ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ঘোষণা দিয়ে ফের প্রশ্নপত্র ফাঁস ॥ সংশ্লিষ্টদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

ঘোষণা দিয়ে ফের প্রশ্নপত্র ফাঁস ॥ সংশ্লিষ্টদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন

বিভাষ বাড়ৈ ॥ আগের দিনই ১০০ ভাগ কমনের নিশ্চয়তা দিয়ে ফেসবুকে দেয়া হয়েছিল বাংলা দ্বিতীয়পত্র পরীক্ষার প্রশ্নের বিজ্ঞাপন! এ তথ্য সকল গণমাধ্যমে প্রকাশও হয়েছে। বিজ্ঞাপনের ঘোষণা অনুসারে শনিবার পরীক্ষা শুরুর প্রায় এক ঘণ্টা আগে ‘বোর্ডের প্রশ্ন ফাঁস ব্যাংক’ নামের ফেসবুক আইডি থেকে প্রকাশ করা হয় হাতে লেখা উত্তরসহ ‘খ’ সেট প্রশ্ন। প্রশ্ন আসে আরও বেশ কিছু ফেসবুক গ্রুপ পেজে। লেখা হয়, ‘তাড়াতাড়ি পড়ে নেন’। শিক্ষা মন্ত্রণালয়, বিটিআরসি ও সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নাকের ডগায় এভাবেই নির্বিঘেœ চলে এ অপকর্ম। পরীক্ষা শেষে দেখা গেল, ভাইরাল হওয়া প্রশ্নের সঙ্গে আসল প্রশ্নের রয়েছে হুবহু মিল। বাংলা প্রথমপত্রের পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগের পর এভাবে এক দিন আগে রীতিমতো ঘোষণা দিয়ে প্রকাশ্যে দ্বিতীয় দিনের পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসে তোলপাড় শুরু হয়েছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোর বিশাল আয়োজন থাকার পরেও এমন ঘটনায় সমালোচনার ঝড় বইছে সর্বত্র। প্রশ্ন উঠেছে সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোর ভূমিকা নিয়ে। উদ্বেগজনক এ পরিস্থিতিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়, বিটিআরসিসহ সংশ্লিষ্ট দফতর প্রধানদের সঙ্গে কথা বলেছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্যের ভিত্তিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ হওয়া প্রশ্নপত্র খতিয়ে দেখছেন গোয়েন্দারা। গোয়েন্দা পুলিশকে ফেসবুকের লিংক পাঠিয়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলা হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী কথা বলেছেন বিটিআরসির চেয়ারম্যান ড. শাজাহান মাহমুদের সঙ্গে। অপরাধীদের নাগাল পাওয়ার চেষ্টা করছেন বলে বলছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রথমেই মনে রাখতে হবে অন্য যে কোনভাবে প্রশ্ন ফাঁস আর ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশ্ন ফাঁসের প্রক্রিয়া, ধরন সব আলাদা। সামাজিক মাধ্যমে অপকর্ম বন্ধ করতেও তাই চিন্তা হতে হবে আলাদা। এখানে প্রশ্ন সরবরাহকারী বিজ্ঞাপনদাতাদের ফেসবুক এ্যাকাউন্ট রিপোর্ট করে বন্ধ করানো হলেও, তা কোন স্থায়ী সমাধান নয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রিপোর্ট