ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শেখ জামালকে হারিয়ে ফাইনালে আরামবাগ

প্রকাশিত: ০৬:৪৩, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

শেখ জামালকে হারিয়ে ফাইনালে আরামবাগ

রুমেল খান ॥ দুই দলই এই আসরে চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি কখনও। তবে অনেকটাই কাছকাছি গিয়েছিল শেখ জামাল ধানম-ি ক্লাব লিমিটেড। ২০১২ সালে তারা শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র লিমিটেডের কাছে হেরে স্বপ্ন ভঙ্গের বেদনায় পুড়েছিল। এবার আরেকবার পুড়লো। তবে সেটা ফাইনালে উঠতে না পারার বেদনায়। সোমবার স্বাধীনতা কাপ ফুটবলের প্রথম সেমিফাইনালে তাদের ১-০ গোলে হারিয়ে রূপকথার জন্ম দিল আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ। কেননা এই আসরে এই প্রথম ফাইনালে ওঠার গৌরব অর্জন করল তারা। ২০১৬ সালে ফেডারেশন কাপের ফাইনালে ওঠার পর আরেকটি টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলতে যাচ্ছে ‘রাইজিং স্ট্রেন্থ’ খ্যাত আরামবাগ। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে তারা যেভাবে আধিপত্য বিস্তার করে খেলেছে, তাতে যদি তারা হেরে যেত, তাহলে সেটাই হতো বিস্ময়ের। আগের ম্যাচেও (কোয়ার্টার ফাইনালে) তারা ঢাকা আবাহনীকে হারিয়ে বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছিল। এই মৌসুুমে তাদের ট্রেবল শিরোপা জেতার স্বপ্ন ভেঙ্গে দিয়েছিল আরামবাগ। আর সোমবার খেলার একেবারে অন্তিম মুহূর্তে জামালের জালে বল পাঠিয়ে তাদের ফাইনালে যাওয়ার স্বপ্ন ভেঙ্গে দেয় মারুফুল হকের শিষ্যরা। শনিবারের ম্যাচে কর্নার পায় জামাল ৬টি এবং আরামবাগ ৪টি করে। তবে আক্রমণ সংখ্যায় এগিয়ে ছিল আরামবাগই (১৫৫-১৪৮)। তবে বিপজ্জনক আক্রমণে এগিয়ে ছিল জামাল (১৩৩-৮৪)। অন টার্গেটে শট নেয়ার বেলাতে এগিয়ে আবার আরামবাগ (৫-২)। প্রিমিয়ার লীগে তেমন ভাল ফল করতে পারেনি আরামবাগ। কিন্তু স্বাধীনতা কাপ ফুটবলে এখন শিরোপার স্বপ্ন দেখছে তারা। দলের খেলোয়াড়দের ড্রিবলিং, পাসিং মুগ্ধ করেছে মাঠের দর্শকদের। পুরো প্রথমার্ধ জুড়ে দাপিয়ে বেড়িয়েছে আরামবাগই। তবে জামালও গোল পাওয়ার মতো বেশ কয়েকটি সুযোগ সৃষ্টি করেও ব্যর্থ হয়েছে। ম্যাচের শেষ মুহূর্তে (৮৯ মিনিটে) ডান প্রান্ত থেকে অধিনায়ক আবু সুফিয়ান সুফিলের কাটব্যাক পোস্টের কাছ থেকে বাঁকানো শটে জামালের জালে ঠেলে দেন মোহাম্মদ জুয়েল (১-০)। উল্লাসে ফেটে পড়ে আরামবাগের সমর্থকরা। এই এক গোলেই বাজিমাত করে ফাইনালের ছাড়পত্র পেয়ে যায় তারা। আজ দ্বিতীয় সেমিফাইনালে বিকেল ৪টায় টুর্নামেন্টের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন চট্টগ্রাম আবাহনীর মুখোমুখি হবে রহমতগঞ্জ। ফেডারেশন কাপ ফুটবলে তিনবার রানার্সআপ হয়েছে আরামবাগ (১৯৯৭, ২০০১ ও ২০১৬)। দেশের ফুটবলে তেমন সাফল্য না থাকলেও বেশ পুরনো দল আরামবাগ। তাদের জন্ম সেই ১৯৫৮ সালে। প্রতিষ্ঠার পরেই তৃতীয় বিভাগ ফুটবল লীগে নাম এন্ট্রি করে আরামবাগ। ১৯৬৯ সালে তারা দ্বিতীয় বিভাগে ওঠে। তারপর থেকে আরামবাগ ক্লাবকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। শুধুই এগিয়ে যাওয়ার পালা। ১৯৭৯ সালে প্রথম বিভাগ লীগে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। প্রিমিয়ার বিভাগ লীগ শুরু হওয়ার পর থেকে আরামবাগ ক্লাব প্রায় প্রতি বছরই খেলেছে। পয়েন্ট টেবিলে বরাবরই চতুর্থ কিংবা পঞ্চম স্থানের বাইরে তারা কখনও যায়নি। তাদের বড় শিরোপা জয় তিনটি, প্রতিটিই বিদেশে! ১৯৯৫ ও ২০০১ সালে সিকিম গবর্নস কাপ এবং ২০০১ সালে ভুটানে প্রেসিডেন্ট গোল্ডকাপে চ্যাম্পিয়ন। এছাড়া রানার্সআপ হয় ১৯৮১ সালে নেপালে অনুষ্ঠিত ‘আনফা কাপ’, ১৯৯৭ সালে সিকিমে অনুষ্ঠিত চীফ মিনিস্টার গোল্ডকাপ এবং ভারতে অনুষ্ঠিত নাগজি গোল্ডকাপেও। আরামবাগ অনেক দেশসেরা খেলোয়াড় সৃষ্টি করেছে। জাতীয় দলের অধিনায়ক আলফাজসহ ফয়সাল, টিটু, আরমান, আপেল, ডন আরামবাগের হয়েই খেলোয়াড়ি জীবন শুরু করেছিলেন। এ তালিকায় আরও নাম আসবে শোয়েব, বিজন, আসিফ, প্রদীপ, বিদ্যুৎ, তুষার, রক্সির মতো প্রতিষ্ঠিত খেলোয়াড়ের। আরও আছেন মানিক, আহমেদ, সালাহউদ্দিন (কাজী সালাহউদ্দিন নয়) প্রমুখ। ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার সমষ্টিগত ফলই সাফল্য লাভের পূর্বশর্ত। আর লক্ষ্য যদি নির্দিষ্ট থাকে, তাহলে সাফল্য আসতেও বাধ্য। আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ এমন সাফল্য এবারের স্বাধীনতা কাপেও পাবেÑ এমনটাই প্রত্যাশা ক্লাবটির ভক্ত-সমর্থক-অনুরাগীদের।
×