ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

যুদ্ধাপরাধী বিচার

নোয়াখালীর চার রাজাকারের বিরুদ্ধে রায় যে কোন দিন

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

নোয়াখালীর চার রাজাকারের বিরুদ্ধে রায় যে কোন দিন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে নোয়াখালীর সুধারামের মোঃ আমির আহম্মেদসহ চার রাজাকারের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন ও আসামি পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষ হয়েছে। রায় ঘোষণার জন্য সিএভি রাখা হয়েছে। অর্থাৎ যে কোন দিন এ মামলার রায় ঘোষণা করা হবে। চেয়ারম্যান বিচারপতি মোঃ শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ মঙ্গলবার এ আদেশ প্রদান করেছেন। এটি হবে ট্রাইব্যুনালের ৩১তম রায়। প্রসিকিউশনের পক্ষে এ মামলায় শুনানি করেন প্রসিকিউটর জাহিদ ইমাম। আসামি পক্ষে ছিলেন আইনজীবী তরিকুল ইসলাম, মিজানুর রহমান, গাজী এমএইচ তামিম ও মাসুদ রানা এ মামলার আসামিরা হলেন- আমির আলী, মোঃ জয়নাল আবদিন, মোঃ আব্দুল কুদ্দুস ও আবুল কালাম ওরফে এ কে এম মনসুর। তাদের মধ্যে মনসুর পলাতক। মামলার আরেক আসামি মোঃ ইউসুফ আলী গ্রেফতার হওয়ার পর অসুস্থ অবস্থায় মারা যাওয়ায় তার নাম মামলা থেকে বাদ দেয়া হয়। প্রসিকিউটর জাহিদ ইমাম পরে জনকণ্ঠকে বলেন, ‘চার আসামির বিরুদ্ধে তিনটি অভিযোগের ওপর প্রসিকিউশন যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেছে। প্রসিকিউশন মনে করে, উপযুক্ত তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে আসামিদের বিরুদ্ধে সবকটি অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে। আমরা আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তির আরজি জানিয়েছি ট্রাইব্যুনালের কাছে।’ এ মামলায় প্রাথমিকভাবে পাঁচ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হলো মামলার অভিযোগ গঠনের আগে আসামি মোঃ ইউসুফ আলী গ্রেফতারের পর অসুস্থ হয়ে মারা যান। পরে ২০১৬ সালের ২০ জুন চারজন আসামিকে হত্যা, লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগের তিন ঘটনায় অভিযুক্ত করে বিচার শুরু করে আদালত। প্রসিকিউশনের আনা অভিযোগে বলা হয়, মুক্তিযুদ্ধের সময় আসামিরা নোয়াখালীর সুধারামে ১১১ জনকে হত্যা করে। মামলার তদন্তের দায়িত্বে ছিলেন প্রসিকিউশনের তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন। তিনিসহ মোট ১৫ জন প্রসিকিউশনের পক্ষে সাক্ষ্য দেন। আসামিপক্ষ ট্রাইব্যুনালে কোন সাক্ষী হাজির করতে পারেনি। তিন অভিযোগ ॥ (১) একাত্তরের ১৫ জুন বেলা দুটা হতে সন্ধ্যা পর্যন্ত নোয়াখালী জেলার সুধারাম থানাধীন ও সোনাপুর গ্রামে আসামি আমীর আহম্মেদ ওরফে রাজাকার আমীর আলী, আসামি আবুল কালাম ওরপে একেএম মনসুর (পলাতক) মোঃ ইউসুফ (বর্তমানে মৃত), আসামি মোঃ জয়নাল আবেদীন এবং আসামি মোঃ আব্দুল কুদ্দুসসহ ২০-২৫ জন রাজাকার ও ৭০-৭৫ জন পাকিস্তানী আর্মিদের নিয়ে আক্রমণ করে গ্রামের ৪১ জনসহ শতাধিক নিরীহ নিরস্ত্র মানুষকে হত্যা, অমানুষিক নির্যাতন, বাড়িঘর লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগ করে। (২) ১৯৭১ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর সকাল অনুমান সাড়ে পাঁচটা হতে সাতটা পর্যন্ত নোয়াখালী জেলার সুধারাম থানাধীন করিমপুর ও দেবীপুর গ্রামে আসামিগণ রাজাকার ও পাকিস্তানী আর্মিদের নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা আহমেদকে হত্যা এবং মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম ওরফে কালাকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া ও পরে তার লাশ না পাওয়া এবং মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মালেক এর বাড়ি ঘর লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগ। (৩) ১৯৭১ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর সকাল ৬টা হতে ১১টা পর্যন্ত সুধারাম থানাধীন রামহরিতালূক, দেবীপুর ও উত্তর চাকলা গ্রামে আসামিরা পাকিস্তানী আর্মিদের নিয়ে আনুমানিক ৩০০ নিরীহ নিরস্ত্র গ্রামবাসীকে আটক করে। রামহরিতালূক স্কুল বোর্ড অফিসের সামনে নিয়ে নির্যাতন করে ৯ জনকে গুলি করে হত্যা করে। এরপর অনেক বাড়ি ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয় ও লুটপাট চালায়।
×