ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

আগামীকাল বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা সিরিজ নির্ধারণী দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট শুরু

মিরপুর শেরেবাংলায় বোলারদের টেস্ট!

প্রকাশিত: ০৬:৩৬, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

মিরপুর শেরেবাংলায় বোলারদের টেস্ট!

মিথুন আশরাফ ॥ বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার মধ্যকার চট্টগ্রাম টেস্টে শুরুতে মনে করা হয়েছিল স্পিনারদের টেস্ট হয়ে উঠতে পারে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেখা গেল শুধুই ব্যাটসম্যানদের টেস্ট হয়ে গেল। এবার খেলা হবে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট শুরু হবে। এবার কী বোলারদের টেস্ট হবে? সেই প্রশ্নই উঠছে। চট্টগ্রামে দুই দলের তিন ইনিংস মিলিয়ে ১৫৩৩ রান উঠেছিল। ম্যাচটি ড্র’ও হয়েছিল। উইকেট পড়েছিল ২৪টি। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ ৫১৩ রান করার পর দ্বিতীয় ইনিংসে ৫ উইকেটে ৩০৭ রান করে। শ্রীলঙ্কা প্রথম ইনিংসে ৯ উইকেটে ৭১৩ রান করে ইনিংস ঘোষণা করে। যে ব্যাটসম্যান একটু থিতু হতে পেরেছেন তিনিই বড় ইনিংস খেলেছেন। আর তাইতো ৫টি সেঞ্চুরির দেখা মিলেছে। মুমিনুল হক দুটি, কুশল মেন্ডিস, ধনঞ্জয়া ডি সিলভা, রোশেন সিলভা একটি করে সেঞ্চুরি করেছেন। হাফ সেঞ্চুরি মিলেছে ছয়টি। তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহীম, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, দিনেশ চান্দিমাল, নিরোশান ডিকভেলা, লিটন কুমার দাস একটি করে হাফ সেঞ্চুরি করেছেন। ২৪টি উইকেট যে গেছে ২০টিই তুলে নিয়েছেন স্পিনাররা। তবে সেটিও যথাসময়ে নয়। ব্যাটসম্যানরা খেলতে খেলতে যখন ভুল করেছেন, তখন বোলাররা চেপে ধরেছেন। মিরপুর টেস্টে কী হবে? মিরপুরে গত টেস্টগুলো এবং অন্য ম্যাচগুলো থেকে যা বোঝা যাচ্ছে মিরপুর টেস্টটি বোলারদের ম্যাচ হয়ে উঠতে পারে। এ স্টেডিয়ামে যে সম্প্রতি বোলারদের দাপটই দেখা গেছে। যে দলের বোলাররা যথাসময়ে নিজেদের মেলে ধরতে পেরেছেন তারাই ম্যাচ থেকে ফল বের করে আনতে পেরেছেন। সর্বশেষ ত্রিদেশীয় ওয়ানডে সিরিজের কথাই ধরা যাক। শুরুতে বাংলাদেশ সিরিজের তিন ম্যাচে কি দাপট দেখাল। এরপর দুই ম্যাচে এমন হার হলো যা ক্রিকেটাররা ভুলেই যেতে চাইবেন। ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করে তাতে সফলও হয়েছেন। চট্টগ্রাম টেস্টে ভাল করে দেখিয়েছেন। তবে এখন মিরপুরে যেহেতু খেলা সেই ম্যাচগুলো বাংলাদেশের স্মরণে আনতেই হচ্ছে। মিরপুরে সর্বশেষ ত্রিদেশীয় সিরিজের দুই ওয়ানডে ম্যাচে বাংলাদেশ ৮২ রানে অলআউট হয়ে গিয়েছিল। বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডের রান দেখেই বোঝা যাচ্ছে উইকেটের অবস্থা কাদের পক্ষে ছিল। কারা উইকেটে দাপট দেখিয়েছেন। এরপর ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালেও বোলারদের দাপটই দেখা গেছে। শ্রীলঙ্কা আগে ব্যাট করে ২২১ রান করে। এই রান অতিক্রম করতে গিয়ে ১৪২ রানেই গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ এবং শিরোপা হাতছাড়া করে। ত্রিদেশীয় সিরিজের শেষ দুটি ম্যাচেই বোঝা