ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বইয়ের সঙ্গে মিষ্টি বিকেল, সুন্দর ঘুরে বেড়ানো

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

বইয়ের সঙ্গে মিষ্টি বিকেল, সুন্দর ঘুরে বেড়ানো

মোরসালিন মিজান ॥ ভারি সুন্দর পরিবেশ বলতে হবে। মাঘ যাই যাই করছে। কমে এসেছে শীত। বিকেলে বইছে বসন্তের হাওয়া। মিষ্টি হাওয়া গায়ে মেখে পাঠক প্রবেশ করছেন অমর একুশে গ্রন্থমেলায়। কেমন দেখতে এবারের আয়োজন, জানার কৌতূহল। সেই কৌতূহল নিয়ে প্রথম দুই দিন ঘুরে বেড়িয়েছেন তারা। তৃতীয় দিন শনিবার মেলায় ঢুকে মনে হলো অবস্থার খুব একটা পরিবর্তন হয়নি। বিভিন্ন বয়সী পাঠক। যে যার মতো করে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কয়েক বছর ধরে মূল আয়োজনটি হচ্ছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। বিশাল খোলা জায়গা। বারবার দেখা জায়গাটি মেলা উপলক্ষে নতুন চেহারা পেয়েছে। এখানে বহু প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের স্টল ও প্যাভিলিয়ন। এসবের কোন্টি কোথায়, খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন তারা। একই সঙ্গে চলছে বই দেখা। নতুই বইয়ের পাতা উল্টে দেখছেন তারা। অবশ্য নতুন বলতে গত মেলার পর প্রকাশিত বই। এখন বইমেলাকেন্দ্রিক সমস্ত প্রকাশনা। ফেব্রুয়ারির মেলায় অসংখ্য বই প্রকাশিত হয়। গত বছরও অনেক বই এসেছিল। তবে দুই মেলার মাঝামাঝি সময়ে প্রকাশিত অনেক বইয়ের খবর পাঠক জানেন না। সেসব বই স্টলের সামনের অংশে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। উদাহরণ হতে পারে এ্যাডর্ন পাবলিকেশন। গত মেলার পর এই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে এসেছে ২০টির মতো নতুই বই। এবিএম হোসেনের ‘আরব্য স্থাপত্য’, মেজর জেনারেল রেজ্জাকুল হায়দারের ‘ওয়ান ইয়ার অব ইস্ট তিমুর’, সিরাজ উদ্দীন সাথীর ‘বাংলাদেশের আমলাতন্ত্র’ ইত্যাদি বই উল্টে দেখছেন পাঠক। উৎস প্রকাশনের সামনেও রাখা আছে এমন কিছু বই। ‘সিলেটের আঞ্চলিক ভাষার অভিধান’, বিগব্যান থেকে আজকের পৃথিবী’, ‘এক যে ছিল শীত ও অন্যান্য গপ’ বই গত বছরের মেলার পর প্রকাশ করা হয়। পাঠক আগ্রহ নিয়েই দেখছিলেন। অবশ্য বারবার দেখার কথা বলার মানে এই নয় যে, বই বিক্রি থেমে আছে। যথেষ্ট বিক্রি হচ্ছে। যাদের সংগ্রহ ভাল তাদের বিক্রিটাও বেশি। সিটি কলেজের শিক্ষার্থী সুমাইয়া অনেক বই কিনে ফিরছিল। বলল, আমি চাইলেই প্রতিদিন আসতে পারব না। তাই বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়েই এসেছিলাম। যা যা পছন্দ হয়েছে, কিনেছি। যারা ঘুরে বেড়িয়েছেন তাদের প্রতিনিধি রফিকুল ইসলাম। একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ান। বললেন, বইয়ের প্রতি প্রেম না থাকলে কেউ এই মেলা ঘুরে বেড়িয়ে মজা পাবেন না। আমার তো খুব ভাল লাগছে। ঘুরতে ঘুরতেই তো দেখব, কার কী বই এলো। তার পর কেনা। শিশুপ্রহর ॥ বইয়ের মেলা। শিশুদের উৎসাহিত করতে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে শনিবার মেলায় আয়োজন করা হয় শিশুপ্রহরের। ৫৩ নতুন বই ॥ পূর্বে প্রকাশিত বইয়ের পাশাপাশি মেলায় প্রতিদিনই আসছে নতুন বই। এসব বইয়ের একটি করে কপি মেলার তথ্যকেন্দ্রে জমা দেন প্রকাশকরা। সে সূত্রে জানা যায়, মেলার তৃতীয় দিনে নতুন বই এসেছে ৫৩টি। মেলা মঞ্চের আয়োজন ॥ বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘খান বাহাদুর আহ্ছানউল্লা’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন শফিউল আলম। আলোচনা করেন মোঃ মনিরুল ইসলাম ও সরকার আবদুল মান্নান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কাজী রফিকুল আলম। প্রাবন্ধিক বলেন, উনিশ শতকের যে কয়েকজন খ্যাতিকীর্তি মুসলমানের জন্ম হয়েছিল তাদের অন্যতম ও উল্লেখযোগ্য খান বাহাদুর আহছানউল্লা। তিনি বাঙালী মুসলমানদের সামাজিক ইতিহাসে যেমন অনন্য পুরুষ, তেমনি স্বসম্প্রদায়ের ভেতরে সাধারণ শিক্ষার প্রসারকল্পে তার অবদান শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণযোগ্য। খান বাহাদুর আহছানউল্লা’র সুদীর্ঘ কর্মময় জীবনকে নানামাত্রিকভাবে দেখা যায়- শিক্ষাবিদ, শিক্ষাসংস্কারক, পাঠ্যপুস্তক রচয়িতা, সাহিত্যিক, ধর্মবেত্তা, সংস্কারমুক্ত, অসাম্প্রদায়িক সৃজনশীল মানুষ- এমন সব অভিধায় তাকে চিহ্নিত করা যায়। আলোচকরা বলেন, বাঙালী জাতিসত্তার সব উপকরণই খান বাহাদুর আহ্ছানউল্লার জীবনচর্চার সঙ্গে মিশেছিল। শিক্ষাদীক্ষা ও বুদ্ধিবৃত্তিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়া বাঙালী মুসলমানদের সামনে এগিয়ে নিতে তিনি কাজ করে গেছেন। বাংলা ভাষা ‘হিন্দু না মুসলিমের’ এ বিতর্কের উর্ধে উঠে তিনি ঘোষণা করেছেন, বঙ্গীয় মুসলিম সমাজের উন্নতির জন্য বাংলা ভাষায় সাহিত্য রচনা করতে হবে। সভাপতির বক্তব্যে কাজী রফিকুল ইসলাম বলেন, শিক্ষা সংস্কার ও প্রসারে খান বাহাদুর আহ্ছানউল্লা যে অবদান রেখে গেছেন তা আমাদের স্মরণে রাখতে হবে। আহ্ছানিয়া মিশন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তিনি মানবসেবার অসাধারণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। সন্ধ্যায় ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী ফাতেমা-তুজ-জোহরা, সুজিত মোস্তফা, এ কে এম শহীদ কবীর পলাশ।
×