ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কোরিয়ায় যুদ্ধের আশঙ্কা কত খানি

প্রকাশিত: ০৬:৫০, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

কোরিয়ায় যুদ্ধের আশঙ্কা কত খানি

আমেরিকা কি হঠাৎ করে উত্তর কোরিয়ার উপর পারমাণবিক বা অন্য কোন হামলা চালিয়ে বসতে পারে? সে সম্ভাবনা আপাতত না দেখা গেলেও একেবারে উড়িয়ে দেয়ার উপায় নেই। কিন্তু মার্কিন হামলার পরিণতিও যে খুব ভাল হবে তা নয়। ১৯৯৪ সালে আমেরিকা এমন এক পরিকল্পনা নিয়েছিল তখন একদিন কি দুদিনের মধ্যে ইয়ংরাইয়োন পরমাণু স্থাপনা সম্পূর্ণ গুঁড়িয়ে দেয়া যেতে পারত। কিন্তু এখন আর এভাবে গুঁড়িয়ে দেয়া সম্ভব নয়। তখনকার সঙ্গে এখনকার পার্থক্য উত্তর কোরিয়া তার পারমাণবিক অবকাঠামো লুকিয়ে রাখতে, চাপা দিয়ে রাখতে এবং অন্যত্র সরিয়ে নিতে এখন খুবই দক্ষ। কিন্তু মার্কিন হামলার সম্ভাব্য পরিণতি হিসেবে তখন যা ঘটতে পেরেছিল এখন সেই ঝুঁকি অনেক বেড়ে গেছে। সে সময় কিম ইল সুং প্লুটোনিয়াম দিয়ে অর্ধডজন আদি পর্যায়ের পরমাণু বোমা বানানোর হুমকি দিয়েছিলেন। এরপর ক্ষমতা পর্যায়ক্রমে পুত্রের হাতে ও শেষে নাতি কিম জং উনের হাতে আসে। ২০০৬ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত একটি হাইড্রোজেন বোমাসহ ৬টি পরমাণু বোমা পরীক্ষা করেছে এবং সম্ভবত আরও কয়েক ডজন বোমা তৈরির উপযোগী প্লুটোনিয়াম ও ইউরেনিয়াম উৎপাদন করেছে। এর ক্ষেপণাস্ত্র গুয়াম, হাওয়াই এমনকি আমেরিকার মূল ভূখ-ে আঘাত হানতে পারে। কোরিয়া যুদ্ধ যেহেতু অবর্ণনীয় রকমের বিপজ্জনক হবে তাই এমনটা মনে করার কারণ নেই যে সেই যুদ্ধ হবে না। বরং সংযত স্বভাবের মার্কিন কর্মকর্তারা এমন যুদ্ধের সম্ভাবনা নিয়ে আগের চেয়ে ঢের বেশি উদ্বিগ্ন। কারণটা আর কিছু নয়Ñ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পদে এখন ডোনাল্ড ট্রাম্প যিনি মেজাজ, মনোভাব ও কথাবার্তায় কিম জং উনের চেয়ে কিছু মাত্র কম যুদ্ধংদেহী নন। শুধু ট্রাম্পকেই বা দায়ী করা কেন? ট্রাম্পের উপর প্রভাব আছে। এখন জেনারেলরাও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করছেন যে, কিম সরকারকে মার্কিন ভূখন্ডের প্রতি হুমকি সৃষ্টির করার মতো অস্ত্র তৈরি করার সুযোগ দিতে দেয়া যায় না। জয়েন্ট স্টাফস অব স্টামের চেয়ারম্যান জেনারেল জোসেফ ডানফোর্ড উত্তর কোরীয় পরমাণু হুমকি মোকাবেলায় মার্কিন শক্তি প্রয়োগের সম্ভাবনাকে যারা অকল্পনীয় বলে মনে করে তাদের তিনি তিরস্কার করে বলেছেন “আমার কাছে যা অকল্পনীয় তা হল কলরাডোর ডেনভারে পরমাণু বোমা ফেলার সক্ষমতা কাউকে অর্জন করতে দেয়া। প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস মাতিস বলেছেন তার কাজ হচ্ছে উত্তর কোরীয় সঙ্কট সমাধানে কূটনীতিকদের সময় ক্ষেপণ করতে দেয়া। