ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলা ভাষায় সর্বপ্রথম বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক আবুল কাসেম ১৯৪৬ সালে। তিনি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিভাগের প্রভাষক পদে কর্মরত ছিলেন। পদার্থ বিজ্ঞানের ক্লাসে তিনি প্রথম বাংলা ভাষায় লেকচার দিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেন। বিশেষজ্ঞদের মতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসে বাংলায় বক্তব্য দেখা তখনকার সময়ে ছিল অত্যন্ত দুঃসাহসিক এবং অসম্ভব কাজ। অদম্য সাহস আর দৃঢ় মনোবল নিয়ে অধ্যাপক আবুল কাসেম এই অসম্ভবকে সম্ভব করেছিলেন। তখন থেকেই তিনি বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার সুপ্ত বাসনা লালন করতে থাকেন। এর আগ থেকে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার স্বপক্ষে অনেকে আলোচনা লেখালেখি করলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকাশ্যে বক্তব্য প্রদানের ঘটনা ছিল এটাই প্রথম। এ ঘটনার মধ্য দিয়ে অধ্যাপক আবুল কাসেমের মানপত্রে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার আন্দোলন দানা বাঁধে। পরবর্তীকালে দেশ বিভাগের ১৭ দিনের মাথায় তমুদ্দিন মজলিস প্রতিষ্ঠা করে তিনি এদেশে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন শুরু করেন। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার সমর্থনে ১৯৪৭ সালের ২৩ জুন পত্রিকায় প্রকাশিত হয় প্রথম চিঠি। স্বাধীনতা পত্রিকায় ‘পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা শিরোনামে এই চিঠি প্রকাশিত হয়। সম্পাদক বরাবর ওই চিঠিটি লিখেছিলেন আয়েশা বেগম নামের একজন। চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন কেউ কেউ বলেন, পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের দুটি আলাদা ভাষা না হয়ে একটি ভাষা হওয়া উচিত। তাই যদি হয় তাহলে বাংলাভাষাকেই সমগ্র পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করতে হয়। ’৪৭ সালের ৫ অক্টোবর তারিখে দৈনিক আজাদের মহিলা মাহফিলে আয়েশা বেগমের ভাষা সমস্যা শীর্ষক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। ভাষা সমস্যা শীর্ষক প্রবন্ধটি বাংলা ভাষা সমস্যা সম্পর্কে কোন মহিলা কর্তৃক লিখিত প্রথম প্রবন্ধ। এর পূর্বে বাংলাভাষা সমস্যা নিয়ে কোন মহিলা কোন প্রবন্ধ লেখেনি। এদিকে মহিলা ছদ্মনামেও বাংলায় ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় প্রথম প্রবন্ধ রচনা করেন আব্দুল হক। প্রবন্ধটির নাম ছিল ‘পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা।’ রাষ্ট্রভাষা বাংলার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার স্বপক্ষে এটা ছিল আব্দুল হকের চতুর্থ প্রবন্ধ এবং মহিলা ছদ্মনামে লিখিত প্রথম প্রবন্ধ। মিসেস এম এ হক ছদ্মনামে সাপ্তাহিক বেগম পত্রিকায় ১৯৪৭ সালের ৩ আগস্ট সংখ্যায় প্রবন্ধটি প্রকাশিত হয়। প্রবন্ধটি মহিলাদের এতই অনুপ্রাণিত করেছিল যে এরপর থেকে অনেক মহিলা বাংলাভাষা বাংলার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার স্বপক্ষে লিখা শুরু করেন।
×