ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিশ্ব ক্যান্সার দিবস আজ;###;চিকিৎসকদের দক্ষতা বৃদ্ধি পেয়েছে

অবকাঠামো ও উপকরণের অভাবে চিকিৎসা ব্যাহত

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

অবকাঠামো ও উপকরণের অভাবে চিকিৎসা ব্যাহত

নিখিল মানখিন ॥ বাংলাদেশে ক্যান্সারের চিকিৎসা এখনও অপ্রতুল। চিকিৎসকদের দক্ষতা বৃদ্ধি পেলেও অপর্যাপ্ত অবকাঠামো ও মেডিক্যাল উপকরণের কারণে ব্যাহত হচ্ছে ক্যান্সারের চিকিৎসা। তাই দেশে ক্যান্সারের চিকিৎসার অবকাঠামো আরও মজবুত করার জন্য স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশের ক্যান্সার বিশেষজ্ঞরা জানান, বাংলাদেশে সব মিলিয়ে ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা প্রায় ১২ লাখ। প্রতিবছর প্রায় তিন লাখ মানুষ নতুন করে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। আর বছরে মারা যায় প্রায় দেড় লাখ রোগী। সরকারী-বেসরকারী পর্যায়ের বিদ্যমান চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দেশে বছরে ৫০ হাজার রোগীকে চিকিৎসা সেবার আওতায় নিয়ে আসা গেলেও আড়ালে থেকে যায় আরও প্রায় আড়াই লাখ রোগী। অন্যদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবমতে, জনসংখ্যা অনুপাতে বর্তমানে দেশে সব ধরনের সুবিধাসংবলিত ১৬০টি ক্যান্সার চিকিৎসাকেন্দ্র থাকা অপরিহার্য। কিন্তু বাংলাদেশে এখন এমন কেন্দ্রের সংখ্যা আছে মাত্র ১৫টি। আবার এর সবই কার্যকর নয়, বেশিরভাগই চলছে জোড়াতালি দিয়ে। এ ছাড়া সারাদেশে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সংখ্যা মাত্র ৮৫ জন। এমন অবস্থার মধ্য দিয়ে আজ রবিবার পালিত হচ্ছে বিশ্ব ক্যান্সার দিবস। সরেজমিন ॥ এক বছর ধরে ক্যান্সারের সঙ্গে লড়ছেন ফেনীর মোঃ মোজাম্মেল (৩৬)। ক্যান্সার ধরা পড়ার পর ঢাকার একটি সরকারী হাসপাতালে এক বছর ধরেই তিনি চিকিৎসা নিচ্ছেন। মোজাম্মেলের সঙ্গে হাসপাতালে আসা তার একজন আত্মীয় বলছিলেন প্রথমে তারা ভারতে যাওয়ার কথা চিন্তা করলেও চিকিৎসার খরচের কথা চিন্তা করে দেশের সরকারী হাসপাতালেই চিকিৎসা শুরুর সিদ্ধান্ত নেন। মোঃ মোজাম্মেলন জনকণ্ঠকে জানান, কুমিল্লা থেকে ঢাকা এসেছি। এখানকার ডাক্তাররা বলল, বাংলাদেশে চিকিৎসা আছে। তাই খরচের কথা ভেবে ভারতে যাইনি। কিন্তু এখানেও অনেক খরচ। এই রোগের চিকিৎসার একটি অংশ ক্যামোথেরাপি, যেটা মোজাম্মেলকে দেয়া হয়েছে ১২টি। আর প্রতিবারেই এ বাবদ তাদের গুনতে হয়েছে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। তার এক আত্মীয় বলছিলেন জমি, গবাদি পশু বিক্রি করে ও আত্মীয়দের কাছ থেকে টাকা ঋণ নিয়ে চলছে তার চিকিৎসা। মিরপুরের ডেল্টা হাসপাতালের তেমনি একটি বিভাগে ক্যামোথেরাপি নিতে কিশোরগঞ্জ থেকে এসেছেন ফিরোজ মিয়া (৪৭)। তার সঙ্গে রয়েছে ছেলে ফয়েজ মিয়া (১৮)। তিনি জনকণ্ঠকে জানান, ডাক্তার ১০টি ক্যামোথেরাপি নেয়ার কথা বললেও আপাতত ৬টার বেশির খরচ বহন করা তার পরিবারের পক্ষে সম্ভব নয়। ফারজানা আক্তার, শেরপুর জেলা সদরের নয়াপাড়া লসমানপুর গ্রামের এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর মেয়ে। বয়স মাত্র ৫ বছর। সে দূরারোগ্য ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত। বর্তমানে সে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডাঃ আফিকুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন রয়েছে। চিকিৎসার পেছনে সহায় সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছেন শিশুটির পিতা মোঃ ফারুক হোসেন। দু’মাস আগে ক্যান্সার ধরা পড়ে তার। সেই থেকে টানা চিকিৎসা