ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

৮ ফেব্রুয়ারি শোডাউন

দল চলবে খালেদার নির্দেশেই

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

দল চলবে খালেদার নির্দেশেই

স্টাফ রিপোর্টার ॥ খালেদা জিয়াকে জেলে পাঠালে কঠোর আন্দোলনের পক্ষে রায় দিয়েছে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্যরা। রুদ্ধদ্বার অধিবেশনে বিভিন্ন জেলা নেতারা ঢাকার নেতাদের কারণেই বার বার আন্দোলন ব্যর্থ হয়েছে বলে খালেদা জিয়ার কাছে নালিশ করেন। তারা বলেন, অতীতে জেলা নেতারা জেল-জুলুম উপেক্ষা করে রাজপথে আন্দোলন সফল করলেও কেন্দ্রীয় নেতারা মাঠে না থাকায় সফলতা আসেনি। এ সময় নির্বাহী কমিটির সদস্যরা এবার কি ধরনের আন্দোলন হবে তা চূড়ান্ত করতে খালেদা জিয়ার ওপর দায়িত্ব হস্তান্তর করেন। সবকিছু আপনার ওপর, আপনি যেভাবে সেভাবেই হবে। তারা আরও বলেন, যেখানেই থাকেন আর রুটিন দায়িত্ব যাকেই দেয়া হোক দল চলবে খালেদা জিয়ার নির্দেশেই। আর খালেদা জিয়াও তাদের বক্তব্যে সায় দিয়ে বলেন, আমি না থাকলেও দলের সিনিয়র নেতারা দল ও আন্দোলনের যে নির্দেশনা দেবেন সেভাবে কাজ করবেন। তবে আমিও সব কিছুতে আপনাদের সঙ্গেই থাকব। তারা ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার রায়ের দিনে ঢাকায় শোডাউন করার কথা খালেদা জিয়াকে জানিয়ে দেন। বিভিন্ন জেলা নেতারা খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে বলেন, ম্যাডাম আর বসে থাকার সময় নেই, আন্দোলন কর্মসূচী দিন। তবে শর্ত হচ্ছে আন্দোলনে ঢাকার নেতাদের সক্রিয় করতে হবে। এবার আন্দোলনে নামলে তা যেন ব্যর্থ না হয় সে জন্য ঢাকায় কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে কয়েকটি টিম করে দিন। রাজধানীর একেকটি এলাকায় একেকজন সিনিয়র নেতার নেতৃত্বে টিম করতে হবে। এ ব্যাপারে আপনাকেই পদক্ষেপ নিতে হবে। রুদ্ধদ্বার বৈঠকে কেউ কেউ খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে তারেক রহমান বা তার স্ত্রী ডাঃ জোবাইদা রহমানকে দলের দায়িত্ব দেয়ার পরামর্শ দেয়ার কথা বললেও অধিকাংশ নেতাই নেতৃত্ব খালেদা জিয়ার হাতেই রাখার কথা বলেছেন। তারা বলেছেন, ওয়ান-ইলেভেনের সময় জেলে থেকেও যেভাবে খালেদা জিয়া নির্দেশনা দিয়ে দল চালিয়েছেন এবারও সেভাবেই চালাতে হবে। তবে তাদের এ প্রস্তাবের বিষয়ে খালেদা জিয়াও সায় দিয়েছেন। এ সময় তিনি বলেন, আমি জেলে গেলেও যেভাবে সেভাবেই আপনারা কাজ করবেন। আর আন্দোলনে সবাইকে মাঠে থাকতে হবে। কেবল ফেসবুক ও টেলিভিশনে চেহারা দেখালেই হবে না। সেই সঙ্গে নির্বাচনের প্রস্তুতিও নিতে হবে। এক পর্যায়ে আবেগাপ্লুত কণ্ঠে খালেদা জিয়া বলেন, আমাকে জেলে নেবে নিক। আপনারা ভয় পাবেন না, আমি আপনাদের সঙ্গেই থাকব। দল ও রাজনীতির কারণে, অনেক কিছুই হারিয়েছি। জীবনের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে দলকে ঐক্যবদ্ধ দেখতে চাই। রুদ্ধদ্বার অধিবেশনের শুরুতেই বক্তব্য রাখেন নির্বাহী কমিটিরসহ সাংগঠনিক সম্পাাদক ও কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি শরীফুল আলম। এর পর এক এক করে রংপুর জেলা সভাপতি সাইফুল ইসলাম, রাজশাহী জেলা সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন তপু, কক্সবাজার জেলা সভাপতি মোহাম্মহ শাহজাহানসহ বেশ ক’জন বক্তব্য রাখেন। বিএনপির নির্বাহী কমিটির বৈঠকে সাংগঠনিক রিপোর্ট উপস্থাপন করতে গিয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, ৯ বছরে বিরোধী দলের ১২ হাজার ৮৫০ নেতাকর্মীকে খুন করা হয়েছে। এর মধ্যে বেশ ক’জনকে গুম করা হয়েছে। সভা শেষে সিলেট মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি ডাঃ শাহরিয়ার সাংবাদিকদের কাছে বলেন, চেয়ারপার্সনের বক্তব্যেই পরিষ্কার, নেতৃত্বের জন্য এখন আর চেয়ে থাকা চলবে না। সবাইকেই এগিয়ে আসতে হবে। আমরাও সহমত পোষণ করেছি। তিনি অতীতে সকল আন্দোলন-সংগ্রামে ব্যর্থ হওয়ার জন্য ঢাকার নেতাদের দায়ী করেছেন। ব্যর্থ নেতাদের বাদ দিয়ে দলের আস্থাভাজনদের হাতে আগামীর নেতৃত্ব দিতে দলের নীতি নির্ধারকদের কাছে দাবি জানিয়েছেন একাধিক বক্তা। মাগুরা জেলা বিএনপির সভাপতি কবির মুরাদ বলেন, ভয় ভীতি উপেক্ষা করে নির্বাহী কমিটির ৪৯২ জন উপস্থিত হয়েছেন। তাদের অনেকেই তৃণমূলের চেয়ে কেন্দ্রকে শক্তিশালী করার ওপর জোর দিয়েছে। আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি রায়ের সময় দলের সিনিয়র নেতাদের আদালতে উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন তৃণমূল নেতারা। বগুড়া বিএনপির মাহবুব আলম হারেছ জানান, সবাই বক্তব্যে ঢাকার নেতাদের সক্রিয় হতে বলেছেন। ঢাকায় আন্দোলন না হলে সারাদেশে আন্দোলন করে সরকারের ভিত নাড়ানো যাবে না। আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি বা যে দিনই রায় ঘোষণা করা হবে সেদিনই রাজপথে শান্তিপূর্ণ অবস্থান নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন অনেক বক্তা। নোয়াখালী জেলার সভাপতি গোলাম হায়দার তার বক্তব্যে বলেন, প্রয়োজন হলে আমি আমার জেলা অচল করে দেব ঢাকা নেতারা কি করবে জানি না। ঢাকা নেতাদের সক্রিয় দেখতে চান তিনি। বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু বলেন, আমাদের সতর্ক থাকতে হবে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন সংগ্রামে যেন কেউ অশান্তির সৃষ্টি না করতে পারে। আন্দোলন এবং সিদ্ধান্ত হলে নির্বাচনের জন্য আরও প্রস্তুতি নেয়া প্রয়োজন আছে বলে মত দিয়েছেন তিনি।
×