ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশের নারীবন্ধু জায়বা তাহিয়া

প্রকাশিত: ০৭:২২, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

বাংলাদেশের নারীবন্ধু জায়বা তাহিয়া

ডিপ্রজন্ম : সমাজ নিয়ে কাজ করার চিন্তা কখন মাথায় এলো? জায়বা তাহিয়া : আমার যখন উনিশ বছর, তখন আমি একটা সংগঠনে ইন্টার্নশিপ করি। ওই সংগঠনটির নাম হচ্ছে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড সার্ভিসেন ট্রাস্ট। ওখানে আমাকে মহিলা এবং ধর্ষণ নিয়ে গবেষণা করতে বলা হলে আমি দেখতে পাই নারীদের ওপর অনেক অত্যাচার করা হচ্ছে। আমি প্রতিদিন বাসায় গিয়ে কান্নাকাটি করতাম তারপর থেকে সিদ্ধান্ত নিলাম আমি নিজেই এই সমস্যার সমাধান করব। ডিপ্রজন্ম : আমাদের দেশের গর্ব আপনি, কোন প্রেক্ষাপটে ‘ফেম’ এর প্রতিষ্ঠা করলেন? জায়বা তাহিয়া : আমি যখন দেশে ফিরলাম। আমি তখন চিন্তা করলাম নারী নির্যাতন নিয়ে কাজ করতে হলে আমার নিজস্ব একটা সংগঠনের প্রয়োজন আছে। তখন আমি ফেম (ফিমেইল এম্পাওয়ারমেন্ট মুভমেন্ট) প্রতিষ্ঠা করি। প্রতিদিন খবর এর কাগজে এবং টেলিভিশনেই দেখতাম যে নিম্ন শ্রেণীর নারী ও কর্মজীবি নারীরা নির্যাতনের স্বীকার হচ্ছে। যেমন উদাহরণস্বরূপ তারা যখন কর্মস্থলে অথবা স্কুলে যাচ্ছে তখন তারা উত্ত্যক্ত এবং শারীরিক নির্যাতনের স্বীকার হয়। ডিপ্রজন্ম : আপনার নিজের জীবনের গল্পটা যদি পাঠকদের জানাতেন? জায়বা তাহিয়া : আমি জন্ম নিয়েছি ঢাকায়, অনেক ছোটবেলায় কানাডা যাই স্কুল করতে। কানাডাতে আমি কয়েক বছর থেকে ঢাকায়ই ফেরত আসি। ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ঢাকা (ওঝউ)তে ভর্তি হই এবং কয়েকবছর ঢাকায় থাকার পর আমি ইংল্যান্ড চলে যাই। সেখানে আমি ক্রিমিনোলজিতে ব্যাচেলরস করেছি। অনেকদিন দেশের বাইরে কাটানোর পর, একদিন বাবা-মাকে ফোন করে বলি যে দেশে ফেরত আসব আর দেশের অবস্থার পরিবর্তন ঘটাব। বাবা-মা আমাকে প্রথমে বিশ্বাস করল না কিন্তু ‘পরে বলল যা করতে চাও করো কিন্তু বসে থেক না। প্রথমেই পুলিশ স্টাফ কলেজে রিসার্চার হিসেবে কাজ করি তারপর রিসার্চের পর আমি শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নেই আর রিসার্চ করে কি লাভ যদি কোন প্রজেক্ট না করি। তখন আমি নিজের একটা প্রজেক্ট ডিজাইন করি। যেটার নাম প্রজেক্ট আত্মরক্ষা। ওখানে আমরা নারীদের কারাতের মাধ্যমে আত্মরক্ষা শিখানো শুরু করি। তারপর আমি আমার সংস্থা ‘ফেম’ এর মাধ্যমে অন্য প্রজেক্ট করা শুরু করি। ছোটর দিকে বাইরে