ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

চট্টগ্রাম পাসপোর্ট অফিসে আবেদনকারীদের অপেক্ষায় দালালরা

প্রকাশিত: ০৪:২২, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

চট্টগ্রাম পাসপোর্ট অফিসে আবেদনকারীদের অপেক্ষায় দালালরা

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রাম পাসপোর্ট অফিসের সামনেই গ্রাহকদের অপেক্ষায় দিন কাটে দালালদের। শুধু পাসপোর্টের আবেদন নিয়ে দফতরের গেট দিয়ে গ্রাহক পার্শ্ববর্তী ব্যাংকে যাওয়ার অপেক্ষায় থাকে এসব অপরাধীরা। তবে গ্রাহকরা দফতরের প্রবেশদ্বারের পাশে থাকা ও ভবনের দেয়ালে সাঁটানো ফরম পূরণের ডামি থেকে নিজেই ফরম পূরণ, জমা ও ছবির কাজ করতে পারেন। এমনকি পাসপোর্ট নেয়া পর্যন্ত সকল কর্মকা- মোবাইলে এসএমএসর মাধ্যমে করতে পারেন। এদিকে, গত ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এক বছরে লক্ষাধিক পাসপোর্টের আবেদনের মধ্যে শতকরা ৯৪ ভাগ পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়েছে। এদিকে, দফতরের অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী ২৯ জন কর্মকর্তা কর্মচারী থাকার কথা থাকলেও রয়েছে মাত্র ২১জন। তথা প্রায় এক তৃতীয়াংশ জনবল ঘাটতি রয়েছে। উল্লেখ্য, সারাদেশে বিভাগীয় ও জেলাশহরসহ মোট ৭১টি পাসপোর্ট ইস্যু ও নবায়নকারী স্টেশন রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, মূলত অত্র দফতরের মুষ্টিমেয় কর্মকর্তা ও কর্মচারীর অসহযোগিতার কারণেই গ্রাহকরা দালালদের শরণাপন্ন হচ্ছে আবেদনকারী। অল্প সময়ে পাসপোর্ট প্রদান প্রসঙ্গে অফিসের গেটে জাহিদ (মোবাইল- ০১৮১৪-৯০০৯০০) নামের এক দালাল প্রতিবেদককে জানান- আমি পুলিশ ভেরিফিকেশনসহ ৭ দিনের মধ্যেই পাসপোর্ট হাতে তুলে দেয়ার শতভাগ নিশ্চয়তা দিতে পারি। এতে খরচ হবে ১১ হাজার টাকা। আর ২১ দিনের মধ্যে দিলে ৮ হাজার টাকা। এতে আবেদনকারীকে লাইনে দাঁড়াতে হবে না বিশেষ চিহ্নে আমাদের সুবিধা পাবে। অফিস খরচ দেড় হাজার ও পুলিশ ভেরিফিকেশন দেড় হাজার ছাড়া বাকিগুলো সরকারী ফি আর আমার পারিশ্রমিক। চট্টগ্রাম বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসের উপ-পরিচালক আবু নোমান মোঃ জাকির জনকণ্ঠকে জানান, অনলাইনে যারা আবেদন করেন তারা একটু সুবিধা পান বেশি। পুলিশ রিপোর্ট পাওয়ার পরই পাসপোর্ট ইস্যু হবে কি হবেনা তা নিশ্চিত করা যায়। আবেদন জমার সিরিয়াল অনুযায়ী মোবাইলে এসএমএসর মাধ্যমে কর্তৃপক্ষ আবেদনকারীকে পাসপোর্ট গ্রহণের জন্য নির্দিষ্ট তারিখ জানিয়ে দেয়া হয়। হয়রানি বা দালাল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা গ্রাহকদের সুবিধার জন্য পূরণকৃত ডামি আবেদন ফরম, জমা ও ছবি তোলার বিভিন্ন নিয়ম গ্রাহকের দৃষ্টি আকর্ষণে দেওয়ালে সাঁটিয়ে দিয়েছি। এতে সহজে আবেদনকারী নিজেই সবকিছু করতে পারবেন। দালাল বা অপরিচিতজনদের সাহায্য নেয়ার কোন প্রয়োজন নেই। এরপরও যদি কেউ দালালের দ্বারস্থ হন এতে ক্ষতি ছাড়া লাভ হবেনা এমনকি প্রতারণার শিকার হতে পারেন। চট্টগ্রাম বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসের তথ্য অনুযায়ী, মেশিন রিডেবল এসব পাসপোর্ট ছাড়াও এই দফতর থেকে বিদেশীদের ভিসাও নবায়ন করা হয়। বিদেশীদের ভিসার আবেদন জমা হয় ৬ হাজার ১৮০টি। এরমধ্যে ৫ হাজার ৬৩৭টি ভিসা নবায়ন করা হয়েছে। দুটি খাতে গত এক বছরে সরকারের আয় হয়েছে প্রায় ৪০ কোটি টাকা। প্রতিটি ওয়ান ব্যাংকের মাধ্যমে সাধারণ নিয়মে ২১ দিন পর পাসপোর্ট নিতে হলে ৩ হাজার ৪৫০ টাকা জমা দিয়ে সাধারণ ক্যাটাগরিতে পাসপোর্টের আবেদন ফরম জমা দেয়া যায়। জরুরীভিত্তিতে ৭ দিনের মধ্যে পাসপোর্ট পাওয়ার ক্ষেত্রে ৬ হাজার ৯০০ টাকা ফি জমা দিতে হয়। এছাড়াও স্কলারশিপ বা রোগীদের ক্ষেত্রে সর্বনি¤œ ৩ দিনের মধ্যে পাসপোর্ট ইস্যু করা যায়। পাসপোর্ট ইস্যু ও নবায়নের নিয়ম ও ফি একই। শুধু নবায়নে পুলিশ ভেরিফিকেশনের প্রয়োজন হয়না। এদিকে, ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১ লাখ ২ হাজার ৫২০টি পাসপোর্টের জন্য আবেদন পাওয়া যায় গ্রাহকদের কাছ থেকে। এর মধ্যে ৯৬ হাজার ৩০০টি পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়েছে। ৭৯১ টি পাসপোর্ট ইস্যুর ক্ষেত্রে প্রেরিত পুলিশ ভেরিফিকেশেনের চিঠি প্রেরণ করা হলেও তা পুলিশের পক্ষ থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এতে ফেরতের বিভিন্ন কারণ দেখানো হয়েছে। ৩৮৭টি আবেদনে তথ্য ঘাটতি ছিল। আর ৩৪৯ টি আবেদনে তথ্য বিভ্রাট রয়েছে।
×