ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ড্রেজিং জরুরী

পটুয়াখালীর নদ-নদীতে নাব্য সঙ্কট ॥ যোগাযোগ ব্যাহত

প্রকাশিত: ০৪:৩৪, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

পটুয়াখালীর নদ-নদীতে নাব্য সঙ্কট ॥ যোগাযোগ ব্যাহত

স্টাফ রিপোর্টার, গলাচিপা ॥ শুষ্ক মৌসুমের শুরুতেই পটুয়াখালীর বিভিন্ন নদ-নদীতে নাব্য সঙ্কট প্রকট হয়ে উঠেছে। নদ-নদীগুলোতে জেগে উঠেছে অসংখ্য ডুবোচর। কোথাও কোথাও নদীর অস্তিত্ব নিয়েও টান পড়েছে। যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ ও ড্রেজিংয়ের অভাবে পলিমাটি জমে কয়েকটি নৌরুট প্রায় বন্ধ হয়ে যেতে বসেছে। এতে করে নৌনির্ভর জেলার অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থায় চরম অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বেশ কয়েকটি নদীতে রীতিমতো লগি বা বাঁশ দিয়ে পানি মেপে নৌযানগুলোকে চলাচল করতে হচ্ছে। আবার বহু চালক আন্দাজের ওপর ভর করে নৌযান চালাচ্ছে। এতে বড় ধরনের দুর্ঘটনার ঝুঁকির আশঙ্কা প্রবল হয়ে দেখা দিয়েছে। এর পাশাপাশি নদী ভাঙ্গনও তীব্র হয়ে উঠেছে। বুড়াগৌরাঙ্গ, পায়রা, তেঁতুলিয়া, ডিগ্রি, রামনাবাদ, দাড়চিরা, আগুনমুখাসহ ছোটবড় ৩০-৪০টি নদ-নদী পটুয়াখালী জেলার অভ্যন্তরে মাকড়শার জালের মতো বিছিয়ে আছে। বহু কাল আগ থেকে এসব নদ-নদীর ওপর নির্ভর করেই জেলার অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। প্রয়োজনীয় সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাবে এখনও জেলার বহু এলাকা নৌনির্ভরই রয়ে গেছে। কিন্তু গত কয়েক বছরের ন্যায় এবারও শুষ্ক মৌসুমের শুরু থেকেই জেলার অধিকাংশ নদ-নদীতে নাব্য সঙ্কট প্রকট আকার ধারণ করেছে। ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে, পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার চরকাজল এলাকার বুড়াগৌরাঙ্গ নদের জিনতলা চ্যানেলটি পলিমাটি জমে ইতোমধ্যে পুরোপুরি সিলড হয়ে গেছে। কাউখালী এলাকার বুড়াগৌরাঙ্গ নদের অপর চ্যানেলটিও বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এতে গলাচিপা-চরমোন্তাজ ও উলানিয়া-চরমোন্তাজ রূটে নৌ চলাচল পুরোপুরি অচল হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ দু’টি এলাকার অন্যান্য রুটেও কমবেশি নাব্যতা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে নদীতে ভাটার সময়ে তীব্র নাব্য সঙ্কটের সৃষ্টি হয়। এ সময় লগি বা বাঁশের সাহায্যে পানি মেপে নদীপথ অতিক্রম করছে যাত্রীবাহী ট্রলার ও লঞ্চ চালকরা। এর ফলে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে নৌ চলাচল। নৌপথে যাতায়াতকারী লঞ্চ ও ট্রলারের যাত্রীদের পোহাতে হচ্ছে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ। গলাচিপা উপজেলার ২টি ও রাঙ্গাবালী উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন মূল ভূখ- থেকে একেবারে বিচ্ছিন্ন। এসব ইউনিয়নের আওতায় শতাধিক চর ও দ্বীপ রয়েছে। এর মধ্যে অর্ধশতাধিক চরে গত চার-পাঁচ দশক ধরে মানব বসতি গড়ে উঠেছে। এসব চরে যোগাযোগের মাধ্যম ট্রলার অথবা নৌকা। দুর্গম এসব চরে জরুরী প্রয়োজন বা হঠাৎ করে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে ট্রলারের জন্য অপেক্ষা করতে হয় পরের দিন পর্যন্ত। নাব্য সঙ্কটের কারণে বহু আগে পটুয়াখালী-গলাচিপা-কলাপাড়া রুটে নৌ চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। বন্ধ হয়ে গেছে পটুয়াখালী-কলাগাছিয়া-চিকনিকান্দি-উলানিয়া রুট। এক সময়ে প্রমত্তা ডিগ্রি নদীর মাঝখানে বিশাল ডুবোচর জেগে ওঠায় গলাচিপা-রাঙ্গাবালী নৌ চলাচল হুমকির মুখে পড়েছে। আরেক রূদ্ররূপী আগুনমুখা নদীও কালের আবর্তনে মৃতপ্রায় নদীতে পরিণত হয়েছে। ইতিহাসখ্যাত আগুনমুখার প্রমত্তা রূপ এখন আর নেই। নদীর মাঝ বরাবর ছোট্ট একটি চ্যানেল দিয়ে কোন মতে চলাচল করছে লঞ্চ ও ট্রলার। এ চ্যানেল দিয়ে শুধু জোয়ারের সময় নৌযান চলাচল করতে পারে। ভাটার সময় লঞ্চ-ট্রলার চলাচল করতে পারে না। যে কারণে গলাচিপা-বাহেরচর-মৌডুবী রুটটিও বন্ধ হয়ে গেছে। গলাচিপা ও আমতলী উপজেলার গাজীপুর বন্দরের নৌসংযোগ প্রায় বন্ধের পথে। দশমিনা উপজেলা সদরের সঙ্গে পটুয়াখালী জেলা সদরের নৌ যোগাযোগও একইভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। তেঁতুলিয়া নদীর বুকে অসংখ্য ডুবোচরের কারণে গলাচিপা ও ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার নৌ যোগাযোগও হুমকির মুখে রয়েছে। বুড়াগৌরাঙ্গ, দাড়চিরা ও তেঁতুলিয়া নদীর নাব্যতার কারণে পায়রা সমুদ্রবন্দরের সঙ্গে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জসহ অন্যান্য এলাকার নৌ যোগাযোগের মারাত্মক সঙ্কটের সৃষ্টি হয়েছে। কলাগাছিয়া নদীর ভুড়িয়া অংশে চর পড়ার কারণে গলাচিপা-পটুয়াখালী-ঢাকা দোতলা লঞ্চ চলাচলে প্রায়শঃ ব্যাহত হচ্ছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা চরে আটকে থাকছে লঞ্চ। নাব্য সঙ্কটে যোগাযোগ ব্যবস্থার বেহাল দশা প্রসঙ্গে রাঙ্গাবালী-পানপট্টি রূটের এমএল পানপট্টি-২ লঞ্চের মাস্টার বোরহান আহমেদ জানান, ডিগ্রি নদীর মাঝখানে চর পড়ার কারণে পানপট্টি থেকে কোড়ালিয়া যেতে প্রায় ৬ কিলোমিটার পথ বেশি যেতে হচ্ছে। এছাড়া ভাটার সময় ডুবোচরে লঞ্চ আটকে যায়। গলাচিপা-চরমোন্তাজ রুটের ট্রলার মালিক সোহরাব হোসেন জানান, ডুবোচরের কারণে প্রায়ই ট্রলার আটকে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটছে। পটুয়াখালী জেলার অভ্যন্তরীণ নদ-নদীর নাব্য সঙ্কট প্রসঙ্গে পটুয়াখালী বিআইডব্লিউটিএর পোর্ট অফিসার আঃ রাজ্জাক জানান, পায়রা সমুদ্রবন্দরের সঙ্গে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-চাঁদপুরের নৌরুট সচল রাখতে ডিগ্রি ও বুড়াগৌরাঙ্গ নদে ড্রেজিং চলছে। এছাড়া শীঘ্রই বদনাতলী-চরশিবা ফেরি চালু করতে বুড়াগৌরাঙ্গ নদের উত্তর অংশে ড্রেজিং শুরু হবে। এতে অন্যান্য নৌরুটগুলো সচল হবে। তাছাড়া ওই এলাকাগুলোর নৌপথ সচল রাখতে ইতোমধ্যে নদী খননের জন্য উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
×