ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাণিজ্য ঘাটতি হ্রাসসহ অমীমাংসিত বিষয়ে আজ ঢাকা-দিল্লী বৈঠক

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

বাণিজ্য ঘাটতি হ্রাসসহ অমীমাংসিত বিষয়ে আজ ঢাকা-দিল্লী বৈঠক

এম শাহজাহান ॥ ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোন দেশে পণ্য রফতানির সুযোগ চায় বাংলাদেশ। অন্যদিকে বাংলাদেশের ঘাটতি পূরণে চিনি রফতানি করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে ভারত। বাংলাদেশ-ভারত সচিব পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে আজ এই দুই বিষয়ে আলোচনা করা হবে। এছাড়া বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনাসহ অমীমাংসিত ইস্যুর দ্রুত সমাধানে দু’দিনব্যাপী ঢাকায় শুরু হচ্ছে বাংলাদেশ-ভারতের বাণিজ্য সচিব পর্যায়ের বৈঠক। সভায় যোগদানের জন্য ভারতের বাণিজ্য সচিব রীতা তিওতিয়ার নেতৃত্বে ভারতীয় প্রতিনিধিদল ইতোমধ্যে ঢাকায় এসে পৌঁছেছেন। বাংলাদেশ দলের নেতৃত্ব দেবেন বাণিজ্য সচিব শুভাশিষ বসু। জানা গেছে, সচিব পর্যায়ের এবারের বৈঠকে বাংলাদেশের বিএসটিআই প্রদত্ত টেস্ট সার্টিফিকেটের ভারত কর্তৃক স্বীকৃতি প্রদান, ভারত থেকে পণ্য আমদানিতে অস্থায়ী বাধা দূর করা, বর্ডার হাট বাড়ানো, বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের ওপর থেকে ভারতের আরোপিত সিভিডি প্রত্যাহার, পাটের ব্যাগ ভারতে রফতানির সমস্যা দূর করা, স্থলবন্দরগুলোর উন্নয়ন, বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্য চুক্তির অগ্রগতি, ভারত কর্তৃক স্পর্শকাতর হিসেবে বাংলাদেশী পণ্যের তালিকা প্রত্যাহার, ভারত থেকে কমলা জাতীয় ফলের আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক প্রত্যাহার, ভারতীয় দুগ্ধজাতীয় পণ্যের বাংলাদেশের শুল্কমুক্ত প্রবেশ ও নতুন আন্তর্জাতিক পাট গ্রুপ প্রতিষ্ঠার বিষয়ে আলোচনা করা হবে। এর বাইরেও সচিব পর্যায়ের বৈঠকে এবার ভারতের বিনিয়োগ এদেশে বাড়ানো, বিদ্যুত আমদানি বৃদ্ধি, বিবিআইএন (বাংলাদশ-ভুটান-ভারত-নেপাল) চুক্তি কার্যকরসহ অমীমাংসিত বিষয়গুলোর ওপর জোর দেয়া হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাণিজ্য সচিব শুভাশিষ বসু জনকণ্ঠকে বলেন, বড় অঙ্কের বাণিজ্য ঘাটতি হ্রাসসহ বিভিন্ন অমীমাংসিত বিষয়ের ওপর সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া হবে এবারের বৈঠকে। তিনি বলেন, বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনতে হলে বাংলাদেশী পণ্যের রফতানি বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে যেসব বিষয়ে চুক্তি রয়েছে তা বাস্তবায়নে সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া হবে। ইতিমধ্যে দুদেশের মধ্যে বাণিজ্যিক চুক্তি করা হয়েছে। আলোচনার মাধ্যমে বাণিজ্য চুক্তি পুরোপুরি কার্যকর করা হবে। জানা গেছে, সীমান্তে বর্ডার হাট কার্যকরে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশ-ভারত। বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্য সচিব পর্যায়ের বৈঠক সামনে রেখে দুদেশের পক্ষ থেকেই এ বিষয়ে কৌশল নির্ধারণ করা হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় সীমান্ত এলাকায় বৈধ বাণিজ্য নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পর্যায়ক্রমে ২২টি বর্ডার হাট চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে দুদেশের। হাটে বেচাকেনার জন্য পণ্য সংখ্যা ৪৭ থেকে বাড়িয়ে ৬০টি করা হতে পারে। বর্তমান বর্ডার হাটে কৃষি, হস্তশিল্পজাত ও খাদ্যসামগ্রী চানাচুর-বিস্কুটের মতো পণ্য বিক্রি