ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

এক সপ্তাহ বয়সী মেলা ৭২৯ নতুন বই, এগিয়ে কবিতা

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

এক সপ্তাহ বয়সী মেলা ৭২৯ নতুন বই, এগিয়ে কবিতা

মোরসালিন মিজান ॥ শুরু হতে না হতেই ৭ দিন! গত বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছিল মেলার। আজ আরেক বৃহস্পতিবার। ইতোমধ্যে গত হয়েছে এক সপ্তাহ। সারা বছর যারা বই প্রকাশ করেন সেই প্রকাশকরা একসঙ্গে অনেক নতুন বই নিয়ে মেলায় প্রবেশ করেছিলেন। এর পরও ব্যস্ত ছাপাখানা। বাকি বইয়ের কাজ চলছে। প্রতিদিনই আসছে নতুন নতুন বই। গত এক সপ্তাহে সংখ্যাটা কী দাঁড়াল? নতুন বইয়ের সংখ্যা কত? সঠিক তথ্যটি পাওয়া খুব মুশকিল। তবে মেলার আয়োজক বাংলা একাডেমির তথ্যকেন্দ্রে প্রতিদিন কিছু নতুন বইয়ের কপি জমা দেন প্রকাশকরা। সেই পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গতকাল পর্যন্ত মেলায় এসেছে ৭২৯টি নতুন বই। এসব বইয়ের মধ্যে রয়েছে গল্প কবিতা উপন্যাস। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক রচনা, ইতিহাসগ্রন্থ আছে। আছে অনুবাদ সাহিত্য, সাইন্স ফিকশনসহ নানা বিষয়ে লেখা বই। সংখ্যায় বেশি কবিতা। এক সপ্তাহে মেলায় কাব্যগ্রন্থ এসেছে ২১০টি। এর পরই উপন্যাস। সংখ্যায় ১২৯টি। গল্প গ্রন্থ ৮২টি। সামনে এলো নিরাপত্তা ইস্যু ॥ এবারও অমর একুশে গ্রন্থমেলার নিরাপত্তা নিয়ে বিশেষভাবে কাজ করছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। অতীতের কলঙ্কজন অধ্যায় মাথায় রেখেই ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। মৌলবাদীদের মুখেও তেমন রা নেই। এর পরও সপ্তম দিনের মেলায় ওঠে আসে নিরাপত্তা প্রসঙ্গ। বিকেলে সরকারের বিভিন্ন বাহিনীর কর্তা ব্যক্তিরা লম্বা গাড়ি বহর নিয়ে মেলায় ঢুকেছিলেন। নিরাপত্তা ব্যবস্থার পুরোটা খতিয়ে দেখেছেন তারা। তবে কালো পোশাক পরা অস্ত্রধারী বাহিনীর ছোটাছুটি অনেক পাঠকের মনে ভয় ধরিয়ে দিয়েছিল। পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আজ বৃহস্পতিবার একটি দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণার কথা রয়েছে। রায় ঘিরে রাজনীতিতে এক ধরনের উত্তেজনা বিরাজ করছে। সেই প্রভাব পড়েছে মেলায়। অবশ্য বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে আশ্বস্থ করা হয়েছে ভালভাবেই। এ প্রসঙ্গে মেলার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ড. জালাল ফিরোজ বলেন, বইমেলা সকলের। বাঙালীর প্রাণের মেলায় বাইরের কোন অশুভ অসুন্দর প্রবেশ করতে পারবে না। সে লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান তিনি। নির্বাচিত বই ॥ সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক আর নেই। তবে বিদায় বেলায় তিনি অনেক লিখে গেছেন বলে জানা যায়। সেসব লেখার কিছু নিয়ে প্রকাশিত হলো ‘উৎকট তন্দ্রার নিচে।’ কাব্যগ্রন্থটি মেলায় এনেছে অন্যপ্রকাশ। আগামী প্রকাশনী থেকে এসেছে হাসনাত আবদুল হাইয়ের উপন্যাস ‘সময় অসময়।’ তাম্রলিপি থেকে এসেছে চিঠি সংকলন ‘প্রিয় বাবা।’ এই বাবা মানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাঙালীর অবিসংবাদিত নেতাকে উদ্দেশ্য করে এসব চিঠি লিখেছিল ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা। লেখাগুলো বই আকারে প্রকাশ করা হয়েছে। ঐতিহ্য থেকে এসেছে জীবন কথা ‘শ্রীচৈতন্যদেব।’ লেখক সুব্রত কুমার দাস। অনিন্দ্য প্রকাশ থেকে মেলায় এসেছে ভাষা সংগ্রামী সুলেখক আহমদ রফিকের বই ‘কবিতার বিচিত্র ভাষ্য।’ শ্রাবণ প্রকাশ করেছে সাংবাদিক ও লেখক মিলু শামসের বই ‘আতঙ্কের পৃথিবীতে এক চক্কর।’ অন্তর্ভেদী দৃষ্টিতে দেখা চারপাশের গল্পগুলোই তুলে ধরার প্রয়াস নিয়েছেন লেখিকা। মেলা মঞ্চের আয়োজন ॥ এদিন গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘কবি আবদুল গফ্ফার দত্ত চৌধুরী’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন শুভেন্দু ইমাম। আলোচনা করেন আলী মোস্তাফা চৌধুরী, জফির সেতু ও মোস্তাক আহমাদ দীন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ভীষ্মদেব চৌধুরী। প্রাবন্ধিক বলেন, আবদুল গফ্ফার দত্তচৌধুরী বাংলাভাষার একজন প্রতিভাবান কবি, সংগীতরচয়িতা এবং লোকসংগীত সংগ্রাহক ছিলেন। তাঁর কিছু কৈশোরক রচনা হিসেবের বাইরে রাখলে, বলা যায় যে, তিনি মূলত গত শতকের তিরিশ থেকে পঞ্চাশের দশক পর্যন্ত অজস্র্র কবিতা-গান লিখেছেন, কবিতার অনুবাদ করেছেন; এমনকি লোকগান সংগ্রহেও একনিষ্ঠভাবে নিয়োজিত ছিলেন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, তাঁর বিপুল সৃষ্টির স্বল্প পরিমাণই প্রকাশিত হয়েছে যদিও তার যথাযথ স্বীকৃতি মেলেনি। আলোচকরা বলেন, বাংলা সাহিত্যের প্রেক্ষাপটে তিরিশের দশকের কবি আবদুল গফ্ফার দত্ত চৌধুরীর অবদান অবিস্মরণীয়। অপ্রকাশিত কবিতার বই, শিশুতোষ কবিতা, সনেট, নিজের লেখা গান, সংগৃহীত গান, গল্পের পা-ুলিপি এবং প্রকাশিত গানের বইÑ মিলিয়ে মোট ৫৮টি পুস্তক রচনা করে গেছেন। তারা বলেন, বাংলা একাডেমি বা বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের গবেষণামূলক প্রতিষ্ঠান থেকে আবদুল গফ্ফার দত্ত চৌধুরীর বইগুলোর একটি সংগ্রহ প্রকাশিত হওয়া প্রয়োজন। সভাপতির বক্তব্যে ভীষ্মদেব চৌধুরী বলেন, আবদুল গফ্ফার দত্ত চৌধুরী ছিলেন একজন অসাধারণ লেখক; মনীষার দীপ্তিতে উদ্ভাসিত তাঁর রচনা আমাদের আলোকিত করে, উৎসের সন্ধানে নিয়ে চলে। সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী রথীন্দ্রনাথ রায়, কান্তা নন্দী, মো. নূরুল ইসলাম, নবনীতা রায় বর্মণ, সঞ্জয় কুমার দাস।
×