ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ফিলিপিন্সের রিজল ব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলার সিদ্ধান্ত

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

ফিলিপিন্সের রিজল ব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলার সিদ্ধান্ত

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনার ২ বছরের মাথায় ফিলিপিন্সের রিজল কমার্শিয়াল ব্যাংকের (আরসিবিসি) বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে ফৌজদারি মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বুধবার সচিবালয়ে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নে মামলার সিদ্ধান্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। পরে বাংলাদেশ ব্যাংকে সংবাদ সম্মেলন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গবর্নর আবু হেনা মোহাঃ রাজী হাসান বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আইনজীবী আজমালুল হোসেন কিউসির নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল সম্প্রতি ফিলিপিন্স সফর করে এসেছেন। যে প্রতিবেদন তারা দিয়েছেন, তার ভিত্তিতেই মামলা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আগামী দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে নিউইয়র্কে এই মামলা করা হবে। মামলার বাদী হিসেবে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ও সুইফট কর্তৃপক্ষও থাকবে। জানা গেছে, ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারির শুরুতে সুইফট মেসেজিং সিস্টেমের মাধ্যমে ৩৫টি ভুয়া বার্তা পাঠিয়ে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে রক্ষিত বাংলাদেশের এক বিলিয়ন ডলার সরিয়ে ফেলার চেষ্টা হয়। এর মধ্যে পাঁচটি মেসেজে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার যায় ফিলিপিন্সের আরসিবিসিতে। আর আরেক আদেশে শ্রীলঙ্কায় পাঠানো হয় ২০ লাখ ডলার। শ্রীলঙ্কায় পাঠানো অর্থ ওই এ্যাকাউন্টে জমা হওয়া শেষ পর্যন্ত আটকানো গেলেও ফিলিপিন্সের ব্যাংকে যাওয়া অর্থের বেশিরভাগটাই স্থানীয় মুদ্রায় বদলে জুয়ার টেবিল ঘুরে চলে যায় নাগালের বাইরে। রিজল ব্যাংকের একটি শাখা হয়ে বেরিয়ে যাওয়া ৮ কোটি ১০ লাখ ডলারের মধ্যে এক ক্যাসিনো মালিকের ফেরত দেয়া দেড় কোটি ডলার বাংলাদেশকে বুঝিয়ে দিয়েছে ফিলিপিন্স। এ ঘটনায় রিজল ব্যাংককে ২০ কোটি ডলার জরিমানাও করেছে ফিলিপিন্সের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। জরিমানার ওই অর্থ তারা পরিশোধ করলেও বাংলাদেশকে বাকি অর্থ ফেরতের দায় নিতে তারা রাজি নয়। ওই সময়ই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে রিজার্ভ চুরির ঘটনায় ঢাকায় মামলা করা হয়। বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডি দুই বছরেও আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে পারেনি। পুরো বিশ্বে আলোচিত এই সাইবার চুরির পেছনে কারা ছিল- তা জানা যায়নি এখনও। সংবাদ সম্মেলনে ডেপুটি গবর্নর রাজী হাসান বলেন, ফিলিপিন্সে যাওয়া ৮ কোটি ১০ লাখ ডলারের মধ্যে ৬ কোটি ৭০ লাখ বেরিয়ে কোথায় গেছে তার ধারণা পাওয়া গেলেও প্রায় দেড় কোটি ডলারের বিষয়ে কোন হদিস পাওয়া যায়নি। আরসিবিসির উপর থেকে নিচ পর্যন্ত অনেকে জড়িত। এ কারণেই আমরা ফৌজদারি মামলা করতে যাচ্ছি। অবশ্য মামলা করার আগে আরসিবিসি কোন প্রস্তাব নিয়ে এলে বাংলাদেশ তা ভেবে দেখবে বলে জানান তিনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়োগকৃত আইনজীবী আজমালুল হোসেন কিউসি বলেন, আমাদের প্রথম থেকেই অবস্থান ছিল যে আরসিবিসিই মানি লন্ডারিং করেছে। একটি কোম্পানির কর্মীদের জ্ঞানই কর্পোরেট জ্ঞান। ৫ ফেব্রুয়ারির (২০১৬) ঘটনাই যদি দেখেন, ২৭-২৮টি লেনদেন একদিনেই হয়েছে, যেদিন টাকাটা ওখান গিয়ে পৌঁছায়। এতবড় অঙ্কের লেনদেনগুলো সাধারণত সন্দেহজনক লেনদেন হিসেবে রি পোর্ট করতে হয়। টাকাটা ফ্রিজ (জব্দ) করে রাখতে হয়। আরসিবিসি কিন্তু প্রথম দিনই টাকাটা ফ্রিজ করে দিয়েছিল। তবে এরপরে এক ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে টাকাগুলো বিতরণ করে দেয়। এ থেকে বোঝা যায় আরসিবিসির ছোট থেকে বড় অনেক কর্মকর্তাই এর সঙ্গে জড়িত। এই থেকে আমাদের অবস্থান ছিল যে মানি লন্ডারিং ওরাই করেছে। সুতরাং আরসিবির বিরুদ্ধে একটি সিভিল মামলা তো করতেই পারি। আগামী দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে নিউইয়র্কের আদালতে মামলা করার সংকল্প ব্যক্ত করে আজমালুল কিউসি বলেন, আমরা ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্ক ও সুইফটকে প্রস্তাব দিয়েছি। ওরা রাজি থাকলে আমরা তিন প্রতিষ্ঠান একসঙ্গে আরসিবিসির বিরুদ্ধে মামলা করতে পারি। আর ওরা যদি রাজি না থাকে, তবুও আমরা আরসিবিসিকে বিবাদী করে মামলা করব। আমরা অপেক্ষায় আছি আরসিবিসি কোন প্রস্তাব দেয় কি না। তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা করছিলাম আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে টাকা উদ্ধার করা যায় কিনা। তবে যেহেতু মামলা করার সময় পার হয়ে যাচ্ছে তাই এর আগেই আমাদের মামলা করতে হবে। নিউইয়র্কের আদালতের নিয়ম অনুযায়ী কোন ঘটানর তিন বছরের মধ্যে মামলা করতে হয়। আমাদের রির্জাভ চুরির ঘটনা দুই বছর পার হয়েছে। রির্জাভ চুরির বিষয়ে সাবেক গবর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের তদন্ত প্রতিবেদ আদালতে গ্রহণযোগ্য দলিল (এডমিসএবল এ্যাভিডেন্স) নয় উল্লেখ করে কিউসি বলেন, আমাদের কাছে এখন কিছু এডমিসএবল এ্যাভিডেন্স এসেছে, তা নিয়েই আমরা মামলা করব। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) পরামর্শক দেবপ্রসাব দেবনাথ, মহাব্যবস্থাপক জাকির হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এদিকে, বুধবার সচিবালয়ে সরকারী ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, রিজার্ভ চুরির বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মামলাটি হবে নিউইয়ার্কে। মামলায় ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক আমাদের পক্ষে কাজ করবে। রিজার্ভ চুরির বিষয়ে ড. ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখনও প্রতিবেদন প্রকাশ করা যাচ্ছে না। দেখা যাক কবে কি করা যায়।
×