হচ্ছে। ভবিষ্যতে ভারি শিল্পে উৎপাদিত হয় এমন পণ্য বিক্রির চিন্তা-ভাবনা চলছে। এছাড়া বর্ডার হাটে বেচাকেনার ক্ষেত্রে যেসব শর্ত রয়েছে তা শিথিল করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। বর্তমানে কুড়িগ্রাম, সুনামগঞ্জ, ফেনী এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া সীমান্তে চারটি বর্ডার হাট চালু রয়েছে। আগামী বছরের মধ্যে আরও ৬টি বর্ডার হাট চালু করার কাজ এগিয়ে নিচ্ছে বাংলাদেশ-ভারত। জানা গেছে, ২০১১ সালে ভারত বাংলাদেশী পণ্য (মদ ও সিগারেট ছাড়া) আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকারের ঘোষণা দিয়ে রেখেছে। দুটি দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণও ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অতিক্রম করেছে। বছরে ভারত থেকে ৬ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করলেও বাংলাদেশ রফতানি করে মাত্র ৮০০ মিলিয়ন ডলারের পণ্য। ব্যবসায়ীদের মতে, এই বাণিজ্য বৈষম্য দূর করতে হলে বাংলাদেশের রফতানি পণ্যের ওপর আরোপিত এ্যান্টিডাম্পিং ও কাউন্টার ভেইলিং, মানসনদ, অশুল্ক বাধার মতো মাঝপথের সব প্রতিবন্ধকতা দূর করতে হবে। এজন্য আমলাতান্ত্রিক জটিলতাকে পাশ কাটিয়ে দুদেশের রাজনৈতিক সদিচ্ছাকে কাজে লাগাতে হবে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ ও সংগঠনটির সাবেক প্রথম সহসভাপতি আবুল কাশেম আহমেদ দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধির তাগিদ দিয়েছেন। তাদের মতে, প্রতিবেশী এই দেশটির সঙ্গে ভৌগোলিক কারণেই বাণিজ্য বাড়াতে হবে। তাই শুল্ক ও অশুল্কজনিত যেসব সমস্যা রয়েছে তা আগে দূর হওয়া প্রয়োজন। এক্ষেত্রে দুদেশের আন্তরিক ও ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে আলোচনার টেবিলে বসা প্রয়োজন। শুধু তাই নয়, বাণিজ্য চুক্তি বাস্তবায়নের তাগিদ দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দুদেশের উন্নয়নে যেসব চুক্তি করেছেন তা দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। এদিকে বেসরকারী গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা মতে, অবকাঠামো, শুল্ক ও বন্দর সংক্রান্ত অসুবিধাগুলো, অশুল্ক বাধা এবং ঝামেলাপূর্ণ রফতানি প্রক্রিয়ার কারণে বাণিজ্য ঘাটতি কমানো যাচ্ছে না। এছাড়া বাংলাদেশের প্রায় ২০ শতাংশ রফতানি আয় হয় পাট ও পাটজাত পণ্য থেকে। কিন্তু ভারত পাটপণ্য রফতানিতে এ্যান্টিডাম্পিং শুল্কারোপ করেছে। এতে রফতানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তবে ভারত-বাংলাদেশের অসম বাণিজ্য নিয়ে গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর জানিয়েছেন, বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে বিরাজমান বাণিজ্য ঘাটতি থাকলেও তা ক্রমান্বয়ে কমিয়ে আনা সম্ভব। দরকার শুধু সদিচ্ছা ও সমতাভিত্তিক বাণিজ্যনীতি। বাংলাদেশের রফতানিযোগ্য পণ্যের ওপর অশুল্ক বাধা কমিয়ে আনার মাধ্যমে দুদেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনা সম্ভব। এ প্রসঙ্গে এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মোঃ সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন জনকণ্ঠকে বলেন, একটি ইতিবাচক রোডম্যাপ নিয়ে এগোচ্ছে দুই দেশ। কিন্তু বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে এক ধরনের বাণিজ্যিক ভারসাম্যহীনতা বিরাজ করছে। এজন্য আমলাতান্ত্রিক জটিলতাকে দূরে সরিয়ে দুদেশের রাজনৈতিক সদিচ্ছাকে কাজে লাগানো প্রয়োজন। আশা করছি, বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে বাণিজ্য ঘাটতি কমে আসবে।
×