ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নিম্ন আদালতের বিচারক সম্পর্কে খালেদার বক্তব্য আদালত অবমাননা

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

নিম্ন আদালতের বিচারক সম্পর্কে খালেদার  বক্তব্য আদালত অবমাননা

বিকাশ দত্ত ॥ বিএনপির নির্বাহী কমিটির সভায় খালেদা জিয়া নিম্ন আদালত এবং বিচারকদের সম্পর্কে যা বলেছেন তা আদালত অবমাননার শামিল। দেশের একজন প্রবীণ রাজনীতিবিদ হিসেবে তার এই বক্তব্য চরম দায়িত্বহীনতা এবং রাজনৈতিক দেউলিয়াপনার বহির্প্রকাশ ছাড়া আর কিছু নয়। এটা আদালতের ব্যাপার। আদালত সঠিকভাবে আইন অনুযায়ী কাজ করবে। আদালত কারও অধীন নয়। ‘সাক্ষ্য-প্রমাণ ও তথ্যের ভিত্তিতে আদালত খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রায় দেবেন। তিনি আদালতকে চাপ সৃষ্টি করে ন্যায় বিচার ব্যাহত করার জন্য এ জাতীয় বক্তব্য রাখছেন। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কখনই বিচারকার্যে হস্তক্ষেপ করার নীতিতে বিশ্বাস করেন না। যদি খালেদা জিয়া আদালতকে কটাক্ষ করে বক্তব্য দেয় সেটা অবশ্যই আদালত অবমাননার শামিল। বর্তমান ও সাবেক আইনমন্ত্রীসহ দেশের বিশিষ্ট আইনবিশেষজ্ঞগণ এমনই অভিমত প্রদান করেছেন। তবে বিএনপিপন্থী আইনজীবীগণ ভিন্নমত প্রকাশ করে বলেছেন, বিএনপি নেত্রীর ঐ বক্তব্য কোনভাবেই আদালত অবমাননা হয় না। গত শনিবার বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া বলেন, দেশের নিম্ন আদালত সরকারের কব্জায়। তা সর্বোচ্চ আদালতও বলেছে। সরকারের কথার বাইরে, ভাবনা চিন্তা যাই থাকুক না কেন, তারা বুঝতে পারছে যে এটা সঠিক নয়, কিন্তু এটা সত্য, সঠিক রায় দেয়ার ক্ষমতা এখন তাদের (বিচারকদের) নেই। এ প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আনিসুল হক জনকণ্ঠকে বলেন, সত্যিকার অর্থেই খালেদা জিয়ার বক্তব্যটা আদালত অবমাননার শামিল। ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণা করা হবে। সে কারণে এর চেয়ে আর বেশি কিছু বলতে চাই না। অন্যদিকে তিনি গুলশানে একটি হোটেলে এক কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়া যা বলেছেন তা সম্পূর্ণ অসত্য বলেছেন। সাক্ষ্য-প্রমাণ ও তথ্যের ভিত্তিতে আদালত খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রায় দেবেন। আমি আগেও বলেছি, এখনও বলছি বিচার হয়েছে আদালতে, সাক্ষ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়েছে। সেই সাক্ষ্য-প্রমাণ বিবেচনায় নিয়ে নিম্ন আদালতের বিজ্ঞ বিচারক এই রায় দেবেন। এটুকুই জানি, তার বেশি জানি না। খালেদা জিয়া বলেছিলেন, বিচার কোথায়? যেখানে অপরাধই নেই, সেখানে বিচারটা হবে কিসের? তারপরও তারা গায়ের জোরে বিচার করতে চায়। গায়ের জোরে কথা বলতে চায়। এই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আমি দুঃখিত, উনি এ কথা বলেছেন এবং এটা সম্পূর্ণ অসত্য।’ আমরা সকলেই বাংলাদেশের বিচার বিভাগের এবং বিচারালয়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং সেটাই সকলের ব্যক্ত করা উচিত। সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহম্মেদ বলেন, রায় দেয়াটা আদালতের ব্যাপার। আদালত দেখবে সঠিকভাবে আইন অনুযায়ী কাজ করবে। আদালত কারও অধীন নয়। আইনসঙ্গতভাবে বিচার কাজ পরিচালনা করবে। বিচারাধীন বিষয় নিয়ে তার (খালেদা জিয়ার) মন্তব্য করা সঠিক নয়। যদি আদালতে কটাক্ষ করে বক্তব্য দেয় সেটা আদালত অবমাননার শামিল। উল্লেখ্য, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় রায় ঘোষণা করা হবে আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি। এদিকে খালেদার জিয়ার বক্তব্য যে আদালত অবমাননার শামিল সে বিষয়ে এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, অবশ্যই এটা আদালত অবমাননার শামিল। খালেদা জিয়া নিম্ন আাদালত সরকারের কব্জার কথা বলেছেন, কিন্তু আসলে কি তাই। সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকলে সুপ্রীমকোর্ট বারের সভাপতি জয়নুল আবেদীন ও সম্পাদক মাহবুব উদ্দিন খোকন জামিন পেল কীভাবে? আমরা বলার পরও নিম্ন আদালত ও উচ্চ আদালত থেকে তারা জামিন পাচ্ছেন। বেগম জিয়ার কথা সত্য নয়। তার এ ধরনের বক্তব্য অবশ্যই আদালত অবমাননার শামিল। বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুস বাসেত মজুমদার বলেন, তার (খালেদা জিয়ার) বক্তব্য আদালত অবমাননার শামিল। এগুলো রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়েই মোকাবেলা করতে হবে। এদিকে বিএনপিপন্থী আইনজীবীগণ বলেন, খালেদা জিয়ার ঐ বক্তব্য কোনভাবেই আদালত অবমাননার শামিল নয়। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন বলেন, বিএনপির চেয়ারপার্সনের ঐ বক্তব্য আদালত অবমাননার শামিল হয় না। আদালত অবমাননা বলা হয় যদি বিচারকের আদেশ নির্দেশনা অমান্য করা হয়। এত ঠুনকো বিষয় নয়। আদালত একটি সম্মানজনক স্থান। কাজেই কোন কথার মধ্যে আদ অবমাননা হয় না। তাহলে অনেক মন্ত্রী-এমপিদের কথা বার্তায় আদালত অবমাননা হবে। রাজনৈতিক বক্তব্য আর আদালতের আদেশ নির্দেশ অমান্য এক না। সুতরাং খালেদা জিয়ার বক্তব্য সম্পর্কে যারা বলছেন আদালত অবমাননা হয়েছে তারা নিজেরাই আদালতের ভাবমূর্তি সম্বন্ধে অবহিত নয়। আমাদের দেশে কনটেম্পট অব কোর্ট আইনের একটি বই আছে আদালত অবমাননার কোন বিষয় জানতে হলে এই বইটি ভাল করে পড়া দরকার। অন্যদিকে বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, ম্যাডাম আদালত অবমাননার কথা বলেননি। আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরা কতকিছু বললেন। ছুতা ধরে ধরে কিছু বলা ছাড়া আর কি। উনি যা বলেছেন তা আপনাদের সামনেই বলেছেন। এ কথায় কোন আদালত অবমাননা হয় না।
×