এ্যাজমা বা হাঁপানি
এ্যাজমা বা হাঁপানি হলো শ্বাসনালীর দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহজনিত রোগ। এর ফলে শ্বাসনালী সঙ্কুচিত এবং সংবেদনশীল হয়ে পড়ে। সারা বিশ্বে প্রায় ৩০ কোটি মানুষ এই রোগে ভুগছেন। বাংলাদেশেও এই রোগের প্রকোপ কম নয়। ১৯৯৯ সালে পরিচালিত প্রথম জাতীয় এ্যাজমা প্রিভিলেন্স (হাঁপানির ব্যাপকতা) সমীক্ষা মতে, এদেশে প্রায় ৭০ লাখ মানুষ এ রোগে ভুগছে। এর মধ্যে ৪০ লাখই শিশু, যাদের বয়স ১ থেকে ১৫ বছর। এছাড়া শতকরা ৯০ ভাগ রোগীই আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত।
এ্যাজমা রোগের উপসর্গ
এ রোগের ফলে শ্বাসনালী সঙ্কুচিত বা সংবেদনশীল হয়ে পড়ে। ফলে কাশি, শ্বাসকষ্ট, বুকে চাপ অনুভব, বুকে বাঁশির মতো আওয়াজ বা বুকে ব্যথা হতে পারে। কারও কারও ক্ষেত্রে কেবল কাশির মাধ্যমেই এই রোগটি প্রকাশ পায়। সাধারণ এই উপসর্গগুলো রাতে বেশি দেখা দেয়।
এ রোগের কারণ এবং যেসব কারণে এর উপসর্গ বাড়ে
এ্যাজমা রোগের সুনির্দিষ্ট কোন কারণ জানা যায়নি। তবে বংশগত ও পরিবেশগত এই দুটি কারণ এ্যাজমার জন্য দায়ী। সাধারণত কিছু কিছু জিনিস আছে যা এ্যাজমার উপসর্গকে বাড়িয়ে দিতে পারে। তাদের বলা হয় এ্যাজমার উত্তেজক। সকল এ্যাজমা রোগীর আবার একই উত্তেজক রোগের প্রকোপ বাড়ায় না। উত্তেজক আবার দুই ধরনের হয়ে থাকে; ১. শ্বাসনালীর বা শরীরে প্রবেশ করে যা রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হিস্টামিন নিরসন করে রোগের উপসর্গকে বাড়িয়ে দেয় তাদের বলা হয় এ্যালার্জেন। যেমন : ফুলের রেণু, ফাঙ্গাস, ছত্রাক, ধুলা, মাইন্স, পশু-পাখির লোম, তেলাপোকা, পশম বিশিষ্ট খেলনা, কিছু কিছু খাবারÑ যেমন : চিংড়ি, ইলিশ মাছ, গরুর মাংস ইত্যাদি। অন্যদিকে যা শ্বাসনালীতে প্রবেশ করে কোন রাসায়নিক প্রক্রিয়া দ্বারা এর উপসর্গ বাড়িয়ে দেয় তাদের বলা হয় ইরিটেন্ট। যেমন : সিগারেটের ধুঁয়া, কাঠ বা রান্নার চুলার ধুঁয়া, রং বা পারফিউমের গন্ধ, মোটরযান বা কলকারখানার ধুঁয়া ইত্যাদি। এ ছাড়াও শ্বাসনালীর যে কোন ধরনের ইনফেকশন, কিছু কিছু ওষুধ, যেমন : এনএসআইও এর জন্য দায়ী। কারও কারও ক্ষেত্রে ব্যায়াম করার সময় এ রোগের প্রকোপ বেড়ে যায়। তাছাড়া ঋতু পরিবর্তনের সময় আবহাওয়া পরিবর্তন বা হঠাৎ তাপমাত্রার পরিবর্তন হলেও এ্যাজমার উপসর্গ বেড়ে যেতে পারে।
যাদের এ রোগ হওয়ার ঝুঁকি বেশি
১. যদি কারও রক্তের সম্পর্কের কোন আত্মীয়ের এই রোগ থাকে। যেমন : দাদা-দাদি, নানা-নানি, বাবা-মা, ভাই-বোন।
২. যদি কারও অন্য কোন ধরনের এ্যালার্জি-জনিত রোগ; যেমন : চামড়ার এ্যালার্জি, নাকের এ্যালার্জি, চোখের এ্যালার্জি থাকে।
৩. কেউ যদি শিশুকালে ব্রঙ্কাইটিসে ভোগে।
৪. শরীরের ওজন বেশি হলে।
৫. ধূমপান করলে।
৬. গর্ভাবস্থায় মা যদি ধূমপান করে তবে গর্ভের শিশুর এ রোগ হতে পারে।
৭. যদি কেউ পেশাগত কারণে দীর্ঘদিন কোন এ্যালার্জেন বা ইরিটেন্টের সংস্পর্শে থাকেন।
কীভাবে এ রোগ নির্ণয় করা যায়?
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এ রোগটি, রোগের ইতিহাস এবং শারীরিক পরীক্ষার মাধ্যমে নির্ণয় করা যায়। তবে কখনও কখনও লাং ফাংশান টেস্ট বা ইসপাইরোমেট্রি পিক ফ্লো মিটার, কফের ইজোনোফিল পরীক্ষা বা মিথাফেলিন চ্যালেঞ্জ টেস্টের মাধ্যমে এ রোগটি নির্ণয় করা যায়।
এ্যাজমা রোগের চিকিৎসা
এ চিকিৎসার মূল হলো শ্বাসনালীর প্রদাহ কমিয়ে দেয়া, যাতে রোগী দীর্ঘদিন উপসর্গ ছাড়া থাকতে পারেন। এছাড়া রোগীকে এটা জানানো যে, সে যেন তার রোগের উপসর্গ বাড়িয়ে দেয়া বিষয়গুলো পরিহার করেন। হঠাৎ কষ্ট হলে তাৎক্ষণিক নিরাময়ের জন্য শ্বাসনালীর প্রসারিত করার ওষুধ ব্যবহার করতে হবে। তবে সব ধরনের চিকিৎসার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলোÑ স্টেরোয়েড ইনহেলার নিয়মিত ব্যবহার করা।
এই ধরনের ইনহেলার প্রদাহ কমিয়ে শ্বাসনালীর সংবেদনশীনতা কমিয়ে দেয়। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কখনই এই ইনহেলার বন্ধ করা যাবে না। এ রোগের জন্য বাজারে বিভিন্ন ধরনের স্টেরোয়েড ইনহেলার পাওয়া যায়।
এছাড়া প্রদাহ কমানোর জন্য কিছু কিছু মুখে খাওয়ার ওষুধ আছে; যেমন : মন্টিলুকাস। তারপরেও যদি এ্যাজমার উপসর্গগুলো খুব বেশি বেড়ে যায় এবং আপনার দৈনন্দিন কাজকর্ম ব্যাহত করে, তবে অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক
মেডিসিন ও বক্ষব্যাধি বিভাগ
বারডেম জেনারেল হাসপাতাল ও ইব্রাহিম মেডিক্যাল কলেজ
মোবাইল : ০১৯১১৪৬৩৮৮৮