ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

রিপোর্টারের ডায়েরি ॥ আবহমান গ্রাম-বাংলার পলো উৎসব

প্রকাশিত: ০৩:৫১, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

রিপোর্টারের ডায়েরি ॥ আবহমান গ্রাম-বাংলার পলো উৎসব

শুক্রবার সকালে আলমখালী গ্রাম থেকে মন্টু দা ফোনে জানালেন তাদের এলাকায় আজ মাছ ধরার পলো উৎসব অনুষ্ঠিত হবে। খবর পেয়ে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আলমখালী গ্রামে যাই। সেখানে আবহমান গ্রাম-বাংলার পলো উৎসব অনুষ্ঠিত হলো। মাগুরা সদর উপজেলার হাজরাপুর ইউপির গৌরীচরণপুর গ্রামের গাঁওকামড়ার বিলে এই পলো উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ১০টায় মাগুরা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পংকজ কুমার কু-ু আনুষ্ঠানিকভাবে মাছ ধরার উৎসবের উদ্বোধন করেন। বিলে সকলে মিলে মাছ ধরতে হাজার মানষের ভিড় জমে। এ যেন গ্রাম-বাংলার এক চিরায়ত উৎসব। সেখানে গিয়ে কথা হয় সদর উপজেলার হাজরাপুর ইউপির চেয়ারম্যান কবির হোসেনের সঙ্গে। তিনি এ উৎসবের অয়োজন করেছেন। মাগুরা জেলা ছাড়াও পার্শ্ববর্তী ঝিনাইদহ জেলা থেকে প্রায় ১০ হাজার মানুষ পলো নিয়ে মাছ ধরতে আসেন। সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা দুই ঘণ্টা মাছ ধরার সময় নির্ধারণ করা হয়। পলো নিয়ে ছেলে-বুড়ো বিভিন্ন বয়সের মানুষ মাছ ধরতে নেমে পড়েন। বিল যেন মাছ ধরার ক্ষেত্রে পরিণত হয়। বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ধরতে পেরে সকলেই খুশি। কয়েকদিন ধরে সবাইকে মাছ ধরার পলো উৎসবের কথা ঘোষণা করা হচ্ছিল। ফলে লোকের ঘাটতি হয়নি। সকলে পলো হাতে মাছ ধরে বাড়িতে ফিরছেন। এ যেন গ্রাম-বাংলার এক উৎসব। হাজরাপুর ইউপি চেয়ারম্যান কবির হোসেন আরও জানালেন, সদর উপজেলা মৎস্য বিভাগের সহযোগিতায় এই পলো উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। এই গাঁওকামড়ার বিলে ১৭ মণ মাছের পোনা অবমুক্ত করা হয়েছিল। সেই মাছ বড় হয়েছে। বিলের পানি কমেছে। তাই গ্রামবাসীদের মাছ ধরার জন্য এই উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। চেয়ারম্যান জেলা পরিষদ পংকজ কুমার কু-ু জানালেন, আবহমান গ্রাম-বাংলার এই পলো দিয়ে মাছ ধরার আয়োজন করা হয়েছে। হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘটেছে। এ যেন এক মহোৎসবে রূপ নিয়েছে। প্রায় ঘণ্টা খানেক সেখানে অবস্থান করে মাছ ধরা দেখি। এরপর সেখান থেকে মাগুরার উদ্দেশে রওনা হই। ফেরার পথে দেখি পলো হাতে সকলে বাড়ি ফিরছেন। সকলের হাতে মাছ। তাদের চোখে-মুখে বিজয়ের হাসি। এ যেন নির্মল বিনোদনের এক আদি উৎসব, যার জন্য গ্রামবাসীরা অপেক্ষায় থাকবেন একটি বছর... সঞ্জয় রায় চৌধুরী, মাগুরা কম্পোজ না জানলে চাকরি হবে না! অনেক ইচ্ছা ছিল, খেলোয়াড় হব। হতে পারিনি। কেন, তার কিছু কারণ আছে। ছাত্রাবস্থায় ফুটবল, ক্রিকেট ও দৌড়ে খুব ভাল ছিলাম। ফুটবলে ছিলাম ভাল উইঙ্গার ও ফরোয়ার্ড। ক্রিকেটে নরসিংদী প্রথম বিভাগে খেলেছি (পলাশ ইউনাইটেড ক্লাবের হয়ে, ১৯৯৪ সালে)। এছাড়া নরসিংদী, ঢাকা, সাভারসহ বিভিন্ন স্থানে প্রায় ৫০০- এর মতো ‘খ্যাপ’ ম্যাচ খেলেছি। ছিলাম অলরাউন্ডার। মিডিয়াম পেসার ও টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান। ফিল্ডিংয়েও ছিলাম চৌকস। প্রয়োজনে করতে পারতাম উইকেট কিপিংও। খেলাটা দারুণ এনজয় করতাম। কিন্তু করলে কি হবে, ওই সময়টায় (১৯৮৭-৯৮) বাংলাদেশে ক্রিকেট খেলাকে পেশা হিসেবে নেয়ার প্রেক্ষাপট তখনও তৈরি হয়নি, যেটা এখন ডাল-ভাত হয়ে গেছে। তা ছাড়া এ ব্যাপারে অভিভাবকদেরও সম্মতি পাইনি। তাই আমাকে অন্য পথে হাঁটতে হয়েছে। প্রথমে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে বছর