ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

দুদিনে এসেছে চার শতাধিক

প্রত্যাবাসন চুক্তির পরও ১০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

প্রত্যাবাসন চুক্তির পরও ১০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ

মোয়াজ্জেমুল হক/এইচএম এরশাদ ॥ মিয়ানমার থেকে আসতে বাধা নেই। আর বাংলাদেশে প্রবেশেও কোন বাধা নেই। ফলে গত ৫ মাসেরও অধিক সময়ে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে লাখ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে, ওরা এখনও আসছে। বুধবার পর্যন্ত দুদিনে ৪ শতাধিক রোহিঙ্গা টেকনাফ উপকূল দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। রোহিঙ্গাদের পালিয়ে আসা এবং প্রত্যাবাসন নিয়ে এ পর্যন্ত বিশ্বচাপে বহু আলাপ আলোচনা, দিক নির্দেশনাসহ নানা সিদ্ধান্ত হয়েছে। এমনকি বাংলাদেশ-মিয়ানমারের সঙ্গে প্রত্যাবাসন প্রশ্নে চুক্তিও হয়েছে। কিন্তু সবই ব্যর্থ। জাতিসংঘ আবারও রোহিঙ্গা ইস্যুতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। জাতিসংঘের পক্ষ থেকে আশঙ্কা ব্যক্ত করে বলা হয়েছে এ সমস্যা আরও বাড়তে পারে। সংস্থার মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান বলেছেন, রোহিঙ্গা ইস্যুর সুষ্ঠু সমাধান না হলে আঞ্চলিক সংঘাত বাড়তে পারে। মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মূলত আগ্রহী নয় বলেই তাদের জন্য পরিবেশ সৃষ্টি করছে না। আর এতে করে রোহিঙ্গারা সেখানে থাকতে এবং যারা পালিয়ে এসেছে তারা ফিরে যেতে ভরসা পাচ্ছে না। এ কারণেই ওরা এখনও দল বেঁধে আসছে। মঙ্গলবার ভোররাতে টেকনাফের বাহারছড়ার সমুদ্র সৈকত দিয়ে ইঞ্জিনচালিত নৌকাযোগে দুই শতাধিক, হারিয়াখালির কেন্দ্র দিয়ে ৯৩ এবং বুধবার শামলাপুর ক্যাম্পে এসেছে আরও ৯০ জন। আসার পথে ইসমাইল (৮) নামের এক রোহিঙ্গা শিশুর মৃত্যু হয়েছে। সে মংডুর বুচিদংয়ের মোঃ রফিকের পুত্র বলে জানা গেছে। গেল বছরের ২৩ নবেম্বর মিয়ানমারের সঙ্গে-বাংলাদেশের সমঝোতা স্মারক হয়েছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রশ্নে। এ স্মারক চুক্তি হওয়ার পর থেকে বুধবার পর্যন্ত নতুন ১০ সহস্রাধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। এদের সকলের ঠাঁই হয়েছে উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। বাহারছড়ার ইউপি সদস্য মোঃ ইলিয়াস জানান, মঙ্গলবার ভোরে বাহারছড়ার নোয়াখালিয়াপাড়া সমুদ্র সৈকত দিয়ে ২শ’ জনের বেশি রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করার পর দলে দলে বিভক্ত হয়ে উখিয়া ও টেকনাফের আশ্রয় ক্যাম্পে চলে যায়। এরা নিবন্ধিতও হয়নি। ইসমাইল নামের যে শিশুটি মারা গেছে তাকে শিলখালিতে দাফন করা হয়েছে। টেকনাফে সাবরাং হারিয়াখালী ত্রাণ কেন্দ্রে দায়িত্ব পালনকারী জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি ও উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ দেলোয়ার হোসেন জানান, নাফ নদীর সীমান্তে বিজিবি কড়া সতর্ক অবস্থায় থাকায় রোহিঙ্গারা এখন বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে রাতের আঁধারে নৌকায় করে টেকনাফে আসছে। এসব রোহিঙ্গাকে বিভিন্ন এলাকায় বিজিবির সদস্যরা পেয়ে প্রথমে কিছুক্ষণ একটি জায়গায় আটকে রাখে। পরে তাদের সঙ্গে কোন ধরনের মাদক, অস্ত্র ও অবৈধ মালামাল আছে কি না তল্লাশি করে সেনাবাহিনীর হারিয়াখালী ত্রাণ কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেয়া হয়। তিনি জানান, চাল, ডাল, সুজি, চিনি, তেল, লবণ ইত্যাদি ত্রাণ দিয়ে গাড়িতে করে ২২ পরিবারের ৯৩ জন রোহিঙ্গাকে টেকনাফের নয়াপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেয়া হয়। পাচারকালে নারী দালালসহ ২ রোহিঙ্গা যুবতী আটক ॥ উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্প থেকে অন্যত্র পাচারকালে নারী দালালসহ ২ রোহিঙ্গা যুবতীকে আটক করে পুলিশে দিয়েছে স্থানীয় জনতা। আটক দালাল মিনু আরা আক্তার কক্সবাজার পৌরসভার বিজিবি ক্যাম্প হাঙ্গরপাড়ার বাসিন্দা আলী আহমদের মেয়ে। ২ রোহিঙ্গা যুবতী ফারেসা আক্তার ও দিলসান বেগম উভয় আপন বোন এবং উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পের ৩ ব্লকের বাসিন্দা নুরুল আলমের মেয়ে বলে পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তি দিয়েছে। বুধবার দুপুরে উখিয়া সোনারপাড়া বাজার থেকে তাদের আটক করা হয়। জাতিসংঘের আবারও উদ্বেগ ॥ জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান আবারও বলেছেন, রোহিঙ্গা ইস্যুর সুষ্ঠু সমাধান না হলে আঞ্চলিক সংঘাত বাড়তে পারে।
×