ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

খোলা আকাশের নিচে দুই শতাধিক পরিবার

ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙ্গনে দিশেহারা রৌমারী ও রাজিবপুরবাসী

প্রকাশিত: ০৪:২২, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙ্গনে দিশেহারা রৌমারী ও রাজিবপুরবাসী

স্টাফ রিপোর্টার, কুড়িগ্রাম ॥ রৌমারী ও রাজীবপুর উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙ্গনে দিশেহারা হয়ে পড়েছে ভাঙ্গনকবলিত এলাকার মানুষ। ইতোমধ্যে ভাঙ্গনে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ২শ’ মিটার তীররক্ষা বাঁধ। শুকনো মৌসুমে আকস্মিক ভাঙ্গনে ঘরবাড়ি হারানো দুই শতাধিক পরিবার খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন যাপন করছে। বর্তমান দু’টি উপজেলার প্রায় ৩৫হাজার পরিবার, ২০টি হাট-বাজার, ৫টি নৌঘাট, ৩০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ১৭টি মাদ্রাসা, ১২হাজার হেক্টর জমিসহ বিভিন্ন সরকারী, আধাসরকারী, এনজিও প্রতিষ্ঠান ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙ্গনের মুখে পড়েছে। ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙ্গনে কয়েক মাসে বিলীন হয়েছে রৌমারী উপজেলার ইটালুকান্দা, সাহেবের আলগা, চর গেন্দার আলগা, ঘুঘুমারী,খেরুয়ারচর, খেদাইমারী, পশ্চিম বাগুয়ারচর,বাইসপাড়া, বলদমারা, পশ্চিম পাখিউড়া, ফলুয়ার চর, পালেরচর, ধনারচর, দিগলাপাড়া, তিনতেলী গ্রাম। আর ভাঙ্গনের মুখে পড়েছে বাগুয়ারচর, বাইটকামারী, উত্তর খেদাইমারী, দক্ষিণ খেদাইমারী, উত্তর পাখিউড়া, পশ্চিম খনজনমারা, কুঠিরচর, চরবাঘমারা, চরবন্দবেড়, সাহেবের আলগা, গেন্দার আলগা, ধনারচর, দিগলাপাড়া। আর রাজিবপুর উপজেলার উত্তরসাজাই, দক্ষিণসাজাই, মাধবপুর, কড়াতিপাড়া, রাজিবপুর উপজেলা প্রশাসন, খাদ্যগুদাম, হাসপাতাল, টিএ্যান্ডটি ভবন। মোহনগঞ্জ ইউনিয়নসহ প্রায় ২৫টি গ্রাম ভাঙ্গনের মুখে পড়েছে। রাজিবপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ শফিউল আলম জানান, ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙ্গনে বিলীন হয়ে যাওয়া গ্রামের হাজার হাজার মানুষ তাদের ঘরবাড়ি, জমিজমা হারিয়ে পরিণত হচ্ছে ভূমিহীনে। এসব মানুষ আশ্রয় নিয়েছে বিভিন্ন রাস্তার দু’পাশে হেলিপ্যাডে আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতে ঝুপড়ি তুলে মানবেতর জীবনযাপন করছে। রৌমারী নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধ আন্দোলন বাস্তবায়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবু হানিফ জানান, পাঁচ বছরে রৌমারী,রাজিবপুর ও চিলমারী উপজেলার প্রায় ৫০হাজার পরিবার নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ে উদবাস্তু হয়েছে। এই সব পরিবারের একটি বড় অংশ ঢাকা শহরসহ দেশের বিভিন্ন শহরে বস্তিতে বসবাস করছে। উদবাস্তু পরিবারের পুর্নবাসন ও নদী ভাঙ্গন রোধ না করলে আগামী ১০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশের মানচিত্র থেকে রৌমারী ও রাজিবপুর নামের দুটি উপজেলা বিলীন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কুড়িগ্রাম-৪ আসনের সংসদ সদস্য রুহুল আমিন জানান, দুই বছর ধরে ব্রহ্মপুত্র নদের বামতীর সংরক্ষণ কাজের প্রকল্প প্রস্তাবনা প্রণয়ন (ডিপিপি) তৈরির কাজ চলছে। এ ডিপিপি তৈরির কাজে বার বার ভুল হয়। এ বিষয়ে সংসদ অধিবেশনে কথা বলেছি, নোটিস দিয়েছি, প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম জানান, ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙ্গন রোধে একটি প্রকল্প প্রস্তাবনা প্রণয়ন (ডিপিপি) প্রস্তুত করে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ঢাকা, প্রেরণ করা হয়েছে। ডিপিপিটি পরিকল্পনা কমিশন ও একনেকের সভায় অনুমোদন হয়ে এলে কাজ শুরু হবে। আসছে বর্ষা মৌসুমের আগে প্রকল্প অনুমোদন করে কাজ শুরু করা সম্ভব হবে না। জরুরী কিছু প্রকল্প আছে বরাদ্দ পেলে বন্যা মৌসুমে নদের ভাঙ্গন রোধে কিছুটা হলেও রক্ষা করা সম্ভব হবে।
×