ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

মুমিনুল-লিটনের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে চট্টগ্রাম টেস্ট ড্র

প্রকাশিত: ০৫:২১, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

 মুমিনুল-লিটনের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে চট্টগ্রাম টেস্ট ড্র

মিথুন আশরাফ ॥ শ্রীলঙ্কার ৭০তম স্বাধীনতা দিবস ছিল রবিবার। এই দিনে ক্রিকেটেও একটি বিজয় পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল লঙ্কানদের। কিন্তু মুমিনুল-লিটন এমনই ব্যাটিং বীরত্ব দেখালেন, তাতে শ্রীলঙ্কার স্বাধীনতা দিবসে যেন বাংলাদেশই অন্যরকম বিজয় তুলে নিল। যেভাবে হারের শঙ্কায় থাকা চট্টগ্রাম টেস্ট থেকে ড্র ফল বের করে আনলেন ব্যাটিং সৌরভ ছড়ানো মুমিনুল-লিটন, সেই ড্র’তে বিজয়ের সমান আনন্দই মিলছে। চতুর্থদিনে যখন ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলল বাংলাদেশ। তামিম, ইমরুল, মুশফিকের মতো ব্যাটসম্যান আউট হয়ে গেলেন। ১১৯ রানে পিছিয়ে থাকল বাংলাদেশ। তখন শঙ্কা জেগে গিয়েছিল। হারের শঙ্কা জেগেছিল। সেই হার এড়াতে হলে একটি পথই খোলা ছিল। বাকি সাত ব্যাটসম্যানকে প্রাচীর হয়ে উইকেটে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। সেই কাজটি ১০৫ রান করা মুমিনুল ও ৯৪ রান করা লিটন মিলেই করে দেখালেন। শুধু ১১৯ রানই দলের স্কোরবোর্ডে যোগ করেননি। দুইজন মিলে প্রথম সেশনে আউটই হননি। একটি উইকেটও সকালের সেশনে পড়তে দেননি। চতুর্থ উইকেটে ১৮০ রানের রেকর্ড জুটিও গড়েন। এই জুটিই বাংলাদেশকে ড্র’র পথে নিয়ে যায়। মুমিনুল ১৮ রানে চতুর্থদিন অপরাজিত ছিলেন। মুশফিক আউট হওয়ার পর দিন শেষ হয়ে যাওয়াতে আর কোন ব্যাটসম্যান নামেননি। পঞ্চম ও শেষদিনে মুমিনুলের সঙ্গে ব্যাট হাতে নামেন লিটন কুমার দাস। একটাই লক্ষ্য ছিল। উইকেটে আঁকড়ে থাকতে হবে। কোনভাবেই আউট হওয়া যাবে না। রান যত কমই স্কোরবোর্ডে যোগ হোক। বল যতই খরচ করা হোক। উইকেট দেয়া যাবে না। সেই লক্ষ্যে যেন শতভাগ সাফল্য পান মুমিনুল ও লিটন। বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে ৫১৩ রান করার পর শ্রীলঙ্কা প্রথম ইনিংসে যখন ৭১৩ রান করে ২০০ রানে এগিয়ে থাকে, তখনই বাংলাদেশের বিপদ দেখা যায়। সেই বিপদ আরও ঘনীভূত হয়, যখন চতুর্থদিন ৮১ রান হতেই ৩ উইকেট হারিয়ে বসে বাংলাদেশ। হারের শঙ্কা তৈরি হওতো না যদি দিনের শেষ বলটিতে মুশফিক আউট না হতেন। তখন মনে করা হচ্ছিল যদি কোনভাবে বাকি ব্যাটসম্যানরা ব্যর্থ হন তাহলেই হারের কোলে ঢলে পড়বে বাংলাদেশ। কিন্তু পঞ্চমদিন সব হিসেব-নিকেশ যেন পাল্টে দেন মুমিনুল ও লিটন। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ ৫ উইকেট হারিয়ে ৩০৭ রান করে। মুমিনুল এমন ব্যাটিংই দেখান যে, বুঝিয়ে দিলেন ফুরিয়ে যাননি। বরং আরও ধার বাড়িয়ে নিয়ে খেলছেন। যে মুমিনুলকে হাতুরাসিংহে টেস্ট থেকেও বাদ দিতে চেয়েছিলেন সেই হাতুরাসিংহের শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেই এক টেস্টের টানা দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরি করে দেখান মুমিনুল। প্রথম ইনিংসে ১৭৪ রানের পর দ্বিতীয় ইনিংসে ১৭৪ বলে ৫ চার ও ২ ছক্কায় ১০৫ রানের ইনিংস খেলেন। এই টানা দুই ইনিংসে সেঞ্চুরি করে এক টেস্টের দুই ইনিংসে সেঞ্চুরি করা বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান বনে যান মুমিনুল। সেই সঙ্গে তামিম, আশরাফুলের পর তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে ষষ্ঠ টেস্ট সেঞ্চুরিও করেন। এক টেস্টে দেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি ২৮১ রানও করলেন মুমিনুল। চট্টগ্রামেই ৫টি সেঞ্চুরি করার সঙ্গে দ্বিতীয় ইনিংসে চারটি সেঞ্চুরি হাঁকালেন মুমিনুল। টেস্ট ক্রিকেটে ৬৭ জন ব্যাটসম্যান এমন কৃতিত্ব গড়েন। যেখানে ব্র্যাডম্যান, চ্যাপেল, বোর্ডার, গাভাস্কার, দ্রাবিড়, অরবিন্দ ডি সিলভা, কম্পটন, গুচ, গ্রিনিজ, হেডলি, লারা, হানিফ মোহাম্মদ, মিয়াঁদাদ, পন্টিং, সাঙ্গাকারা, সাটক্লিফ, লরেন্স রো, সোবার্স, ওয়ালকট, এভারটন উইকস, কানহাই, হেইডেন, হ্যামন্ড, জ্যাক ক্যালিস, আর্থার মরিস, বিরাট কোহলি এবং হাশিম আমলারা আছেন। এই তালিকায় যোগ হলেন মুমিনুল। দুই ইনিংসেই মুমিনুল ব্যাট হাতে দলের হাল ধরেন। কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসটিতে এমন সময়ে ব্যাট উঁচিয়ে ধরলেন যখন এমন ব্যাটিংয়ের দরকার ছিল। মুমিনুল বিপদের সময়ে আসল কাজের কাজটি করেছেন। ১৫৪ বলে সেঞ্চুরির পর আর ২০ বল খেলে ৫ রান করতে পারেন। এরপর দলের ২৬১ রানের সময় আউট হন। ততক্ষণে ম্যাচ ড্র’র দিকেই হেলে পড়ে। শ্রীলঙ্কা থেকে ম্যাচ হাতছাড়া হয়ে যায়। মুমিনুল আউটের কিছুক্ষণ পরই ২৭৯ রানে লিটনও সাজঘরে ফেরেন। তবে ফেরার আগে ১৮২ বলে ১১ চারে ৯৪ রান করেন। ৬ রানের জন্য সেঞ্চুরি হাতছাড়া করেন। কিন্তু আউট হওয়ার আগে যে ব্যাটিংটা করেন তা সঠিক সময়ে জ্বলে ওঠার মতো সাহসী ইনিংসই বলতে হবে। মুমিনুল পরীক্ষিত ব্যাটসম্যান। কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে লিটন সেভাবে এখনও পরীক্ষিত নন। আবার প্রথম ইনিংসে রানের খাতা খোলার আগে যেভাবে আউট হয়েছেন তাতে লিটনকে নিয়ে খুব উচ্চাশাও ছিল না। কিন্তু সেই লিটনই কিনা মুমিনুলকে যথাসময়ে সঙ্গ দিলেন। যদি এই দুইজনের একজন দ্রুত আউট হয়ে যেতেন তাহলে হারের শঙ্কাই হয়তো জেগে উঠতে পারত। কিন্তু মুমিনুলের সঙ্গে লিটন কত সুন্দরভাবে এগিয়ে যেতে থাকেন। মুমিনুল যদি হন নায়ক। তাহলে পার্শ্বনায়ক তো লিটন। মুমিনুল, লিটনের আউটের পর যখন ম্যাচ ড্র’র দিকে হেলে পড়েছে তখন আর কোন উইকেটই হারায়নি বাংলাদেশ। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত এমন ব্যাটিংই করেছেন, উইকেট আঁকড়ে থেকেছেন। যতক্ষণ পর্যন্ত দিন শেষ না হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত শ্রীলঙ্কান বোলারদের সামনে প্রাচীর হয়ে থাকার লক্ষ্যেই এগিয়ে গেছেন। তাতে সাফল্যও মিলেছে। মাহমুদুল্লাহ ৬৫ বলে ২৮ রান করে অপরাজিত থাকেন। আর মোসাদ্দেক তো নিজের সহজাত খেলা থেকে বের হয়ে একেবারে উইকেট টিকিয়ে রাখার জন্যই ব্যাটিং করতে থাকেন। ৫৩ বলে ৮ রান করে অপরাজিত থাকেন। বাংলাদেশ ৫ উইকেট হারিয়ে ৩০৭ রান করার সময় দিনের ৭৩ ওভার খেলে ফেলে। যখন শ্রীলঙ্কা বুঝতে পারে ম্যাচ ড্র ছাড়া গতি নেই। তখন ১৭ ওভার বাকি থাকতে দুই দলের অধিনায়কের সম্মতিতে দিন শেষ হয়। ম্যাচ ড্র করে মাঠও ছাড়ে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা। সেই ড্র’র স্বাদ মিলে মুমিনুল-লিটনের বীরত্বেই। দুইজনই যে ব্যাটিং বীরত্ব দেখান। তাতে হারের শঙ্কায় থাকা ম্যাচও অসাধারণভাবে ড্র করে বাংলাদেশ।
×