ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাষ্ট্রভাষা বাংলা বা বাঙালীর বাংলা ভাষার অধিকার নিয়ে এদেশের প-িত, রাজনীতিবিদরা অনেক আগেই সচেতন ছিলেন। বিশেষ করে দেশভাগে অনেক আগ থেকেই রাষ্ট্রভাষা বাংলা নিয়ে সংবাদ, সম্পাদকীয় এবং চিন্তাবিদদের বিভিন্ন প্রবন্ধ রচিত হতে থাকে। রাষ্ট্রভাষার সপক্ষে সর্বপ্রথম পত্রিকায় সম্পাদকীয় প্রকাশ পায় ১৯৩৭ সালের ২৩ এপ্রিল। বাংলার অন্যতম রাজনীতিবিদ এবং সাংবাদিক মওলানা মোহাম্মদ আকরাম খাঁ সম্পাদিত দৈনিক আজাদ পত্রিকায় এ বিষয়ে বাংলার মুসলমান এবং হিন্দুদের সজাগ করে দিয়ে বাংলার সপক্ষে দীর্ঘ সম্পাদকীয় প্রকাশ করা হয়। এতে উল্লেখ করা হয় “সাহিত্যের মধ্যে বাংলা সমস্ত প্রাদেশিক ভাষার মধ্যে শ্রেষ্ঠ। বাংলা ভাষায় বিবিধ ভাব প্রকাশোপযোগী শব্দের সংখা বেশি। অতএব, বাংলা সব দিক দিয়াই ভারতের রাষ্ট্রভাষা হওয়ার দাবি করিতে পারে।.....রাষ্ট্রভাষার আসনের উপর বাংলা ভাষার দাবি সম্বন্ধে আর একটা কথাও বিশেষভাবে জোর দিয়ে বলা যাইতে পারে। রাষ্ট্রভাষার নির্বাচন নিয়ে হিন্দী-উর্দুর সমর্থকদের আজ তুমুল সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ উপস্থিত; তার ফলে উর্দু ও হিন্দীর মধ্যে কোনটারই রাষ্ট্রভাষার আসন অধিকার করা সম্ভব হইবে না। কিন্তু বাংলাকে রাষ্ট্রভাষারূপে গ্রহণ করা হইলে এই সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের আশঙ্কা বহু পরিমাণ কমিয়া যাইতে পারে।” বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সম্পাদকীয়তেই রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলার দাবিকে বলিষ্ঠ ও যৌক্তিকভবে তুলে ধরা হয়েছে। শুধু আজাদ নয় ওই সময় মহিলা পত্রিকাও বাংলা ভাষার সপক্ষে সম্পাদকীয় প্রকাশ করে। ১৯৪৭ সালের ২৩ আগস্ট ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা’ শীর্ষক সম্পাদকীয় প্রকাশিত হয় বেগম পত্রিকায়। এতে উল্লেখ করা হয়, ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা কি হবে এ নিয়ে আজ বিভিন্ন পত্রিকায় যেসব আলোচনা হচ্ছে তাতে দেখা যাচ্ছে, প্রায় সর্বসম্মতভাবেই পূর্ব পাকিস্তানের অধিবাসীদের দাবি এই যে, সমগ্র পাকিস্তান না হোক অন্তত: পূর্ব পাকিস্তানে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করতে হবে। পশ্চিম পাকিস্তানে উর্দুই রাষ্ট্রভাষা হবে। তার অর্থ এই যে পাকিস্তানে দুটি ভাষা রাষ্ট্রভাষা হবে। ....সমগ্র পাকিস্তানে বাংলা বা উর্দু কোন ভাষাকেই এককভাবে রাষ্ট্রভাষা করা সমর্থন করা যায় না। ...কিছুদিন পূর্বে ড. জিয়াউদ্দিন-এর মতো একজন মনীষী বলেছিলেন পাকিস্তানের জাতীয় ভাষা হবে উর্দু। এবং শিক্ষার মাধ্যম হবে উর্দু। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লার মতো মনীষীগণ এই মতের বিরোধিতা করেছেন। এ বিষয়ে আমাদের নারী সমাজও যে অচেতন নন তার প্রমাণ ‘বেগম- এর গত সংখ্যা এবং বর্তমান সংখ্যায় প্রকাশিত এই বিষয় নিয়ে লেখা দুটি প্রবন্ধ। আশা করি যে আমাদের নারী সমাজ সমগ্রভাবে বাংলা ভাষাকে সমর্থন করবেন। আজ ৬ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার। এদিন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর সভাপতিত্বে তাঁর মোঘলটুলিস্থ বাসভবনে পূর্ববঙ্গ কর্মশিবির অফিসে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের এক সভায় ২১ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এছাড়াও ওই সভায় ১১ ও ১৩ ফেব্রুয়ারি পতাকা দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
×