অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ দেশের সব অর্থনৈতিক অঞ্চলে আলাদা বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এজন্য এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি)। সম্প্রতি বাংলাদেশ বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ডও (পিডিবি) একটি কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারী কোম্পানিও কেন্দ্র স্থাপনের আগ্রহ দেখাচ্ছে। বিভিন্ন অর্থনৈতিক অঞ্চলে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহের জন্যই বিশেষ এই উদ্যোগ নিয়েছে বিদ্যুত বিভাগ।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, যেসব উদ্যোক্তারা নিজস্ব উদ্যোগে ইপিজেড স্থাপন করছে তারাও বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করছে। এছাড়া সারাদেশে শিল্প উদ্যোক্তাদের জায়গা করে দিতে ১৫ বছরে ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণ করবে সরকার। সব মিলিয়ে প্রায় ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠন করা হবে।
আরইবি জানিয়েছে, সারাদেশের নতুন ৪২টি অর্থনৈতিক অঞ্চলে (ইপিজেড) বিদ্যুত সংযোগ দেয়ার কার্যক্রম শুরু করেছে তারা। সরকারী ৩৩টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের পাশাপাশি নয়টি বেসরকারী অর্থনৈতিক অঞ্চল রয়েছে। সরকার সারাদেশে নতুন যে ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছে এই ৪২টি তারই অংশ। আরইবি এলাকায় শিল্প গ্রাহক কম হলেও সরকার নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠনের কারণে গ্রাহকের সংখ্যা বাড়বে। শতভাগ শিল্পায়ন হলে প্রায় তিন হাজার মেগাওয়াট নতুন বিদ্যুতের চাহিদা তৈরি হতে পারে। এর মধ্যে সরকারী ৩১টি শিল্প পার্কের জন্য দুই হাজার ৪০০ মেগাওয়াট এবং বেসরকারী ইপিজেডগুলোর জন্য প্রয়োজন হবে ৫২৭ মেগাওয়াট। বর্তমানে ৪২টি অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। এর মধ্যে নয়টিতে প্রাথমিকভাবে সংযোগ দিয়েছে আরইবি। এগুলো হচ্ছে- মীরসরাই, আনোয়ারা, মংলা, বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি পার্ক, এপিআই শিল্পপার্ক, আব্দুল মোনেম, এ কে খান, আকিজ এবং বে অর্থনৈতিক অঞ্চল। এছাড়া ৬টি অর্থনৈতিক অঞ্চলে বৈদু্যুতিক অবকাঠামো নির্মাণ কাজ চলছে। এদিকে মীরসরাই, বঙ্গবন্ধু সিটি হাইটেক পার্ক, এপিআই শিল্প পার্ক, শ্রীহট্ট ইপিজেড, নাফ ট্যুরিজম পার্কও জামালপুর ইপিজেডে ৩৩ কেভি, ১১ কেভি গ্রিড এবং ৩৩/১১ কেভি উপকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। ৪২টি ইপিজেডেই চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুত সংযোগ দিতে পিজিসিবি’র ২২টি ১৩২/৩৩ কেভি গ্রিড উপকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। এর বাইরে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত দিতে আরও ১০টি গ্রিড উপকেন্দ্রের ক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
গত ৫ ফেব্রুয়ারি মীরসরাইয়ের অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিদ্যুত দিতে চীনের সিনোহাইড্রোর সঙ্গে চুক্তি করে পিডিবি ও আরপিসিএল এর যৌথ কোম্পানি বিআর পাওয়ারজেন। তারা আগামী বছরের জুনের মধ্যে ১৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কেন্দ্রটি স্থাপনের কাজ শেষ করবে বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়। এর আগে মুন্সীগঞ্জের বেসরকারী একটি অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য আব্দুল মোনেম গ্রুপকে বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। একইভাবে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও এলাকার অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য আলাদা বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহম্মদ হোসেইন বলেন, ‘অর্থনৈতিক অঞ্চলে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত দিতে চায় কর্তৃপক্ষ। এজন্য এসব বিশেষ অঞ্চলে শিল্প কারখানা প্রতিষ্ঠা করলে অগ্রাধিকারভিত্তিতে বিদ্যুত সংযোগ দেয়া হবে। পাশাপাশি চাহিদা অনুযায়ী নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহ নিশ্চিতে বেশকিছু বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।’
বিদ্যুতের পাশাপাশি অর্থনৈতিক অঞ্চলে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাসও দেবে সরকার। এজন্য গত বছরের শুরুতে সাতটি বেসরকারী অর্থনৈতিক অঞ্চলে গ্যাস সংযোগ দিতে তিতাস গ্যাসের সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা চুক্তি করেছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)। অঞ্চলগুলো হচ্ছে- আমান ইকোমিক জোন, আকিজ ইকোনমিক জোন, আরিশা ইকোনমিক জোন, বে-ইকোনমকি জোন, মেঘনা ইকোনমিক জোন, সোনারগাঁ অর্থনৈতিক অঞ্চল ও মেঘনা ইন্ডাস্ট্রিয়াল অর্থনৈতিক অঞ্চল।