ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নতুন প্রধান বিচারপতি

প্রকাশিত: ০৩:৪৪, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

নতুন প্রধান বিচারপতি

বঙ্গভবনে শনিবার আনুষ্ঠানিক শপথ গ্রহণের মাধ্যমে সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগের বিচারক সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ২২তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে অধিষ্ঠিত হলেন। দেশে ৫৩ দিন ধরে প্রধান বিচারপতির পদ শূন্য থাকায় এ নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা ছিল বিভিন্ন মহলে। এর অবশ্য সঙ্গত কারণও ছিল। প্রথমে ২১তম প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার ছুটিতে যাওয়া, পরে ছুটির মেয়াদ বাড়িয়ে বিদেশে যাওয়া, এরপর তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন কর্র্তৃক দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আনয়ন, সবশেষে বিদেশ থেকে পদত্যাগপত্র পাঠানো- এসব নিয়েই নানা আলোচনা-সমালোচনা ছিল। এই সময়ে আপীল বিভাগের জ্যেষ্ঠতম বিচারপতি মোঃ আব্দুল ওয়াহ্হাব মিঞাকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব অর্পণ করেন রাষ্ট্রপতি। পরে সংবিধানের ৯৫(১) অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দিলেন সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে। প্রধান বিচারপতি পদে এই নিয়োগের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পদত্যাগ করেন আপীল বিভাগের জ্যেষ্ঠতম বিচারপতি মোঃ আব্দুল ওয়াহ্হাব মিঞা। পদত্যাগপত্রে ‘অনিবার্য ব্যক্তিগত কারণ’-এর কথা বলা হলেও আপাত দৃৃষ্টিতে জ্যেষ্ঠতম লঙ্ঘনের অভিযোগের কথা উঠেছে। তবে এটা সত্য যে, প্রধান বিচারপতি নিয়োগ একান্তই রাষ্ট্রপতির নিজস্ব এখতিয়ার। এ্যাটর্নি জেনারেলের ভাষ্যমতে, পদত্যাগ কারও নিজস্ব ইচ্ছা-অনিচ্ছা ও মূল্যবোধের বিষয়। অতীতেও জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে একাধিকবার। এমন উদাহরণ আছে ভারতের বিচার বিভাগেও। যা হোক, প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ফলে রাষ্ট্রের অন্যতম একটি স্তম্ভের শূন্যস্থান পূরণ হলো। অচিরেই আপীল ও হাইকোর্ট বিভাগেও বিচারপতি নিয়োগ দেয়া হবে বলে জানা গেছে। এতে মামলার জট কমবে নিশ্চয়ই। এখানে উল্লেখ করা আবশ্যক যে, ইতোপূর্বে অধিষ্ঠিত ২১তম প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা সর্বোচ্চ বিচারালয়কে কলুষিত করে রেখে গেছেন। তৎকালীন প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে অর্থ পাচার, আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি ও নৈতিক স্খলনসহ ১১টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগের নথি আপীল বিভাগের পাঁচ বিচারপতির কাছে হস্তান্তর করেন রাষ্ট্রপতি। অতঃপর তাঁরা প্রধান বিচারপতির সঙ্গে বিচারালয়ে বসে বিচারকাজ পরিচালনা করতে অসম্মতি জানান। তখন প্রধান বিচারপতি পদত্যাগের কথা জানিয়ে দেন সহকর্মীদের। এর পরই তাদের কিছু না জানিয়ে তিনি অসুস্থতাজনিত ছুটির দরখাস্ত করেন রাষ্ট্রপতি বরাবর। এ নিয়ে নানা নাটকীয়তা ও বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয় রাজনৈতিক অঙ্গনসহ বিভিন্ন মহলে। সুপ্রীমকোর্ট প্রদত্ত বিবৃতির পর এ সম্পর্কিত সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান হয়। তদন্তাধীন কোন বিষয়ে মন্তব্য করা বাঞ্ছনীয় নয়। তবে এটা তো সত্যি যে, সর্বস্তরের মানুষের শেষ ভরসাস্থল হলো আদালত। মানুষ ন্যায়বিচার পাওয়ার আশায় দ্বারস্থ হয়ে থাকে আদালতের। সে ক্ষেত্রে আর্থিক দুর্নীতি, অর্থ পাচার এমনকি নৈতিক স্খলনও একজন বিচারকের কাছে কাম্য নয়, প্রধান বিচারপতির ক্ষেত্রে তো নয়ই। অবস্থাদৃষ্টে প্রতীয়মান হচ্ছে যে, বিগত প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার ক্ষেত্রে সেটাই ঘটতে চলেছে। এর বাইরেও প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর বিভিন্ন সময়ে তিনি নানা বিতর্কিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন, যা আইনজীবীদের মনে ক্ষোভ-বিক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে তার ভূমিকা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের রায়ের প্রাক্কালে কুখ্যাত সাকা চৌধুরীর স্বজনদের সঙ্গে সাক্ষাতদান নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে বিস্তর, যা তিনি নিজেও প্রকারান্তরে স্বীকার করে নিয়েছেন। আশা করি, তিনি ‘সুস্থ’ হয়ে দেশে ফিরে আসবেন এবং তার বিরুদ্ধে আনীত তদন্তাধীন বিষয় মোকাবেলা করবেন। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষাসহ দেশের সর্বোচ্চ আদালতের ভাবমূর্তি সমুন্নত রাখার স্বার্থে সেটাই প্রত্যাশিত। রাষ্ট্রপতি কর্তৃক বর্তমান প্রধান বিচারপতি নিয়োগ আদালত প্রাঙ্গণসহ সরকার ও বিরোধী পক্ষ একবাক্যে মেনে নিয়েছেন। আমরা আন্তরিকভাবে আশা করব যে, সর্বোচ্চ আদালতের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারে তিনি সর্বোতভাবে আত্মনিয়োগ করবেন। বিচার বিভাগের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে সর্বোস্তরে, সর্বত্র স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি রক্ষা করা অপরিহার্য ও অত্যাবশ্যক।
×