ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

১ কোটি লোককে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় আনার পরিকল্পনা

প্রকাশিত: ০৬:০০, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

১ কোটি লোককে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় আনার পরিকল্পনা

এম শাহজাহান ॥ আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে প্রায় এক কোটি মানুষকে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনির আওতায় নিয়ে আসার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এই কর্মসূচীর আওতায় দেশের দুস্থ, অবহেলিত, সমস্যাগ্রস্ত ও পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীর কল্যাণ নিশ্চিত করা হবে। চলতি বাজেটে ৬৭ লাখ উপকারভোগী সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় বিভিন্ন ধরনের ভাতা পাচ্ছেন। এছাড়া ডিজিটাল পদ্ধতিতে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর ভাতা প্রদানের লক্ষ্যে কাজ শুরু করা হয়েছে। হাওড় এলাকার জন্য বিশেষ সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর আওতা আরও বাড়ানো হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। জানা গেছে, সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় নবজাতক থেকে শুরু করে নব্বই বছরের বেশি বয়সী সব গরিব মানুষকে সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে চায় সরকার। আগামী ২০২২ সালের মধ্যে সবার জন্য সামাজিক সুরক্ষার যে পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে, তা বাস্তবায়নে আগামী বাজেটে সবচেয়ে বেশি জোর দিচ্ছে সরকার। ওই সময়ের মধ্যে দারিদ্র্যকে পাঠানো হবে জাদুঘরে। বাজেট সংক্রান্ত বৈঠকগুলোতে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সামাজিক নিরাপত্তার আওতা ও উপকারভোগীর সংখ্যা বাড়ানোর ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি জানান, কেউ কেউ বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতের ব্যয় কমানোর পরামর্শ দিলেও আমরা তা কমাবো না। বরং এবার সামাজিক নিরাপত্তাভোগীর সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে। দারিদ্র্যকে জাদুঘরে পাঠাতে সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়টিতে সবচেয়ে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, গত কয়েকটি বাজেটে এ খাতের বরাদ্দ থেকে ভাল ফল এসেছে। দারিদ্র্য মানুষের সংখ্যা কমছে। রূপকল্প-২১ বাস্তবায়ন এবং দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে নিয়ে যেতে দারিদ্র্য শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার লক্ষ্য নিয়ে কাজ শুরু করা হয়েছে। জানা গেছে, দেশকে পুরোপুরি দারিদ্র্যমুক্ত এবং ঘোষিত সময়ের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশের লক্ষ্য পূরণে সামাজিক সুরক্ষার বিষয়টিতে সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলপত্রের খসড়ায় এসব সুবিধা নিশ্চিত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ কৌশলপত্রের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০১৫-১৬ থেকে ২০২১-২২ অর্থবছর পর্যন্ত। এর পরের পাঁচ বছরের রূপরেখাও রয়েছে এ কৌশলপত্রে। বর্তমানে তিন কোটি ৫৭ লাখ মানুষ দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাস করছে। দেশের ৩২ লাখ দরিদ্র নারীকে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীতে সহায়তা পাবেন। বর্তমানে বাংলাদেশের সামাজিক নিরাপত্তায় ১৪৫টি কর্মসূচী রয়েছে। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এসব কর্মসূচী বাস্তবায়ন করছে। এই কর্মসূচী সফল করতে সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের আওতায় উপকারভোগীদের একটি স্বচ্ছ, পূর্ণাঙ্গ এবং কার্যকর অনলাইন ডাটাবেজ তৈরির উদ্যোগও নেয়া হয়েছে। এজন্য উপকারভোগীদের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনডিআই) ভেরিফিকেশন সাপেক্ষে প্রথমে একটি সুষ্ঠু তালিকা প্রণয়ন করা হবে। এর মাধ্যমে প্রকৃত উপকারভোগীদের সহায়তা প্রদানে স্বচ্ছতা আরও বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর ৯টি খাতের মধ্যে ৮টি খাতের পরিধি বাড়ানো হচ্ছে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর আওতায় সরকারের ৩৫ মন্ত্রণালয় ও সংস্থার অধীনে বর্তমান অসংখ্য প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এর অধিকাংশ প্রকল্পই সমাজকল্যাণ, মহিলা ও শিশু, খাদ্য, ত্রাণ ও দুর্যোগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বাস্তবায়ন করছে। এদিকে, আগামী অর্থবছরে বাজেটের আকার বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। তিনি জানিয়েছেন, আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাজেটের আকার হবে ৪ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। অর্থমন্ত্রীর এই ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ইতোমধ্যে বাজেট প্রণয়নের কাজ শুরু করা হয়েছে। চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে সাড়ে চার লাখ বয়স্ক, এক লাখ বিধবা, ৭৫ হাজার অসচ্ছল প্রতিবন্ধী, এক লাখ দারিদ্র্য মা, ২০ হাজার কর্মজীবী ল্যাকটেটিং মাতৃত্ব মা, ৫ হাজার ৩০৩ জন বেদে ও ৫৩০ জন হিজড়াকে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর আওতায় নতুন করে আনা হয়। এতে উপকারভোগীর সংখ্যাসহ ৬৬ লাখ ৩৫ হাজার চলতি অর্থবছরে এ কর্মসূচীর আওতায় বিভিন্ন ধরনের ভাতা সুবিধা পাচ্ছেন। হাওড় এলাকার বিশেষ সামাজিক কর্মসূচী ॥ এ বছর বন্যা ও দুর্যোগে হাওড় এলাকার মানুষ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর আওতায় এ এলাকার দুস্থ ও ক্ষতিগ্রস্ত ৩ লাখ ৩০ হাজার পরিবারকে প্রতিমাসে ৩০ কেজি করে চাল প্রদানের বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এছাড়া মাসিক ভিত্তিতে নগদ সহায়তা প্রদানের জন্য মোট ৫৭ কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দও ইতোমধ্যে প্রদান করা হয়েছে। ইজিপিপি’র (এমপ্লয়মেন্ট জেনারেশন প্রোগ্রাম ফর দ্য প্রটেস্ট) আওতায় ৯১ হাজার ৪৪৭ জন উপকারভোগীকে ৮২ কোটি ৭ লাখ টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। অর্থমন্ত্রণালয় বলছে, হাওড় এলাকা বিশেষ করে সিলেট, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জসহ ওই এলাকার জন্য আগামী বাজেটেও বিশেষ বরাদ্দ রাখা হবে। রাস্তাঘাট উন্নয়নে নজর দেয়া হবে। এছাড়া ওই এলাকায় দারিদ্র্য নিরসন, কর্মসংস্থানে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
×