থাকার পরও সব সময়ে দেশে ফিরে আসতে চাইতাম। ডিপ্রজন্ম : বলছিলেন ‘প্রজেক্ট আত্মরক্ষা’র কথা, এটা কিভাবে নারীকে সুরক্ষা দেয়? জায়বা তাহিয়া : প্রজেক্ট আত্মরক্ষার মাধ্যমে নারীদের আত্মরক্ষা শিখাই। আমরা প্রথম শুরু করি লো ইনকাম এরিয়ায়। যা নারীদের নিয়ে আত্মরক্ষা ট্রেনিং দেয়। পরে দেখা গেল আত্মরক্ষা শুধু শারীরিকভাবে সুরক্ষা করে না, নারীদের আত্মবিশ্বাসও অনেক বাড়িয়ে দেয়। যারা আত্মরক্ষার্থে ট্রেনিং করে যায় তারা তাদের কাজে অনেক নিরাপদ বোধ করে। ডিপ্রজন্ম : বাংলাদেশে আপনার কাজ আলোচনায় এসেছে রানীর এ্যাওয়ার্ড প্রাপ্তির পর। প্রচারের বাইরে থাকাটাই কি জায়বার অভূতপূর্ব সাফল্যের পাথেয়? জায়বা তাহিয়া : আমি যখন প্রথম এই কাজ শুরু করি আত্মরক্ষা নিয়ে, আমি কোন সময়ে প্রচারের মুখী হইনি। আমার একটাই উদ্দেশ্য ছিল যে আমার আত্মরক্ষার ম্যাসেজটা আমার সংগঠন থেকে সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে দেয়া এবং এই কাজটি আমি তৃণমূল থেকে শুরু করি। যাদের নিয়ে আমি কাজ করছি, ওটা অনেক চ্যালেঞ্জ ছিল। হয়তো এসব কারণেই আমাকে এ বছরের রানীর এ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনীত করা হয়েছে। ডিপ্রজন্ম : ব্যক্তিগত জীবনের লক্ষ্য কি? জায়বা তাহিয়া : আমার ব্যক্তিগত জীবনের লক্ষ্য এবং আমার পেশাগত জীবনের লক্ষ্য দুটোই আন্তঃসম্পর্কীয়। আমার লক্ষ্য সব সময়েই ছিল যে আমি একটা নিয়মতান্ত্রিক এবং পজেটিভ জীবন কাটাব। এভাবে আমি আমার ‘ফেম’ এর মেয়েদের কেউ এভাবে ডিসিপ্লিন এবং পজেটিভিটি শিখাব। আমার শেখার কোন শেষ নেই। ডিপ্রজন্ম : ২০১৮ তে রানীর এ্যাওয়ার্ড জিতলেন, পুরস্কার নিতে যাবেন সামনেই। অনুভূতি কেমন? জায়বা তাহিয়া : এত বড় স্বীকৃতি আমি এত তাড়াতাড়ি আশা করিনি। আমি যখন প্রথম সংবাদটা পেলাম আমার নিজের থেকে আমার চোখে পানি আসে এই কথা ভেবে যে আমি বাংলাদেশের নারীদের সম্মান করেছি। এই স্বীকৃতি আমাকে উৎসাহিত করেছে আরও বেশি করে এবং সারা বাংলাদেশের নারীদের জন্য। ডিপ্রজন্ম : কোন পোশাক পরবেন ঠিক হয়েছে? জায়বা তাহিয়া : যেহেতু শাড়ি বাংলাদেশের জাতীয় পোশাক। বাংলাদেশের সংস্কৃতির সাঙ্গে মিল রেখে দেশীয় শাড়ি পরার পরিকল্পনা রয়েছে। ডিপ্রজন্ম : তরুণ প্রজন্মের উদ্দেশে বলুন- জায়বা তাহিয়া- বাংলাদেশের উন্নতির জন্য, তরুণরাই বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে পারে তাই আমি মনে করি নারীর ক্ষমতায়নে কাজ করার জন্য এখনই সময় এগিয়ে আসার।
×