যাচ্ছে বোলাররা মিরপুরে কতটা আগ্রাসী নৈপুণ্য দেখান। টেস্টে তো গত কয়েকটি ম্যাচে শুধু বোলারদের দাপটই দেখা গেছে। বিশেষ করে স্পিনারদের নৈপুণ্য এমনই আগ্রাসী ছিল যে পার্থক্য স্পিনাররাই গড়ে দিয়েছে। তাতে বাংলাদেশ বাজিমাতও করেছে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে গত বছর আগস্টে সর্বশেষ মিরপুরের টেস্টটিতেই যেমন জিতেছে বাংলাদেশ। সেই ম্যাচের কোন ইনিংসই ২৬০ রানের ওপরে যায়নি। ৪০টি উইকেটই পড়েছে। তবে ৩৬টি উইকেটই নিয়েছেন স্পিনাররা। অস্ট্রেলিয়ার ২০টি উইকেটই বাংলাদেশ স্পিনাররা তুলে নিয়েছেন। তাতে বাংলাদেশ স্পিনাররাই দেখিয়েছেন ঝলক। ম্যাচও তাই জিতে নেয়া গেছে। সাড়ে তিনদিনেই খেলা শেষ হয়ে গেছে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২০১৬ সালের অক্টোবরেও একই দৃশ্য দেখা গেছে। ২৯৬ রানের ওপরে কোন ইনিংস যায়নি। ৪০টি উইকেটও পড়েছে। ৩২টি উইকেটই স্পিনারদের দখলে গেছে। ইংল্যান্ডের ২০টি উইকেটই নিয়েছেন বাংলাদেশ স্পিনাররা। ম্যাচও জেতা গেছে। বোঝাই যাচ্ছে মিরপুর স্টেডিয়ামে এবারও বোলারদের দাপটই দেখা যাবে। মিরপুর স্টেডিয়ামে সংস্কারের পর থেকে রান তোলাই যেন কঠিন হয়ে পড়েছে। বোলাররা এমনই সুবিধা পাচ্ছেন তাতে ব্যাটসম্যানদেরই আসল কাজ হয়ে উঠছে। কঠিন উইকেটে যে দলের ব্যাটসম্যানরা নৈপুণ্য দেখাতে পারছেন তাদের হাতেই জয় ধরা দিচ্ছে। এবারও নিশ্চয়ই সেই রকমই হবে। আর তাই সবার একটিই প্রশ্ন এবারও কী মিরপুরে বোলারদের টেস্ট দেখার মিলবে? সাকিব আল হাসান নেই। যতগুলো টেস্ট মিরপুরে জেতা গেছে বিশেষ করে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তাতে সাকিব বিশেষ ভূমিকা পালন করেছেন। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তো তার অসাধারণ বোলিংয়েই জেতা গেছে। এবার তিনি নেই। তাকে ছাড়া চট্টগ্রাম টেস্টে ড্র করা গেছে। কিন্তু বোলাররা যদি সুবিধা পেত তাহলে সাকিবের অভাব ভালভাবেই অনুভূত হতো। এবার মিরপুরে সাকিবের অভাব অনুভব হতে পারে। তবে দলে আছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। যিনি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দুর্দান্ত নৈপুণ্য দেখিয়ে দলকে জেতান। আছেন তাইজুল ইসলাম। যার বোলিংও কাজ করে। রয়েছেন আব্দুর রাজ্জাকের মতো অভিজ্ঞ ও নাঈম হাসানের মতো তরুণ স্পিনার। রয়েছেন তানভির হায়দারও। এ স্পিনারদের মধ্যে মিরাজ ও তাইজুল তো খেলবেনই। তা বোঝাই যাচ্ছে। কিন্তু আরেকজন স্পিনার কে হবেন তা নিয়েই এখন যত আলোচনা চলছে। যেহেতু অভিজ্ঞ রাজ্জাককে ডাকা হয়েছে। চট্টগ্রাম টেস্টে খেলানো হয়নি। মিরপুর টেস্টের জন্যও রাখা হয়েছে। অভিজ্ঞতা থাকায় রাজ্জাককে এবার খেলানও হতে পারে। আবার ১৭ বছর বয়সী ৬ ফুট উচ্চতার নাঈমকেও অভিষেক করানো হতে পারে। সানজামুল ইসলামকে চট্টগ্রামে অভিষেক করিয়ে ফল মিলেনি। মিরপুর টেস্টে তাই সানজামুলকে বাদ দেয়া হয়েছে। তবে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে গত বছর মিরাজের অভিষেকটি এখনও স্মরণীয় হয়ে আছে। সেই চিন্তা থেকে শ্রীলঙ্কাকে বিপদে ফেলতে নাঈমকেও অভিষেক করানো হতে পারে। স্পিনার মজবুত রেখেই একাদশ গঠন করা হবে তা নিশ্চিতই। মিরপুরে যে বোলারদের, স্পিনারদের টেস্ট দেখার মিলতে পারে।
×