ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

দাবি আদায়ে চাপ

প্রকাশিত: ০৩:৫০, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

দাবি আদায়ে চাপ

নির্বাচনী বছরকে সামনে রেখে নানামুখী আবদার দৃশ্যমান হচ্ছে। যৌক্তিকতার ধার না ধেরে অযৌক্তিক সব দাবি-দাওয়াকে তুলে ধরা হচ্ছে যত্রতত্র, যখন তখন। অযাচিতভাবে অত্যধিক প্রাপ্তির আশায় অনশনবরণ করে নিচ্ছেন কেউ কেউ। তা-ও আবার আমরণ। মরণপণ এসব দাবি আদৌ বাস্তবায়ন সম্ভব কিনা সেসব ভাবার প্রয়োজনও মনে করেন না দাবিতে সোচ্চার কণ্ঠধারীরা। ধারণা তাদের চাপ প্রয়োগ করলেই সুড়সুড় করে সব দাবি-দাওয়া মেনে নেয়া হবে। আর এতেই তাদের কেল্লা ফতে যেন। নীতি, নৈতিকতা, বাস্তবতার কোন লেশ নেই এসব দাবির বিষয়বস্তুতে। কিন্তু সরকারী দল যেহেতু চলতি বছরের নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে তাই ভোটকে সামনে রেখে চাপ প্রয়োগ করা হলে সরকার নমনীয় হবে। বাধ্য হবে দাবি পূরণে। কিন্তু এভাবে চাপ দিয়ে কিছু আদায় করা সম্ভব কিনা সে প্রশ্ন থেকেই যায়। এমপিওভুক্তির দাবিতে ছয়দিন ধরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আসন গেঁড়ে বসে অনশন নামক ক্ষুধাবিরোধী কর্মসূচী পালন করছিলেন প্রাথমিক শিক্ষকরা। প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাস পেয়ে তারা খাদ্য গ্রহণে ফিরে যান। নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হাজির হন বিজয়ী বেশেই সম্ভবত। এর আগে সরকার দাবি ছাড়াই ১ হাজার ৬২৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করে ২০১০ সালে। এরপর থেকে এই প্রক্রিয়া বন্ধ রয়েছে। বাস্তবতাবিবর্জিত বলেই শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ নিয়ে আর অগ্রসর হয়নি। এবার প্রাথমিক শিক্ষকরা সরে যাওয়ার পর ইবতেদায়ি মাদ্রাসা শিক্ষকরা প্রেসক্লাবের সামনে অনশনে বসেছেন। এদের দেখাদেখি কওমি মাদ্রাসাওয়ালারা আসন পেতেছে ক্লাবের সামনে। এ রকম আসন গেঁড়ে বসা গেলে দাবি আদায় সহজ হয় বলে তারাও মনে করছেন। করতেই পারেন। বিভিন্নমুখী শিক্ষার জালে বিস্তৃত দেশ আজ। সমন্বয়হীনতা এই ব্যবস্থাকে পর্যুদস্ত করছে। কোন কোন শিক্ষক সরকারী সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন নীতিমালার ভিত্তিতে। যারা সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তির স্তরে উন্নীত হতে পারেননি তারাও অনুরূপ সুবিধা চাইছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ প্রসঙ্গে বলেছেনও ‘চাপ দিয়ে কিন্তু কেউ কিছু আদায় করতে পারবেন না। কেউ যদি মনে করেন সরকারের এটা শেষ বছর আর অমনি দাবি করলেই আমরা সব শুনে ফেলব ... আমি কিন্তু ক্ষমতার পরোয়া করি না। ক্ষমতায় থাকি, না থাকি কিছু আসে যায় না।’ মোক্ষম কথাই বলেছেন সরকারপ্রধান। কারণ সরকারকে তার পরিকল্পনার বাইরে বেরিয়ে কিছু করা সম্ভব নয়। বাজেট নিয়ে পরিকল্পিতভাবে চলতে হয়। কোথায় কোন্টা সরকারী করতে হবে, কোন্টা করতে হবে না, কোন্ নীতিমালার ভিত্তিতে করতে হবে, তারও একটা নীতিমালা ও বিধিবিধান রয়েছে। যখন তখন যে কেউ দাবি করলে তা পূরণ করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। শিক্ষকদের জীবনমান উন্নয়নে সরকার যে যথেষ্ট আন্তরিক তা গত নয় বছরের শাসনকালেই স্পষ্ট হয়েছে। শিক্ষকরা মানুষ গড়ার কারিগর। তাদের ওপরই নির্ভর করে জাতির ভবিষ্যত। তাই তাদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি হবে অন্যতর। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থাকে আধুনিকীকরণে সরকার সর্বোচ্চ মনোযোগ দিয়ে আসছে। এমনকি তথ্যপ্রযুক্তিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অধিকাংশ কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। ২০২১ সাল পর্যন্ত একাডেমিক ক্যালেন্ডার দেয়া হয়েছে। কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই সেশনজট নেই। সুতরাং আজকে শিক্ষকদের যে অংশ দাবি আদায়ে অনড় হয়ে অনশনে নেমেছেন তাদের বাস্তবতা উপলব্ধি করা প্রয়োজন। একদিনেই সবকিছু পূরণ হওয়া সম্ভব নয়। হতে হলে তা হবে ধাপে ধাপে, আলোচনার মাধ্যমে।
×