেলা হলেই ‘লাকি ভেন্যু’ কথাটি উচ্চারিত হতো। এখন যেন সেই কথাটি মিরপুরের দিকে ধাবিত হয়ে গেছে। মিরপুরে টেস্ট খেলা মানেই যে এখন জয় মিলে যাওয়া! সর্বশেষ দুই টেস্টেতো তাই দেখা গেছে। ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার মতো টেস্ট শক্তির দলকে সহজেই হারিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামেই তো ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়াকে কুপোকাত করেছে বাংলাদেশ। এবার কী তাহলে শ্রীলঙ্কার পালা? আজ থেকে মিরপুরে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দ্বিতীয় ও সিরিজের শেষ টেস্ট খেলতে নামবে বাংলাদেশ। যে টেস্টটি আবার সিরিজ ফয়াসালার ম্যাচে পরিণত হয়ে গেছে। চট্টগ্রামে হওয়া প্রথম টেস্ট ড্র হয়েছে। আর তাই আজ শুরু হতে যাওয়া দ্বিতীয় টেস্টে যে দল জিতবে, ১-০ ব্যবধানে সিরিজ তারাই জিতে নেবে। আর এই টেস্টও যদি ড্র হয়, তাহলে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ ড্র হয়ে যাবে। এই দ্বিতীয় টেস্টটিতে অংশ নিতে দুই দলই শেষ মুহূর্তে নিজেদের ঝালিয়ে নিয়েছেন। বুধবার সকালে দুই দলই অনুশীলন করেছে। দুই দলই উইকেট ভাল করে দেখে নিয়েছেন। আসল খেলা যে উইকেটই দেখাবে। চট্টগ্রামের উইকেটে মনে করা হয়েছিল, টার্ন থাকবে। তাই দুই দলই তিনজন করে স্পিনার নিয়ে খেলেছে। কিন্তু দেখা গেছে, ব্যাটসম্যানরাই সব সুবিধা নিয়ে গেছেন। উইকেটে শুধু রানই হতে দেখা গেছে। মিরপুরের উইকেটে অবশ্য সেইরকম হওয়ার সম্ভাবনা কমই বলা যায়। এখানে হওয়া শেষ দুটি টেস্টে তাই দেখা গেছে। স্পিনাররা সব সুবিধা পেয়েছেন। তাতে করে যে দলের ব্যাটসম্যানরা ভাল ব্যাটিং করেছেন, তারাই জয়ের হাসি হেসেছেন। বাংলাদেশ দলের ব্যাটসম্যানরা প্রতিপক্ষ দলের ব্যাটসম্যানদের চেয়ে ভাল ব্যাটিং করেছিলেন এবং স্পিনাররা মিলে আঘাত হেনেছেন, তাতে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার মতো দল হেরেছে। এবার তাহলে শ্রীলঙ্কার পালা? চট্টগ্রাম টেস্ট থেকে অবশ্য একটি বিষয় স্পষ্ট, উইকেট যেমনই হোক; শ্রীলঙ্কাকে পুরোপুরি বিপদে ফেলা মুশকিল। শ্রীলঙ্কাকে উপমহাদেশের দল। উপমহাদেশের মাটিতেই খেলা। তাছাড়া বাংলাদেশের যে শক্তি আছে। শ্রীলঙ্কারও সেই শক্তি আছে। আবার শ্রীলঙ্কার কোচ চন্দ্রিকা হাতুরাসিংহে। যিনি বাংলাদেশের উইকেট, ব্যাটসম্যান-বোলারদের শক্তি-দুর্বলতা সম্পর্কে ভাল করেই জানেন। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল, ইমরুল কায়েস, মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহীম, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, লিটন কুমার দাসরা যদি ভাল করেন। উইকেট যদি ব্যাটসম্যানদের সুরে কথা বলে। তাহলে শ্রীলঙ্কার দিমুথ করুনারত্মে, কুশল মেন্ডিস, ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা, রোশেন সিলভা, দিনেশ চান্দিমাল, নিরোশান ডিকভেলা রয়েছেন। আর যদি উইকেট বোলারদের দিকে ঝুকে, তাহলে বাংলাদেশের ‘কাটার মাস্টার’ মুস্তাফিজুর রহমান, স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ, তাইজুল ইসলামের সঙ্গে অভিজ্ঞ আব্দুর রাজ্জাক অথবা তরুণ নাঈম হাসান আছেন। শ্রীলঙ্কারও পাল্লা দেয়ার মতো বোলার রয়েছেন। অভিজ্ঞ রঙ্গনা হেরাথ আছেন। যিনি স্পিনবান্ধব উইকেট পেলে চরম বিধ্বংসী হয়ে ওঠেন। তাছাড়া স্পিনার লাকশান সান্দাকান রয়েছেন। দিলরুয়ান পেরেরাও আছেন। সঙ্গে পেসার সুরঙ্গ লাকমাল রয়েছেন। তাতেই বোঝা যাচ্ছে, উইকেট যেমনই হোক; শ্রীলঙ্কাও কম নয়। এরমধ্য থেকেই যদি এখন শ্রীলঙ্কাকে বিপদে ফেলে জয় তুলে নেয়া