ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

এবার তামিমের পালা

প্রকাশিত: ০৬:৩৪, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

এবার তামিমের পালা

মোঃ মামুন রশীদ ॥ বন্দর নগরী চট্টগ্রামের সাগরিকায় দুর্দান্ত একটি টেস্ট উপহার দিয়েছে বাংলাদেশ দল। সফরকারী শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে করেছে ড্র। সেই ম্যাচে অনেকগুলো ব্যক্তিগত রেকর্ড হয়েছে যার সিংহভাগই মুমিনুল হক সৌরভ একা গড়েছেন। দেশের পক্ষে দ্রুততম ২ হাজার রান পূর্ণ, প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে এক টেস্টের উভয় ইনিংসে সেঞ্চুরি, দুই ইনিংস মিলিয়ে সর্বাধিক ২৮১ রান, প্রথম ইনিংসে তৃতীয় উইকেটে এবং দ্বিতীয় ইনিংসে চতুর্থ উইকেটে রেকর্ড জুটি, টেস্টে দেশের পক্ষে দ্বিতীয় দ্রুততম সেঞ্চুরি, টেস্টের একদিনে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানÑ এই রেকর্ডগুলো ছিল মুমিনুলের দখলে। এছাড়া মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ২ হাজার রান এবং জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে মুশফিকুর রহীম ১ হাজার রান পূর্ণ করেছেন। ‘লোকাল হিরো’ তামিম ইকবাল দুই ইনিংসেই মাঝারি মানের রান করলেও বাকিদের আড়ালে পড়ে গেছেন। সুযোগ ছিল প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে টেস্টে ৪ হাজার রান পূর্ণ করার। সেটি পারেননি তামিম, এবার দ্বিতীয় টেস্টে তার কিছু করে দেখানোর পালা। আর ২১ রান করতে পারলেই টেস্টে ৪ হাজার রান পূর্ণ হবে তার। আর ১১৪ রান করতে পারলে মিরপুরের ভেন্যুতে সর্বাধিক ১২৩৩ রান করা সাকিব আল হাসানকেও ছুঁয়ে ফেলবেন তিনি। বাংলাদেশের পক্ষে তিন ফরমেটেই সর্বাধিক রানেরা মালিক তামিম। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকের পর থেকেই তিনি নিয়মিত সদস্য হিসেবে খেলে নিজের অপরিহার্যতা প্রমাণ করেছেন। তবে বাঁহাতি এ ওপেনার যোগ্য কোন সঙ্গী পাননি ক্যারিয়ারের পুরো সময়টাজুড়েই। ইনিংস উদ্বোধনে তার সঙ্গী বদলেছে বারবার। ওয়ানডেতে ৬ হাজার রান করা প্রথম বাংলাদেশী হয়েছেন এবার ত্রিদেশীয় সিরিজে দুর্দান্ত ব্যাটিং নৈপুণ্য দেখিয়ে। সাগরিকা টেস্টে এই তামিমের কাছ থেকে অনেক কিছুই প্রত্যাশার ছিল। দুই ইনিংস মিলিয়ে মাত্র ১১৪ রান করতে পারলে তিনি হয়ে যেতেন প্রথম বাংলাদেশী ক্রিকেটার হিসেবে ৪ হাজার টেস্ট রানের মালিক। কিন্তু ব্যাটিংয়ের স্বর্গভূমি এবং নিজের পরিচিত মাঠে দুই ইনিংসে ভাল খেলেও সেটা পূর্ণ হয়নি তামিমের। কারণ ইনিংস দুটোকে প্রলম্বিত করতে পারেননি তিনি। প্রথম ইনিংসে ৫২ রান করলেও দ্বিতীয় ইনিংসে করতে পেরেছেন ৪১। এ বাঁহাতি ওপেনারের কাছ থেকে দীর্ঘ ইনিংস প্রত্যাশিত থাকলেও সেটা পাওয়া যায়নি। মুমিনুল, মাহমুদুল্লাহ, মুশফিক, লিটনরা বড় ইনিংস খেলে স্মরণীয় হয়ে গেছেন দেশের ক্রিকেটে। সেখানে তামিমের এ দুটি ছোট আকৃতির ইনিংস একেবারেই আলোচনার বাইরে ছিল। যদিও প্রথম ইনিংসে ৭২ এবং দ্বিতীয় ইনিংসে ৫২ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়েছেন ইমরুল কায়েসকে নিয়ে এবং দলকেও ভাল সূচনা দিয়েছেন। দেশের ‘হোম অব ক্রিকেট’ খ্যাত মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে এখন পর্যন্ত সর্বাধিক ১৬ টেস্ট খেলেছেন সাকিব। তিনি ৩০ ইনিংস ব্যাট করার সুযোগ পেয়েছেন এবং ভেন্যুতে সর্বাধিক ১২৩৩ রান করে সবার ওপরে। ৪৪.০৩ গড়ে ১ সেঞ্চুরি ও ৮ অর্ধশতক হাঁকিয়েছেন সাকিব। তবে খুব বেশি পিছিয়ে নেই তামিম। দ্বিতীয় স্থানে আছেন ১৫ টেস্টের ২৮ ইনিংসে ১১১৯ রান করে। ৩৯.৯৬ গড়ে ২ সেঞ্চুরি ও ৮ হাফ সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন তামিম মিরপুরে। দেশের পক্ষে টেস্টে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ১৫১ রানের মালিক তামিমেরই সবচেয়ে বেশি শতক আছে মিরপুরে। অবশ্য তার মতোই দুটি করে সেঞ্চুরি এ মাঠে হাঁকিয়েছেন শ্রীলঙ্কার মাহেলা জয়বর্ধনে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাইরন পাওয়েল এবং ভারতের শচীন টেন্ডুলকর ও রাহুল দ্রাবিড়। এবার সেঞ্চুরি হাঁকাতে পারলে তাদেরও ছাড়িয়ে সেরা হওয়ার সুযোগ তামিমের। সর্বাধিক ১০ ছক্কা মিরপুরে হাঁকিয়েছেন তামিম, তবে সবচেয়ে বেশি ১৪৯টি চার হাঁকিয়েছেন সাকিব। সেদিক থেকেও সেরা হওয়ার সুযোগ ১৪২ চার হাঁকানো তামিমের। আর যেহেতু ইনজুরির কারণে সাকিব দ্বিতীয় টেস্টেও খেলছেন না তাই তামিমের জন্য সবদিক থেকেই সেরা হওয়ার মোক্ষম সুযোগ এটিই। সবচেয়ে বড় কীর্তিটা গড়ার জন্য মাত্র ২১ রান প্রয়োজন ২৮ বছর বয়সী এ বাঁহাতির। ওয়ানডে, টি২০ ক্রিকেটে যেমন বাংলাদেশের পক্ষে সর্বাধিক রানের মালিক তিনি, তেমনি টেস্টেও সবার ওপরে রান করার দিক থেকে। এই মুহূর্তে ৫৩ টেস্ট খেলা তামিম ১০২ ইনিংস ব্যাট করে ৩৯.৩৯ গড়ে রান করেছেন ৩৯৭৯। ৪ হাজার রান পূর্ণ করার সুবর্ণ সুযোগ তার সামনে। টেস্টে সর্বাধিক ৮ সেঞ্চুরি ও সবচেয়ে বেশি ২৫টি অর্ধশতক রয়েছে তার ক্যারিয়ারে। এছাড়া সর্বাধিক ছক্কা (৩৩) ও চারও (৪৮৫) তার দখলে। তবে এসবের বাইরেও অপরিহার্য এই ব্যাটসম্যানের কাছ থেকে বড় ইনিংসই প্রত্যাশা করবে বাংলাদেশ দল। বৃহস্পতিবার সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে ব্যাট হাতে জ্বলে উঠবেন এমনটাই চাওয়া দেশের কোটি কোটি ক্রিকেট ভক্ত-সমর্থকদেরও।
×