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, এমন সামরিক বিকল্প আছে যে তাতে সিউল ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। তিনি অবশ্য সেই বিকল্পটি ব্যাখ্যা করেননি। তবে সিউল ক্ষতিগ্রস্ত হবে না সেকথা বলার কোন অবকাশ নেই। কারণ উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক, জীবাণু ও রাসায়নিক অস্ত্রসম্ভার এবং কামান মর্টার দুই কোরিয়ার বিভাজন রেখার ঠিক উত্তরে কঠিন বাংকারের নিচে মোতায়েন আছে সেখান থেকে মিনিটে ১০ হাজার রাউন্ড গোলা সিউলে ছোড়া সম্ভব। উত্তর কোরিয়ার ড্রোন ও মিডগেট সাবমেরিন আছে। আছে কমান্ডো বাহিনী যারা ডিসিলিটারইজড জোনের আন্ডার গ্রাউন্ড টানেল দিয়ে দক্ষিণে গিয়ে সেখানকার টার্গেটে হামলা করতে পারে। মাতিস বলেছেন, কোরিয়ায় যুদ্ধ হলে সেটা হবে অধিকাংশ মানুষের জীবদ্দশায় দেখা সবচেয়ে ভয়াবহ লড়াই। সামরিক উপদেষ্টারা যেসব বিকল্প পথের কথা বলছেন শোনা যাচ্ছে ট্রাম্প সেগুলোর চেয়ে আরও ভাল বিকল্প চান। একটা হচ্ছে নিবর্তনমূলক আক্রমণ। সেটা হলো আসন্ন আক্রমণের আশঙ্কা আঁচ করে প্রি-এশটিভ বা প্রাক আক্রমণাত্মক আক্রমণের আগে পরিচালিত হামলা। এগুলো কি স্রেফ বাত কি বাত? ট্রাম্প কি স্রেফ ভাঁওতা দেয়ার জন্য এসব কথা বলছেন? ট্রাম্পের সহকর্মীরা মনে করেন ঠিক ভাঁওতা নয়। আর সেজন্যই প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্মকর্তার ভাষায় ২০১৮ সাল হবে সবচেয়ে বিপজ্জনক বছর। তবে উত্তর কোরিয়ার ব্যাপারে এ্যাকশনে যাওয়া নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসন উগ্রপন্থী ও নরমপন্থী এই দুই শিবিরে বিভক্ত বলে জানা গেছে। সঙ্কট উত্তরণে প্রেসিডেন্ট কিমের সঙ্গে আলোচনায় বসার অপশনও আছে। তবে এই আলোচনার উপযোগিতা নিয়ে দুই শিবির স্পষ্টতই ভিন্নমত পোষণ করে। তাছাড়া আশাবাদী ও নৈরাশ্যবাদীর দলও আছে। উত্তর কোরিয়ার পরমাণু কর্মসূচীর যে বিশাল উচ্চাভিলাষ আছে যা কিমের বিভিন্ন বক্তব্য থেকে পরিষ্কার। সেটা হল কোরিয়া উপদ্বীপ থেকে আমেরিকাকে বিতাড়িত করা এবং দুই কোরিয়াকে একটি পতাকার অধীনে এক করা। নইলে কেন একটা সরকার তার লাখ লাখ লোককে প্রায় অনাহারে রাখবে, শ্বাসরুদ্ধকর অবরোধ সেধে বরণ করে নেবে এবং বন্ধুদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকবে? সেই উচ্চাভিলাষ ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্র সীমিত পরিসরে আক্রমণ চালিয়ে উত্তর কোরিয়ার পরমাণু স্থাপনাগুলি ধ্বংস করার চেষ্টা করতে পারে। তবে এই সীমিত আক্রমণও ব্যাপক পাল্টা আক্রমণের ঝুঁকি বহন করে। সেক্ষেত্রে গোটা কোরীয় উপদ্বীপে ভয়ঙ্কর অস্থিরতা সৃষ্টি হবে। সূত্র : দি ইকোনোমিস্ট
×