ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রেল সেতুর অর্থ ছাড় শুরুর বিষয় চূড়ান্ত করেছে চীনের এক্সিম ব্যাংক

একই দিনে পদ্মা সড়ক ও রেল সেতু উদ্বোধন করা সম্ভব হবে

প্রকাশিত: ০৫:২২, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

 একই দিনে পদ্মা সড়ক ও রেল সেতু উদ্বোধন করা সম্ভব হবে

মশিউর রহমান খান ॥ পদ্মা সেতুতে রেলওয়ে সংযোগের জন্য ঋণ ছাড় হওয়ার বিষয়টি জানিয়েছে এক্সিম ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) কর্তৃক অনুমোদনের দীর্ঘ প্রায় ২২ মাস পর চীন সরকার ও এক্সিম ব্যাংকের পক্ষ থেকে এই ঋণের অর্থ প্রদানের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। গত শুক্রবার বাংলাদেশে রেলওয়ে ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) কাছে ই-মেইলের মাধ্যমে এই অর্থ প্রদানের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে বলে জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক আমজাদ হোসেন। এই অর্থায়ন নিশ্চিত হওয়ার ফলে পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ স্থাপনের মূল কাজ শুরুতে আর কোন বাধাই রইল না এবং অতি দ্রুতই এর কাজ এগিয়ে যাবে। এর মাধ্যমে রেলসেতু নির্মাণকাজ এগিয়ে নেয়ার পথ আরও সুগম হয়ে গেল। কর্তৃপক্ষ আশা করছে একই দিনে সড়ক ও রেল সেতু উদ্বোধন সম্ভব হবে। বর্তমান সরকারের অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ পদ্মা নদীতে সড়ক সেতু নির্মাণের পাশপাশি রেলসেতু নির্মাণ করা। নানা জটিলতা আর সময় মতো না পাওয়া বৈদেশিক অর্থ সঙ্কটে অনেকটা আটকে ছিল মূল রেল সেতুটির নির্মাণ কাজ। রাজধানী ঢাকা থেকে পদ্মা বহুমুখী সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত নতুন ব্রডগেজ রেলওয়ে ট্র্যাক নির্মাণ করা হবে, যার দৈর্ঘ্য হবে ১শ’ ৬৯ কিলোমিটার। লুপ সাইডিং (লাইন বদলের জন্য) এবং ডাবল লাইনসহ মোট ট্র্যাক হবে ২শ’ ১৫ দশমিক ২২ কিলোমিটার। রেলসূত্র জানায়, ২০১৬ সালের ৩ মে ৩৪ হাজার ৯শ’ ৮৮ কোটি টাকা ব্যয়ে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়া হয়। প্রথমে চীনের এক্সিম ব্যাংক এ প্রকল্পে শতভাগ অর্থায়নে রাজি হলেও পরবর্তীতে ব্যাংকটি সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে এ ব্যাংকটি। মোট ৩৪ হাজার ৯শ’ ৮৮ কোটি টাকার মধ্যে এক্সিম ব্যাংক ২৪ হাজার ৭শ’ ৪৯ কোটি টাকা ঋণ দিতে সম্মত হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) মাধ্যমে ২০১৭ সালের ৮ আগস্ট চতুর্থ দফায় সংশোধিত ঋণ প্রস্তাব পাঠায়। এতে চীনের এক্সিম ব্যাংকের কাছে মোট ২শ’ ৬৬ কোটি ৮৯ লাখ ৪০ হাজার ডলার ঋণ চাওয়া হয়। উক্ত আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৯ সেপ্টেম্বর চীনের এক্সিম ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ঋণ প্রস্তাবটি প্রাথমিকভাবে অনুমোদন করে। রেলসূত্র জানায়, সরকারের মেগা প্রকল্প পদ্মা বহুমুখী সেতুর কাজ যখন অর্ধেকের বেশি কাজ ইতোমধ্যেই সম্পন্ন করা সম্ভব হয়েছে এবং বাকি কাজ অতি দ্রুত শেষ করতে নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ চলমান রয়েছে। অপরদিকে পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্পে ভূমি অধিগ্রহণ করা ছাড়া তেমন কোন অগ্রগতিই হয়নি। মূলত অর্থায়ন জটিলতায় প্রকল্পটির মূল কাজ শুরুই করতে পারেনি বাংলাদেশ রেলওয়ে। একনেকের অনুমোদন শেষে কাজ শুরুর প্রায় দেড় বছর পর সম্প্রতি অবশেষে অর্থায়ন নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা কাটছে বলে জানা গেছে। সূত্র জানায়, গত ২৯ সেপ্টেম্বর পদ্মা সেতু প্রকল্পের ঋণ অনুমোদন করেছে চীনা এক্সিম ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ। প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে। সর্বশেষ তথ্যমতে, সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অগ্রগতি হয়েছে ৮ দশমিক ৩ শতাংশ। কাজ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ২ হাজার ৭১ কোটি টাকা, যার সম্পূর্ণ অর্থ বহন করেছে বাংলাদেশ সরকার। এ হিসাবে শুরুর পর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পে আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৫ দশমিক ৯২ শতাংশ। মূলত ভূমি অধিগ্রহণ ছাড়া প্রকল্পের কোন কাজই শুরু করতে পারেনি রেল কর্তৃপক্ষ। প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, দুই ধাপে চলছে ভূমি অধিগ্রহণের কাজ। প্রথম ধাপে রয়েছে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর ও ফরিদপুরের একাংশে ভূমি অধিগ্রহণ। এর মধ্যে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ নারায়ণগঞ্জ, শরীয়তপুর ও মাদারীপুরে অধিগ্রহণকৃত ভূমি বুঝে পেয়েছে। এছাড়া দ্বিতীয় ধাপে চলছে ফরিদপুরের বাকি অংশ, গোপালগঞ্জ, নড়াইল ও যশোরে ভূমি অধিগ্রহণ কাজ। এ চার জেলার ভূমি অধিগ্রহণের জন্য প্রশাসনিক অনুমোদন সম্পন্ন হয়েছে বলে জানা গেছে। প্রকল্পের যশোর জেলার অধিগ্রহণ পরিকল্পনা জমা দেয়া হয়েছে। এছাড়া বাইরে দ্বিতীয় ধাপে ভূমি অধিগ্রহণের আর কোন কাজ হয়নি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক আমজাদ হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, দেশের সার্বিক উন্নয়নে সরকারের ওয়াদা বাস্তবায়নে অতি দ্রুত আমরা পদ্মা নদীতে রেলসেতু সংযোগ স্থাপনের কাজ করছি। নানা সমস্যার কারণে একটু দেরিতে হলেও গত শুক্রবার চীনের এক্সিম ব্যাংক ও চীন সরকার প্রতিশ্রুতি অর্থ প্রদানে আমাদের কাছে ও সরকারের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) কাছে ই-মেইলের মাধ্যমে এই অর্থায়নের বিষয়টি নিশ্চিত চূড়ান্ত নিশ্চয়তা প্রদান করেছে। এই অর্থ অতি দ্রুত পেতে ইআরডি ও রেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চীনের এক্সিম ব্যাংকের আলোচনার মাধ্যমে অতি দ্রুত চুক্তি স্বাক্ষর করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। শীঘ্রই চীন সরকার ইআরডি ডিপার্টমেন্টের কাছে লোন এগ্রিমেন্ট পেপার পাঠাবে। এরপর পর্যালোচনা শেষে আশা করি অতি দ্রুতই ঋণ সংক্রান্ত চুক্তি করা হবে। তবে এ নিয়ে এখন আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা শেষে বাংলাদেশ ও চীন সরকার দু’পক্ষের মধ্যে সমঝোতা সংলাপের পরই চূড়ান্ত ঋণচুক্তি সম্পন্ন করা হবে। সেতুতে রেল সংযোগ কাজের অগ্রগতি প্রসঙ্গে মহাপরিচালক বলেন, ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তির কাজ শেষ হওয়ায় তারা দ্রুত সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু করতে চীন ও অন্যান্য দেশের বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলীদের নিয়ে এসে মাঠ পর্যায়ে সার্বিক প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিদেশী অর্থ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মূল সেতুর কাজ শুরু করব। তবে সরকারী অর্থে আমরা সেতুর প্রথম ধাপের ফরিদপুর পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণের অংশ হিসেবে ভূমি অধিগ্রহণের কাজ সম্পন্ন করেছি। এ পর্যন্ত দ্বিতীয় ধাপসহ মোট প্রকল্পের প্রায় ৬০ ভাগের বেশি জমি অধিগ্রহণ কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। বাকি কাজও চলমান রয়েছে। আমরা কাজের প্রস্তুতি হিসেবে ইতোমধ্যেই সকল ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তিও সম্পন্ন করেছি ও ঠিকাদার নিয়োগও সম্পন্ন করা হয়েছে। সবকিছু স্বাভাবিক থাকলে আশা করি ঋণচুক্তি ও অর্থছাড়ের পর পদ্মা সেতুতে রেলসেতু নির্মাণের কাজ অতি দ্রুত শুরু করা সম্ভব হবে। একইদিনে সড়ক ও রেলসেতু উদ্বোধন করা সম্ভব হবে কি না ? এ প্রসঙ্গে মহাপরিচালক বলেন, একটু দেরিতে কাজ শুরু হলেও আশা করি একইদিনে সড়কপথের ন্যায় পদ্মাসেতুর ওপর দিয়ে ট্রেন চালু করা সম্ভব হবে। এজন্য প্রয়োজনীয় সকল প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।
×