ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মোরসালিন মিজান

বাইরের গল্প আড্ডা নিয়েই মেলা নতুন বইয়ের খোঁজ

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

 বাইরের গল্প আড্ডা নিয়েই মেলা  নতুন বইয়ের খোঁজ

শুধু বই। বই নিয়ে এত বড় আয়োজন! রবিবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ঠিক মাঝখানে দাঁড়িয়ে মনে হলো, এর চেয়ে ভাল আর কী হতে পারে! কয়েক বছর আগেও মেলা অনুষ্ঠিত হতো শুধু বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে। একেবারে ছোট নয় জায়গাটি। এরপরও গায়ে গা লাগা ভিড় ছিল। হাজার হাজার মানুষের সমাবেশ ঘটত প্রতিদিন। প্রিয় লেখকের অটোগ্রাফসহ বই সংগ্রহের প্রতিযোগিতা চলত। জমত গল্প আড্ডা। প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়ছিল। বাড়ছিল বইয়ের সংখ্যা। এ অবস্থায় মেলার পরিসর বৃদ্ধি করার জোর দাবি ওঠে। পাশেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। সেখানে মূল মেলা স্থানান্তরের লক্ষ্যে কাজ শুরু হয়। কিন্তু শঙ্কাও ছিল। প্রয়োজনের তুলনায় উদ্যানটি অনেক বড়। বিশাল। মেলাটিকে জনশূণ্য মনে হতে পারে। মনে হতে পারে ভাঙা হাট। কিন্তু ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস ধারণ করে আছে যে মেলা, তার প্রতি আবেগ ভালবাসা কমেনি। বেড়েছে কেবল। মেলার চতুর্থ দিন উদ্যানের মাঝখানে দাঁড়িয়ে মন ভাল হয়ে যায়। এবার বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রায় ৫ লাখ বর্গফুট জায়গায় আয়োজন করা হয়েছে মেলা। বাংলা একাডেমিসহ ২৪ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে ১৫৫৩৬ বর্গফুট আয়তনের ২৪টি প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। একাডেমি প্রাঙ্গণে ৯২ প্রতিষ্ঠানকে ১৩৬টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৩৬৩টি প্রতিষ্ঠানকে ৫৮৩টি ইউনিট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সবকটিতেই বই। নিজস্ব প্রকাশনা। অন্যান্য বছর একটু একটু করে মেলা জমে ওঠে। এবার দ্বিতীয় দিন থেকেই ভিড় করেন কৌতূহলী পাঠক। ঢাকার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মেলায় আসছেন তারা। স্টলের সামনে দাঁড়িয়ে বই দেখছেন। কেউ কেউ পড়ে ফেলছেন দেড় দুই পৃষ্ঠা। তারপর বলছেন, দিন তো বইটা। কিংবা অন্য বই হাতে নিচ্ছেন। পাতা উল্টে বোঝার চেষ্টা করছেন, ভেতরে কী আছে। শাহবাগ টিএসসির গল্প আড্ডাগুলোও ছোট হয়ে মেলায় ঢুকে পড়ছে। বন্ধুরা স্বজনেরা দল বেধে মেলায় প্রবেশ করছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অবিলাশ বললেন, এখন সবই আসলে গ্রন্থমেলাকেন্দ্রিক। দ্বিতীয় দিন থেকেই শাহবাগ টিএসসির আড্ডা ছোট হয়ে গেছে। দল বেধে চলে আসছি গ্রন্থমেলায়। একদিন গ্রন্থমেলায় আসলে মনে হয়, কী জানি মিস হয়ে যাচ্ছে। আসলে অনেকদিনের প্র্যাকটিস তো, আলাদা একটা টান অনুভব করি। এ কারণে যার যে আলাপ, যত কথা, সব নিয়ে মেলায় ঢুকেন বলে জানান তিনি। সারা আরা নামের আরেক তরুণী নিজেও লেখালেখি করেন। বললেন, সারাবছর মেলার জন্য অপেক্ষা করে থাকি। সেই মেলা শুরু হয়েছে আবার। না এসে থাকতে পারি না। বন্ধুদের সব আড্ডা ফেলে চলে আসি। কেন ? জানতে চাইলে তিনি কারণটি ঠিক ব্যাখ্যা করতে পারেননি। বলার অপেক্ষা রাখে না, কারণটি ব্যাখ্যা করা যে কারও জন্য মুশকিল! নির্বাচিত বই ॥ মেলায় প্রতিদিনই আসছে নতুন নতুন বই। সব বই বিবেচনায় নেয়ার মতো নয়। কিছু বইয়ের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। এই যেমন- অরুন্ধতী রায়ের ‘দ্য মিনিস্ট্রি অফ আটামোস্ট হ্যাপিনেস।’ বিখ্যাত লেখকের নতুন বই। বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ হয়েছে। মেলায় বাংলা অনুবাদ এনেছে অন্যধারা। মুহাম্মদ ইকবাল হোসাইনের গবেষনামূলক গ্রন্থ ‘নজরুলের অমর সৃষ্টির সন্ধানে’ প্রকাশ করেছে তৃপ্তি প্রকাশ কুঠি। সময় প্রকাশন থেকে এসেছে সেলিনা হোসেনের প্রবন্ধ সংকলন ‘আপন আলোয় দেখা।’ শহীদুজ্জামানের প্রবন্ধ ‘শেক্সপিয়রের কমেডির জগত।’ প্রকাশ করেছে সাহস পাবলিকেশসন্স। আত্মজীবনী ‘আই ওয়াজ হিটলারস মেইড’ লিখেছেন পলিন কোহলার। প্রকাশ করেছে শব্দশৈলী। আজকাল প্রকাশনী থেকে এসেছে ‘বাংলাদেশের মণিপুরী ভাষা সাহিত্য।’ লেখক ড. রণজিত সিংহ। বিদ্যা প্রকাশ বের করেছে যশোরের গণহত্যা। লেখক ফখরে আলম। এ্যাডর্ন পাবলিকেশন থেকে মেলায় এসেছে ‘বিশ্ব সেরা সমকালীন সাত কবির কবিতা।’ সম্পাদনা ও অনুবাদের কাজ করেছেন আমিনুর রহমান। মেলা মঞ্চের আয়োজন ॥ গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘শহীদ রণদাপ্রসাদ সাহা’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রতিভা মুৎসুদ্দি। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন রমণীমোহন দেবনাথ, হেনা সুলতানা এবং আজিজুর রহমান আজিজ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রফিকুল ইসলাম। সন্ধ্যায় ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
×