চারেক চাকরি করি। কিন্তু খেলার নেশাটা ছিলই। তাই ২০০৩ সালে এক রকম ঝগড়া করেই ক্রীড়া সাংবাদিকতায় ঢুকে পড়ি। ক্লাস সিক্সে পড়ার সময় থেকেই ছড়া, কবিতা, গল্প লিখতাম। ক্রীড়া সাংবাদিকতায় পরে যা ভীষণভাবে কাজে লেগেছে। পাক্ষিক ক্রীড়ালোক ম্যাগাজিনে কাজ করি ২০০৩ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত। একই সঙ্গে দৈনিক ইত্তেফাকের সাপ্তাহিক ফিচার পাতা ‘ক্রীড়াঙ্গন’-এ কাজ করি ২০০৭ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত। এখানে কাজ করে দারুণ আনন্দ পেলেও আর্থিকভাবে মোটেও সচ্ছলতা আসেনি। তাই এই সময়ে বাড়তি আয়ের জন্য কোচিংয়ে শিক্ষকতা, প্রাইভেট টিউশনি, নেটওয়ার্কিং ব্যবসাও করতে হয়েছে। একসঙ্গে তিন-চারটি কাজ! অমানুষিক পরিশ্রম যাকে বলে। ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বরে পাক্ষিক ক্রীড়ালোক ম্যাগাজিন ছেড়ে দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকায় যোগদান করি। এখানে কাজের ধরন একেবারেই আলাদা, ভীষণ গতিশীল ও চ্যালেঞ্জিংও বটে। স্টেডিয়ামে গিয়ে খেলা দেখা, বিভিন্ন খেলোয়াড়, কোচ-কর্মকর্তা-সংগঠকদের সঙ্গে সশরীরে কথা বলতে পারা, খেলা কভার করতে বিদেশে যাওয়া- এগুলোর আকর্ষণেই চাপ নিয়ে সবকিছু আবার নতুন করে শিখি। শৈশব-কৈশোরে যেসব খেলোয়াড়দের খেলা দেখেছি, তাদের কথা শুনেছি আজ তাদের সঙ্গে সময় কাটাই, বেশিরভাগ সময় ফিল্ড (স্টেডিয়াম/ক্রিয়া ফেডারেশন) থেকেই নিউজ ল্যাপটপে লিখে অফিসে ই-মেইল করে পাঠাই। এ সবই দারুণ আনন্দদায়ক। তবে এ পেশার সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডি হলো- সাপ্তাহিক ছুটি বছরে মাত্র ২১ দিন পাওয়া যায়। মাঝে মাঝে জরুরী প্রয়োজনে ছুটি বাতিলও হয়ে যায়। এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হচ্ছেÑ প্রিয়জনরা ভুল বোঝে। তারা মনে করে ইচ্ছে করেই তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করি না। ফলে সামাজিকতা রক্ষা করতে না পারায় অনেকের সঙ্গেই সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায়! তবে সান্ত¦না হলো- খেলোয়ার না হতে পারলেও খেলাধুলার সাংবাদিক হয়েছি। মোট কথা, শৈশবের মতো এখনও সেই পরমপ্রিয় খেলাধুলার সঙ্গেই আছি। আজ শোনাব কিভাবে জনকণ্ঠে যোগ দিলাম, সেই গল্প। ২০০৯ সালের কথা। আগস্ট মাস। তখন ক্রীড়ালোকে সহকারী সম্পাদক হিসেবে কাজ করি। পাশাপাশি কাজ করি ইত্তেফাকের সাপ্তাহিক ক্রীড়া ফিচার পাতার সহকারী সম্পাদক হিসেবেও। সে সময়ের ক্রীড়ালোকের সিনিয়র প্রতিবেদক ও আমার বন্ধুবর হুমায়ুন সম্রাট আমাকে বললেন, ‘এভাবে ম্যাগাজিনে পড়ে থাকলে (২০০৩ সালে ক্রীড়ালোকে শুরু করি পাঠক হিসেবে লেখা, তারপর সহকারী সম্পাদক হই। আমার গুরু ছিলেন প্রয়াত মাহাবুবুল হাসান নীরু) উন্নতি করতে পারবেন না। জাতীয় কোন দৈনিক পত্রিকায় ঢুকুন।’ একদিন তিনি বললেন, ‘জনকণ্ঠে যান। খবর পেয়েছি ওখানে স্পোর্টসে লোক নেবে।’ গেলাম। ইন্টারভিউ দিলাম। ভালই করলাম। সঙ্গে সঙ্গে জনকণ্ঠের ক্রীড়া সম্পাদক মজিবর রহমান ভাই জানিয়ে দিলেন আমাকে তার পছন্দ হয়েছে (অবশ্য চেহারা দেখে নয়!), কাল থেকে যেন কাজে যোগদান করি। আমি তো মহাখুশি। সালাম জানিয়ে চলে আসার সময় হঠাৎ মজিবর ভাই জিজ্ঞেস করলেন, আমি কম্পিউটারে বাংলা কম্পোজ করতে জানি কি-না। আমি বললাম, ‘না, জানি না।’ তিনি বললেন, ‘না জানলে কিভাবে হবে? ক্রীড়ালোকে এত বছর তাহলে কিভাবে লিখতে? ‘বললাম, ‘কাগজে হাতে লিখে।’ দৈনিক পত্রিকায় ওসব এখন অচল, যদি এখানে চাকরি করতে চাই, তাহলে অবশ্যই যেন বাংলা কম্পোজ শিখে তারপর এখানে আসি। সাফ জানিয়ে দিলেন তিনি। হায়! আকাশ ভেঙ্গে পড়ল মাথায় ওপর! বের হয়ে এলাম একরাশ হতাশা নিয়ে। তার পরের ঘটনা আরেকদিন বলব। -রুমেল খান
×