চলছে। ফারজানা সুস্থ হবে এমন নিশ্চয়তা দিতে পারছেন না চিকিৎসকরা। চিকিৎসা করাতে গিয়ে নিঃস্ব হয়েও চিকিৎসকদের এমন কথা বাড়িয়ে দিয়েছে শিশুটির মাতা-পিতার কষ্টের মাত্রা। সাত বছরের শিশু ইয়ামিন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে। শুধু বোনমেরো ট্রান্সপ্লান্ট করালেই বাঁচানো যাবে ইয়ামিনকে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের হেমাটোলজি বিভাগের প্রধান ড. এবিএম ইউনূস ইয়ামিনের বাবা নূরুল আজিজকে বলেছেন, তাকে যতদ্রুত সম্ভব বোন মেরো ট্রান্সপ্লান্টই করাতে হবে। তবে বেঁচে যাবে সে। এতে খরচও পড়বে অনেক! ভারতেই এ চিকিৎসা করালে লাগবে ৫০ লাখ টাকা। বর্তমানে বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যায়ের ডি ব্লকের ১৫ তলার হেমাটোলজি বিভাগে আছে ইয়ামিন। সিদ্ধিরগঞ্জ, নয়াআটি এলাকার একটি স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ত ইয়ামিন। গত বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি স্কুল থেকে বাড়িতে এসে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে নারায়ণগঞ্জ মেডিপ্লাস মেডিক্যালে পরীক্ষা করা পর ডাক্তার ইয়ারি মাহাবুব তাকে রেফার করেন বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের হেমাটোলজি বিভাগের প্রধান ডাঃ এবিএম ইউনূসের কাছে। গ্রীন রোডের গ্রীন ভিউ ক্লিনিকে চিকিৎসারত অবস্থায় গত বছরের মার্চ মাসে ধরা পড়ে ব্লাড ক্যান্সার। এতদিন ক্যামোথেরাপি চলছিল। কিন্তু অবস্থা আরও খারাপ হওয়ায় তাকে নেয়া হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে। শিশুটির বাবা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী নূরুল আজিজ চৌধুরী এবং গৃহিণী মা সর্বস্ব দিয়ে চিকিৎসা খরচ চালিয়ে এখন নিঃস্ব। টাকার অভাবে ব্যাহত হচ্ছে শিশুটির চিকিৎসা কার্যক্রম। ব্যয়বহুল চিকিৎসা হওয়ায় এবং দেশে পর্যাপ্ত উন্নত চিকিৎসার অভাবে অনেক ক্যান্সার রোগী অকালে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য ॥ বাংলাদেশে মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের অনকোলজি বিভাগের প্রধান জাফর মোঃ মাসুদ জানান, হাসপাতালের খরচ ছাড়া ওষুধের দাম সবখানেই এক। তিনি মনে করেন এই বিশাল খরচ কমাতে সরকারী ও বেসরকারী উদ্যোগের পাশাপাশি সামাজিক সহযোগিতা দরকার। হয়তো সরকারী হাসপাতালে, হাসপাতাল খরচটা ফ্রিতে পাওয়া যায়, কিন্তু ওষুধের দাম একই। এক্ষেত্রে কমিউনিটিকে সম্পৃক্ত হতে হবে। এই চিকিৎসা ব্যয়বহুল হওয়ার কারণে বিশ্বের সব জায়গায় যাদের অর্থ আছে তারা সরকারের সঙ্গে সাহায্য করে। জাতীয় ক্যান্সার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ মোশাররফ হোসেন জনকণ্ঠকে জানান, দেশের জনসংখ্যা বাড়ার হারের সঙ্গে ক্যান্সার রোগের প্রকোপ বাড়ছে, তা সামাল দেয়া অনেকটাই কঠিন। এ ক্ষেত্রে সবার আগে সবাইকে সচেতন হওয়া দরকার, যাতে করে ক্যান্সারে আক্রান্ত না হতে হয়। এ জন্য তামাক সেবন থেকে শুরু করে যেসব কারণে ক্যান্সার হয় সেগুলো পরিহার করা জরুরী। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার গরিব মানুষের জন্য সারাদেশে বিনামূল্যে ক্যান্সার চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে। এ জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সংগ্রহের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এটা করা গেলে সারাদেশের চাপ কেবল ঢাকার একটি হাসপাতালে এসে পড়বে না। আর সিরিয়াল সঙ্কট কমে যাবে। এ ছাড়া ক্যান্সারের ওষুধও আগের চেয়ে অনেক সহজলভ্য এবং স্বল্প মূল্য হওয়ায় তা রোগীদের সাধ্যের মধ্যে চলে আসছে। তিনি আরও বলেন, দেশের ওষুধগুলোর মান বিদেশীগুলোর মতোই। দেশীয় যে ওষুধের দাম ৭০০ টাকা সেই একই জেনেরিকের বিদেশী কোন কোম্পানির ওষুধের দাম তিন হাজার টাকা। তাই আমরা যেসব ওষুধ দেশে তৈরি হয় সেগুলোই প্রাধান্য দিয়ে থাকি। রোগীদের বিদেশে পাড়ি ও চিকিৎসা খরচ ॥ দেশে ক্যান্সারের চিকিৎসা ও চিকিৎসকের ওপর আস্থাহীনতার কারণে প্রতিবছর দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে প্রায় চার শতাধিক কোটি টাকা। এ ধারণা সংশ্লিষ্টদের। বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর কয়েক হাজার মানুষ ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য পাশের দেশ ভারতসহ সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, চীন এমনকি জাপানেও যাচ্ছেন। জাতীয় ক্যান্সার ইনস্টিটিউটের ইপিডেমিওলোজি বিভাগের অধ্যাপক ডাঃ হাবিবুল্লাহ তালুকদার বলেন, দেশে ক্যান্সার রোগীর রেজিস্ট্রেশন না থাকায় নির্দিষ্ট সংখ্যা বলা যাবে না। তবে ধারণা করা হচ্ছে, দেশে বর্তমানে মোট ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা প্রায় ১৬ লাখ। প্রতিবছর কমপক্ষে ২০ হাজার রোগী দেশের বাইরে যায় চিকিৎসা করাতে। সে হিসাবে রোগীপ্রতি গড়ে ২ লাখ টাকা করে খরচ হলেও বছর শেষে সেই অংক দাঁড়ায় ৪০০ কোটিতে। তবে সবারই সমান টাকা এবং সমান সময় ব্যয় হয় না। চিকিৎসা ভিসা ছাড়া পর্যটন ভিসাসহ অন্য ভিসাতে দেশের বাইরে অনেকে চিকিৎসা করাচ্ছেন বলেও জানান ডাঃ হাবিবুল্লাহ তালুকদার। তিনি বলেন, চিকিৎসা ভিসা নিয়ে দেশের বাইরে যাওয়া রোগীর সংখ্যা দিয়ে মোট চিকিৎসাপ্রার্থীর সংখ্যা নিরূপণ করা সম্ভব নয়। জানা গেছে, একই ক্যান্সার চিকিৎসায় যুক্তরাষ্ট্রে খরচ পড়ে ৫০ লাখ, সিঙ্গাপুরে ১০ লাখ, থাইল্যান্ডে ৭ লাখ, মালয়েশিয়ায় ৬ লাখ এবং ভারতের দক্ষিণে অর্থাৎ মাদ্রাজ, বেঙ্গালুরু, ভেলুর ও চেন্নাইতে খরচ পড়ে মাত্র আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা। সবখানেই চিকিৎসার মান একই। তবে রোগীর ধরন এবং রোগের ধাপ (স্টেজ) অনুযায়ী খরচের তারতম্য হয়। ভারত, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুরসহ আরও ১৯টি দেশে রোগীরা চিকিৎসার জন্য যাচ্ছেন। তবে সবচেয়ে বেশি যাচ্ছেন ভারত, থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুর। কতোসংখ্যক রোগী বাংলাদেশ থেকে দেশের বাইরে গিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন, এ সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য কারও কাছে নেই বলে জানান ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অনকোলজি বিভাগের অধ্যাপক গোলাম মহিউদ্দীন ফারুক। তিনি বলেন, আমাদের দেশে ক্যান্সার রোগীদের কোন রেজিস্ট্রেশনের ব্যবস্থা এখনও নেই। তবে এটুকু বলতে পারি, পাঁচ বছর আগেও যেভাবে ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশ থেকে ভারতসহ বিভিন্ন দেশে মানুষ যেত, সেই অনুপাত আগের চেয়ে অনেক কমে এসেছে। চিকিৎসকদের প্রতি রোগীদের আস্থা বেড়েছে এবং আধুনিক যন্ত্রপাতি এখন অনেক জায়গায় থাকায় রোগীরা দেশের বাইরে যাচ্ছে কম। তবে বাংলাদেশে ক্যান্সার রোগীদের অপ্রতুল চিকিৎসা ও রোগীর প্রতি চিকিৎসা সংশ্লিষ্টদের ব্যবহারের আন্তরিকতার অভাবও এতো রোগীর দেশের বাইরে যাওয়ার অন্যতম কারণ বলেও স্বীকার করলেন সংশ্লিষ্টরা। বাংলাদেশে বর্তমানে ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সংখ্যা মাত্র ১২০ জন এবং সরকারী-বেসরকারী হাসপাতালগুলোতে এসব ক্যান্সার রোগীর জন্য সিট রয়েছে ৬০০টির মতো। চিকিৎসায় দীর্ঘসূত্রতাসহ চিকিৎসা ব্যবস্থার ধরন রোগীদের দেশের বাইরে যেতে বাধ্য করছে। দেশে চিকিৎসা সুবিধা ॥ আমাদের দেশে ক্যান্সার চিকিৎসার সুযোগ প্রয়োজনের তুলনায় এখনও অপ্রতুল। বাংলাদেশে ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য প্রথম রেডিওথেরাপি মেশিন স্থাপিত হয় কুমুদিনী হাসপাতালে ১৯৫৩ সালে। দ্বিতীয় কোবাল্ট-৬০ মেশিন স্থাপিত হয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১৯৫৯ সালে। পরবর্তীতে ১৯৬৪ সালে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। বাংলাদেশে ক্যান্সার সেবাদানের জন্য বিশেষায়িত হাসপাতাল জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল ৫০ শয্যা নিয়ে যাত্রা শুরু করে ১৯৮১ সালে। বর্তমানে ১৫০টি শয্যাসহ অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি যেমন তিনটি ডুয়েল এনার্জি লিনিয়ার এক্সিলেটর, দুটি কোবাল্ট-৬০ মেশিন, হাই ডোজরেট (এইচডিআর), ব্রাকিথেরাপি নিয়ে ক্যান্সার গবেষণা ও সেবাদানে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। মেডিক্যাল অনকোলজি, সার্জিক্যাল অনকোলজি এবং রেডিয়েশন অনকোলজিসহ এটি বিভিন্ন বিভাগ নিয়ে এটি মাল্টিডিসিপ্লিনারি সেবা দিয়ে যাচ্ছে রোগীদের। আমাদের দেশের অধিকাংশ ক্যান্সার বিশেষজ্ঞই ক্লিনিক্যাল অনকোলজিস্ট হিসেবে কাজ করেন যারা একই সঙ্গে রেডিয়েশন ও মেডিক্যাল অনকোলজি সেবা দিয়ে থাকেন। এছাড়া সার্জিক্যাল অনকোলজিতে ক্যান্সার আক্রান্ত স্থানে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়। সরকারী পর্যায়ে একটি মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, একটি ইনস্টিটিউটসহ মাত্র ৯টি মেডিক্যাল কলেজে বর্তমানে অনকোলজি বিভাগ চালু রয়েছে। সরকারী হাসপাতালগুলো দেশের মধ্যবিত্ত এবং নিম্নমধ্যবিত্ত রোগীদের সেবা দেয়ার গুরু দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার, আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাব সেবা প্রদানকে দুরূহ করে তুলছে। অধিকাংশ রোগী তাদের কাক্সিক্ষত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সরকারী সেবার পাশাপাশি কিছু প্রাইভেট হাসপাতালও ক্যান্সার সেবা দিয়ে যাচ্ছে। প্রাইভেট হাসপাতালগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় হচ্ছে ডেলটা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। ১৯৯৪ সালে যাত্রা শুরু করে ৩৫০ শয্যার এই হাসপাতালটি ২টি লিনিয়ার এক্সিলেটর, ২টি কোবাল্ট-৬০ এবং ২টি ব্রাকিথেরাপির মাধ্যমে ক্যান্সার সেবা দিয়ে আসছে। এছাড়াও স্কয়ার হাসপাতাল, ইউনাইটেড হাসপাতাল, খাজা ইউনুস আলী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল উন্নত ক্যান্সার সেবা দিয়ে আসছে। কিছু বেসরকারী সংস্থা ক্যান্সার সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করে যাচ্ছে। যেমন আহসানিয়া মিশন, ক্যান্সার সোসাইটি, আশিক ফাউন্ডেশন, দিগন্ত মেমোরিয়াল, মোসাব্বির ক্যান্সার সেন্টার তাদের নিজ নিজ উদ্যোগের মাধ্যমে ক্যান্সার চিকিৎসা ও সচেতনতায় অবদান রাখছে। আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘ইন্টারন্যাশনাল এ্যাটমিক এনার্জি (আইএইএ) বাংলাদেশের জনশক্তিকে রেডিয়েশন থেরাপিতে প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছে। কিন্তু এতদসত্ত্বেও আমাদের সামনে বিস্তর বাধা রয়েছে-চিকিৎসার উচ্চ খরচ, অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতির অপ্রতুলতা, প্রশিক্ষিত জনশক্তির অভাব এবং সচেতনতার অভাব ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে আমাদের ক্যান্সার সেবা ব্যাহত হচ্ছে।
×