ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সেই মাতাল চালককে জেলে প্রেরণ, ১২ দিনের রিমান্ড আবেদন

প্রকাশিত: ০৭:৩৮, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

সেই মাতাল চালককে জেলে প্রেরণ, ১২ দিনের রিমান্ড আবেদন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর ধানম-িতে উল্টো পথে দামী বিএমডব্লিউ গাড়ির চাপায় ইতালি প্রবাসীর মৃত্যুর ঘটনার দুই মামলায় মাতাল চালক নাজমুল হুদা আল আমিন (৩০) এর জন্য ১২ দিনের রিমান্ড আবেদন করেছে পুলিশ। এতে আদালত ৮ ফেব্রুয়ারি শুনানি দিন ধার্য করে নাজমুলকে কারাগারে পাঠিয়েছে। পুলিশ জানায়, নাজমুল মাদকাসক্ত। প্রায় রাতে সে ও তার বিদেশী স্ত্রী ও বন্ধুদের নিয়ে ‘লং ড্রাইভে’ বের হন। মদপান করে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালাত। এমনকি উল্টোপথে গাড়ি চালানোর সময়ও বেপরোয়া গতিতেই গাড়ি চালাত। গ্রেফতারকৃত নাজমুল তার অপরাধ স্বীকার করেছে। পুলিশ জানায়, মদ্যপ অবস্থায় বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালিয়ে প্রাণনাশের অভিযোগ এনে নিহতের শ্যালক হুমায়ুন কবীর শনিবার ধানমণ্ডি থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। এতে নাজমুলসহ তার সহযোগীদের আসামি করা হয়েছে। অপরদিকে হাজারীবাগ থানায় ঢুকে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় নাজমুলের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করে পুলিশ। রবিবার এই দুই মামলায় তাকে ১২ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। ধানম-ি থানার মামলার বাদী নিহতের শ্যালক মোঃ হুমায়ুন মোল্লা অভিযোগ করেন, শুক্রবার রাত সোয়া ১টার দিকে বিএমডব্লিউ গাড়ির চালক নাজমুল মাতাল অবস্থায় ধানম-ি ২৭ নম্বর রোডের হোয়াইট হল কমিউনিটি সেন্টারে মেয়ে অমিকা রহমানের বিবাহ অনুষ্ঠান শেষে বর অতিথিদের বিদায় দিচ্ছিলেন। এ সময় নাজমুলের গাড়ি যানজটে আটকে পড়ে। এতে তার বর যাত্রীদের দায়ী করে ক্ষিপ্ত হয়ে নাজমুল তার বন্ধু কামরুল হাসান সানিসহ কয়েকজন মিলে বরের গাড়ির গ্লাসে ধাক্কাধাক্কি করতে থাকেন। গালিগালাজ করে হুমকি ধমকি দেয়। ক্ষিপ্ত হয়ে তারা প্রতিবাদকারীদের মারধর শুরু করেন। পরে পুলিশ এলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। এ ঘটনায় তিনি খুবই ‘অপমানিত’ হন। এর প্রতিশোধ নিতে কিছুক্ষণ পর আবারও ফিরে আসেন। উল্টো পথে তিনি তার দামী গাড়ি চালিয়ে কমিউনিটি সেন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকজনের ওপর গাড়ি তুলে দেন। এ সময় মোটরসাইকেল আরোহী ইতালি প্রবাসী আব্দুল মোতালেব (৫৫) সহ ৬/৭ জন গুরুতর আহত হয়। পরে মধ্যরাতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে জরুরী বিভাগে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মোতালেবের মৃত্যু হয়। পুলিশ জানায়, নাজমুল এ ঘটনা ঘটিয়েই ক্ষান্ত হননি। তিনি গাড়ি নিয়ে চলে যান হাজারীবাগ থানায়। সেখানে গিয়ে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের মারধর করেন। পরে পুলিশ তাকে আটক করে। নাজমুলের বাসা হাজারীবাগে। তার বাবা সামসুল হুদা ওরফে হুদু বিশিষ্ট চামড়া ব্যবসায়ী ও ঢাকা মহানগর ১৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সভাপতি। নাজমুল নিজেও একজন ব্যবসায়ী। ধানমণ্ডি থানা পুলিশ জানায়, নাজমুল মাদকাসক্ত। তিনি প্রায় রাতে তার স্ত্রী ও বন্ধুদের নিয়ে ‘লং ড্রাইভে’ বের হন। মদপান করে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালান। এমনকি উল্টোপথে গাড়ি চালানোর সময়ও তিনি বেপরোয়া গতিতেই গাড়ি চালান। ধানম-ি থানার ওসি আব্দুল লতিফ জনকণ্ঠকে জানান, মদ্যপ অবস্থায় বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালিয়ে প্রাণনাশের অভিযোগ এনে নিহত প্রবাসী আব্দুল মোতালেবের শ্যালক হুমায়ুন কবীর ধানমণ্ডি থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। এতে নাজমুলসহ তার সহযোগীদের আসামি করা হয়েছে। এই মামলায় সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছিল আসামি নাজমুলকে। আদালত আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি রিমান্ডের শুনানির দিন ধার্য করেছে। এদিকে পুলিশের ধানমণ্ডি জোনের সহকারী কমিশনার আবদুল্লাহ কাফী জানান, নাজমুল মদপান করে গাড়ি চালাচ্ছিলেন। ঘটনার সময় গাড়িতে তার স্ত্রীও ছিলেন। কনের যাত্রী মোতালেব নামে এক ইতালি প্রবাসীকে গাড়িচাপা দিয়ে নাজমুল হাজারীবাগ থানায় চলে যান। থানার সামনে রাখা কয়েকটি মোটরসাইকেলও চাপা দেন তিনি। পরে পুলিশের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। এ সময় একজন পুলিশ সদস্যকে তিনি মারধর করেন। তার গাড়িটি জব্দ করা হয়েছে। এদিকে হাজারীবাগ থানা পুলিশ জানায়, নাজমুল এতটাই মদ্যপ ছিলেন যে, তার নিজের ওপর কোন নিয়ন্ত্রণ ছিল না। পরে তাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে পথচারীদের গাড়িচাপা দেয়ার কথা স্বীকার করেন। পরে তাকে ধানমণ্ডি থানায় হস্তান্তর করা হয়। তার গাড়িটিও (ঢাকা মেট্রো-গ-৩৩০০৬৫) ধানমণ্ডি থানা পুলিশের হেফাজতে আছে। হাজারীবাগ থানার ওসি মীর আলিমুজ্জামান জনকণ্ঠকে জানান, অভিযুক্ত নাজমুল একজন ব্যবসায়ী। তিনি হাজারীবাগ এলাকায় থাকেন। চীনের একটি মেয়েকে তিনি বিয়ে করেছেন। রাতে তাকে নিয়েই বাইরে বের হয়েছিলেন। থানার পাশেই আসামি নাজমুল হুদার বাসা। মাতাল অবস্থায় গাড়ি নিয়ে আসার সময় থানার সামনে কয়েকটি মোটরসাইকেল চাপা দেয়। এতে এক পুলিশ সদস্য জিজ্ঞেস করলে থানায় এসে হট্টগোল লাগিয়ে দেয়। সে সিন ক্রিয়েট করার চেষ্টা করে। আর তখনই পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। তার বিরুদ্ধে পুলিশের ওপর হামলা ঘটনায় মামলা হয়েছে। ওসি জানান, এই মামলায় রবিবার তাকে পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়। আদালত এই মামলার শুনানি ৮ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করে। নিহতের ভাই আলমগীর হোসেন জানান, মোতালেব পরিবার নিয়ে প্রায় ১৫ বছর ধরে ইতালিতে ছিলেন। ২ মাস আগে তিনি দেশে আসেন। পশ্চিম ধানমণ্ডির ৪৭/এ নম্বর আমাদের একটি বাড়ি রয়েছে। দেশে আসার পর তিনি ওই বাসায়ই ছিলেন। তার বাবার নাম আব্দুল খালেক। তার গ্রামের বাড়ি বিক্রমপুর-মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলায়। নিহতের স্ত্রী নার্গিস বেগম জানান, তার স্বামী ইতালি প্রবাসী। গত ২ মাস আগে তিনি ছুটিতে বাড়িতে আসেন। শুক্রবার রাতে তিনি দাওয়াত খেয়ে বাসায় ফিরছিলেন। সেখান থেকে বাসায় ফেরার পথে নাজমুল হুদার গাড়ি তাকে ধাক্কা দেয়। এতে তিনি নিহত হন। গাড়ির চালক মাতাল ছিল বলে তিনি দাবি করেন।
×