ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সমাজ ভাবনা ॥ বিষয় ॥ বইমেলা ও বই পড়া

প্রকাশিত: ০৩:৪০, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

সমাজ ভাবনা ॥ বিষয় ॥ বইমেলা ও বই পড়া

আমাদের মাঝে এখন বই পড়ার প্রবণতা অনেক কমে গেছে, এটা কোন শুভলক্ষ্মণ হতে পারে না। স্কুল, কলেজ আর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিসমাপ্তি শেষে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের পর বই পড়ার অভ্যাস আমাদের মাঝ থেকে হারিয়ে যায়, অথচ বই না পড়লে কিছুতেই জ্ঞান অর্জন করা সম্ভব নয়। আমরা এ কথাটি যেন বেমালুম ভুলে গেছি। একুশের বইমেলা শুরু হয় ভাষার মাস ফেব্রুয়ারির প্রথম দিন থেকে। প্রতি বছরই বই মেলায় বিপুলসংখ্যক বই প্রকাশিত হয়। বিপুলসংখ্যক বই প্রকাশিত হলেও বই পাঠকের সংখ্যা কিন্তু তেমন একটা বাড়ছে না। এটা সত্যিকারেই হতাশাব্যঞ্জক ঘটনা, অপ্রত্যাশিত তো বটেই। সমাজে শিক্ষিত জ্ঞানী-গুণী লোকের সংখ্যা বাড়াতে হলে বই পড়ার অভ্যাসের কোন বিকল্প নেই। তাই মানব জীবনে প্রতিটি কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পূর্ণ করতে হলে বই পাঠ ছাড়া জ্ঞান অর্জনের আর অন্য কোন উপায় নেই। পাঠাগার বই সংরক্ষেণের স্থান শহর কিংবা গ্রামে লাইব্রেরি বা পাঠাগারের সংখ্যা বাড়ালে জনগণ বই পড়ার সুযোগ পাবে। স্কুল, কলেজ আর বিশ্ববিদ্যালয়েও লাইব্রেরি বা পাঠাগারের সংখ্যা বাড়াতে হবে। বিশ্বের ভাল ভাল লেখকের বই এসব লাইব্রেরি বা পাঠাগারে সংরক্ষণ করলে পাঠক সমাগম হবেÑ পাঠকের সংখ্যাও বাড়বে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে কিভাবে লাইব্রেরি বা পাঠাগারগুলোর সংরক্ষণ ও পরিচালনা করা হয় তা যেনে আমাদের দেশেও সেই রকম পাঠাগার স্থাপন করতে হবে। আর লাইব্রেরি বা পাঠাগারের সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে। বইয়েরও শ্রেণী বা প্রকারভেদ রয়েছে। বিজ্ঞান, সাহিত্য, ইঞ্জিনিয়ারিং, মেডিসিনসহ অনেক বিভাগ আছে। আর্ট বা চিত্রাঙ্কনের ওপরও অনেক বই আছে যেমন রয়েছে বিজ্ঞান ও সাহিত্যে। প্রতিটি ক্ষেত্র থেকে ভাল ভাল বই সংরক্ষণ করে আমাদের লাইব্রেরিগুলো সাজিয়ে তুলতে হবে, যা হবে আমাদের নবপ্রজন্মের খোরাক। ভাল বই না পড়লে নবপ্রজন্মের ছেলেমেয়েদের ভাল জ্ঞানের উন্মেষ হবে না। প্রাচীনকালের ইতিহাস, মধ্যযুগের ইতিহাস, বর্তমান জগতের ইতিহাস না জানলে আমাদের ছেলেমেয়েরা প্রকৃত জ্ঞানের অধিকারী হবে কি করে? ইউরোপের ইতিহাস, আমেরিকার ইতিহাস, আফ্রিকার ইতিহাস সংগ্রহ করে এসব যুব সমাজকে পড়তে দিতে হবে। মুসলিম সা¤্রাজ্যের ইতিহাস, হিন্দু যুগের ইতিহাস সংগ্রহ করে তাদের পড়তে দিতে হবে। তবেই নবপ্রজন্ম এসব বিষয়ে জানতে পারবে। তুরস্ক, ইংল্যান্ড, জার্মানি, স্পেন, মিসর, ইত্যাদি দেশের পাঠাগারগুলোতে প্রাচীনকাল থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত অনেক জ্ঞানী-গুণী লেখকের বইতে ভরপুর রয়েছে। সেই সব বই সংগ্রহ করে আমাদের ছেলেমেয়েদের মাঝে বিলিয়ে দিতে হবে- তবেই তারা ওইসব বই পড়ে অনেক জ্ঞান অর্জন করতে পারবে। এখন একুশের বইমেলা চলছে। বইমেলা থেকে মূল্যবান জ্ঞান-গর্ভ বই সংগ্রহ করে স্কুল-কলেজ আর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠাগারে এনে ছাত্রছাত্রীদের পড়তে দিতে হবে, নবীন প্রজন্মকে এসব বই পাঠের সুযোগ করে দিলে তারা প্রকৃত জ্ঞানী হতে পারবে। বড় বড় লেখক, কবি-সাহিত্যিক, গবেষকদের লেখা বই পড়লে প্রভূত জ্ঞান অর্জন করা তাদের পক্ষে সম্ভব হবে। সাহিত্যে যারা নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তাদের বই সংগ্রহ করে নবপ্রজন্মের মাঝে বিলিয়ে দিলে তারা যথার্থ জ্ঞান লাভের সুযোগ পাবে। তাই আসুন আমরা আমাদের নবপ্রজন্মকে এই জ্ঞান লাভের সুযোগ করে দেই। কলাবাগান, ঢাকা থেকে
×