যায়, তাহলে বিশাল প্রাপ্তি মিলবে। সিরিজওতো জেতা যাবে। শ্রীলঙ্কার মাটিতে টেস্টে লঙ্কানদের হারানো গেছে। এখন পর্যন্ত শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১৯ টেস্ট খেলে যে একটিমাত্র টেস্টে জেতা গেছে, সেটি শ্রীলঙ্কার মাটিতেই। গত বছর মার্চে বাংলাদেশের শততম টেস্টে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়েছে বাংলাদেশ। এছাড়া আর কোন জয় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মিলেনি। বাংলাদেশের মাটিতে এখন পর্যন্ত শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৭ টেস্ট খেলে দুটিতে ড্র করা গেছে। বাকি ৫টিতেই বড় ব্যবধানে হার হয়েছে। ড্র করা দুটি ম্যাচই চট্টগ্রামে মিলেছে। দেশের মাটিতে সর্বশেষ দুটি ম্যাচেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ড্র করা গেছে। ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে শেষ ইনিংসে মুমিনুল হকের সেঞ্চুরিতেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট ড্র মিলেছে। এবার দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরি করে বাংলাদেশকে ড্র এনে দিয়েছেন মুমিনুল। যেহেতু দেশের মাটিতে এখন পর্যন্ত শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জয় মিলেনি, আজ শুরু হতে যাওয়া টেস্টে সেই সুযোগ আছে। দলের নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহীমতো মঙ্গলবারই বলে দিয়েছেন, ‘চট্টগ্রামের শেষ টেস্ট থেকে আমরা অনেক ইতিবাচক দিক নিয়ে আসতে পেরেছি। আমাদের অতীত পরিসংখ্যানে বেশ কিছু টেস্ট আমরা এই পজিশন থেকে হেরেছি। এটা আমাদের অনেক বড় প্রাপ্তি, আমরা টেস্ট ম্যাচটি ড্র করেছি। এটা আমাদের খুবই দরকার ছিল। এখানে লিটন ও মুমিনুলের জুটিটা অসাধারণ ছিল। আমি মনে করি চট্টগ্রামের টেস্টের পর টিম আরও উৎসাহ পাবে। আমরা হয় তো খুব বেশি ভাল বোলিং করতে পারিনি। তারপরও আমি বলব আমাদের বোলাররা ক্যাপাবল ছিল। যেহেতু উইকেটে অনেক রান হয়েছে, আমাদের ব্যাটসম্যানরা সেই সুযোগটি নিয়েছে। সবমিলিয়ে চট্টগ্রামে দারুণ টেস্ট হয়েছে। আমরা মুখিয়ে আছি ঢাকাতে ভাল করার বিষয়ে। আমাদের দারুণ সুযোগ আছে ১-০ ব্যবধানে টেস্ট সিরিজ জিতে নেয়ার।’ এজন্য বাংলাদেশকে আজ শুরু হতে যাওয়া টেস্টে জিততেই হবে। জিতলে হলে ব্যাটিং-বোলিংটা করতে হবে দুর্দান্ত। চট্টগ্রাম টেস্টে প্রথম ইনিংসে ৫১৩ রান করার পর মনে হয়েছিল, শ্রীলঙ্কাকে বিপাকে ফেলা যাবে। কিন্তু শ্রীলঙ্কা প্রথম ইনিংসে আরও ২০০ রান বেশি করে দেখিয়েছে। ৭১৩ রান করেছে। এরপর দ্বিতীয় ইনিংসে যখন বাংলাদেশ ব্যাট করতে নামে চতুর্থদিন শেষ হওয়ার আগে যখন তামিম, ইমরুল ও মুশফিককে হারিয়ে ফেলে, বিপদ সংকেত দেখা দেয়। কিন্তু পঞ্চম ও শেষদিনে মুমিনুল ও লিটন মিলে এত সুন্দর ব্যাটিং করেছেন, ৫ উইকেটে ৩০৭ রান করে ফেলে বাংলাদেশ। যখন শ্রীলঙ্কা বুঝে গেছে ম্যাচ থেকে আর ফল বের করে আনা সম্ভব নয়, ১৭ ওভার বাকি থাকতেই ম্যাচ শেষ করে দেয়ার প্রস্তাব দেয়। তা বাংলাদেশ মেনে নেয়। ম্যাচ ড্র হয়। কঠিন পরিস্থিতিতে পড়ে বাংলাদেশ বরাবরই ভেঙ্গে পড়ে। কিন্তু এবার ব্যাটসম্যানরা দেখিয়েছেন, এই পরিস্থিতি থেকেও নিজেদের গুছিয়ে নিতে সক্ষম তারা। আর তাইতো হারের শঙ্কা জাগা ম্যাচ থেকে ড্র ফল বের করে আনা সম্ভব হয়েছে। তাতে আত্মবিশ্বাসও বেড়ে গেছে। এই আত্মবিশ্বাসই এখন মিরপুর টেস্টে পুঁজি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আজ সিরিজ ফয়াসাল টেস্ট শুরু হচ্ছে। এ টেস্টে এখন বাংলাদেশ জয় তুলে নিতে পারলেই হয়। তাহলে সিরিজ ১-০ ব্যবধানে জিতে যাবে।
×