করে ফেসবুক গ্রুপ কিংবা প্রোফাইল বন্ধ করা যেতে পারে। কিন্তু বন্ধ করে লাভ কী? তারা ফের অন্য নামে আরেকটি এ্যাকাউন্ট খুলে একই কাজ শুরু করে। এক্ষেত্রে যা করা যায় তা হলো মোবাইল নম্বর ট্র্যাক করা। মোবাইলের বায়োমেট্রিক ডেটা করা হয়েছে অপরাধীদের খুঁজে বের করার জন্য। সেটা কাজে লাগানো যেতে পারে। এসব বিজ্ঞাপনদাতাদের লেনদেনে মোবাইল একমাত্র সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এমনকি ভাইবার, হোয়াটস এ্যাপ এগুলো ব্যবহার করতেও প্রয়োজন হয় মোবাইল নম্বর। প্রশাসন চাইলেই এদের খুঁজে বের করতে পারে বলে বলছেন বিশেষজ্ঞরা। এর আগে বৃহস্পতিবার বাংলা প্রথমপত্র পরীক্ষার আগেও বেশকিছু ফেসবুক পেজে প্রশ্ন আসে। যার অধিকাংশ প্রশ্ন ভুয়া বলে প্রমাণ মিললেও একটি প্রশ্ন সেটের সঙ্গে আসল প্রশ্নর মিল ছিল। যদিও তার পরেও পরীক্ষা ঠিকই অনুষ্ঠিত হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বোর্ড যদিও শেষ সময় পর্যন্তও স্বীকার করেনি ফাঁস হওয়া কোন প্রশ্নের সঙ্গে আসল প্রশ্নের হুবহু মিলের ঘটনা। বলা হয়, মিলিয়ে দেখা হয়েছে কিন্তু মিল পাওয়া যায়নি। পরীক্ষা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে কোন অপতৎপরতা বন্ধে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে ক’দিন ধরে ঘোষণা দেয়ার মধ্যেই বৃহস্পতিবার চলে অপরাধীদের নিবিঘ্ন তৎপরতা। সকলে আশা করেছিল, প্রথম দিন অভিযোগ ওঠার পর হয়তো তৎপর হবে সরকারের সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয় ও দফতরের কর্মকর্তারা। আগেই বলা হয়েছিল শিক্ষামন্ত্রী কথা বলবেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, বিটিআরসিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, তারা কথা বলেছেন। শিক্ষামন্ত্রী কথা বলেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিটিআরসির চেয়ারম্যানের সঙ্গে। তবে কথা হলেও সুফল যে মেলেনি তা বোঝা গেল বাংলা দ্বিতীয়পত্র পরীক্ষার একদিন আগেই। যখন ফেসবুক জুড়ে প্রশ্নপত্রের বিজ্ঞাপন চলছিল তখনও আশা করেছিল হয়তো অপরাধীরা পার পাবে না। আবার আশা ছিল যেসব প্রশ্ন পরীক্ষার আগে বের হচ্ছে তা হয়তো আসল প্রশ্নের সঙ্গে মিলবে না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আটক হয়নি কোন অপরাধী, চিহ্নিত করা গেলে কিনা তাও পরিষ্কার না। বরং পরীক্ষার পৌনে এক ঘণ্টা আগে ফেসবুকের কিছু গ্রুপের পেজে ফাঁস করা প্রশ্নের সঙ্গে মিলে গেল আসল প্রশ্ন। শনিবার সকাল ১০টায় পরীক্ষা শুরুর আগে বাংলা দ্বিতীয়পত্রের নৈর্ব্যক্তিক (বহুনির্বাচনী) অভীক্ষার ‘খ’ সেটের উত্তরসহ প্রশ্নপত্র পাওয়া যায় ফেসবুকে। যার সঙ্গেই আসল প্রশ্নপত্রের হুবহু মিল পাওয়া গেছে। সকাল ১০টায় পরীক্ষাটি শুরু হয়ে শেষ হয় দুপুর ১টায়। এছাড়া ফেসবুক মেসেঞ্জারে সকাল ৯টা ১৬ তে ‘হিমুর ছায়া’ নামের একটি আইডি থেকেও উত্তরসহ ‘খ’ সেটের প্রশ্ন ইমেজ আকারে পাঠানো হয়। পরীক্ষা শেষে দেখা যায়, বহু নির্বাচনী প্রশ্নের সঙ্গে ফাঁস হওয়া প্রশ্ন হুবহু মিলে গেছে। শিক্ষা বোর্ডের একাধিক কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও বিটিআরসি শুক্রবার রাত থেকে ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপ ও পেজ নজরদারিতে রাখার পরও শনিবার সকাল পৌনে ন’টা থেকে বাংলা দ্বিতীয়পত্রের নৈর্ব্যক্তিক অভীক্ষার ‘খ’ সেটের উত্তরসহ প্রশ্নপত্রটি ফেসবুকে পাওয়া যায়। প্রথমে প্রশ্নপত্রটি একটি গ্রুপে আপলোড হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য অনেক গ্রুপ ও পেজে ছড়িয়ে পড়ে। ফেসবুকে ওই প্রশ্নপত্রটি ছড়িয়ে দিয়ে পোস্টকারীরা লিখেছেন, ‘তাড়াতাড়ি পড়ে নেন। যাদের যাদের লাগবে দ্রুত ইনবক্স করুন। পেজে লাইক দিয়ে এ্যাক্টিভ থাকুন।’ যেসব আইডি থেকে ফাঁস হচ্ছে প্রশ্ন ॥ পরীক্ষার প্রথম দিনই ফেসবুকের কয়েকটি আইডি থেকে যোগাযোগের সূত্র দিয়ে অর্থের বিনিময়ে প্রশ্নপত্র দেয়া হয়েছে। পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর দেখা গেছে, মূল প্রশ্নপত্র আর ফেসবুকে যোগাযোগের পর পাওয়া বহু নির্বাচনী প্রশ্ন (এমসিকিউ) হুবহু এক। আবার কিছু আইডি থেকে প্রশ্নপত্র দেয়া হলেও তা মেলেনি। অনেক আইডি থেকে পরীক্ষার আগে রচনামূলক অংশের প্রশ্ন দেয়া হলেও সেগুলোর মিল পাওয়া যায়নি মূল প্রশ্নপত্রের সঙ্গে। এ অবস্থার মধ্যেই প্রথম দিন পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ফেসবুকে দেয়া প্রশ্নের সঙ্গে মূল প্রশ্নের মিল নেই। দ্বিতীয় দিনের পরীক্ষাকে সামনে রেখে বৃহস্পতিবার রাত থেকেই প্রশ্ন পেতে আগ্রহীরা ফেসবুকে অনবরত নজর রাখছিলেন। আগাম প্রশ্নপত্র যেসব ফেসবুক পেজ থেকে দেয়া হচ্ছিল তারা প্রথমে ইনবক্সে যোগাযোগ করতে বলছে। সেখানে যোগাযোগ করা হলে মোবাইল ফোন নম্বর ও হোয়াটস এ্যাপ নম্বর দেয়া হচ্ছিল। নিরাপত্তা সংরক্ষণ করার জন্য হোয়াটস এ্যাপের মাধ্যমেও দেয়া হয় প্রশ্নপত্র। আগাম প্রশ্নপত্র পেজভেদে ৭০০ থেকে দুই হাজার টাকা চাওয়া হয়। গত কয়েক দিনের তৎপরতা পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, ‘ঝঝঈ ঊীধস য়ঁবংঃরড়হ ২০১৮’ নামের একটি ফেসবুক আইডিতে এমসিকিউ অংশের প্রশ্ন দেয়া হয়েছে, যা দেখতে হুবহু প্রশ্নের মতোই। পোস্টের ওপরে লেখা আছে, ‘প্রমাণ দেখ দিতে পারি কি না...। বাংলা দ্বিতীয়পত্র আজকেই দেব।’ এরপর ইংরেজিতে লেখা ‘পধষষ ফধড়... ০১৭৬৪৪৩৯১০০’। ‘এস.এস.সি এক্সাম ক্রোশ্চেন ২০১৮’ ফেসবুক পেজে এমসিকিউ প্রশ্নপত্র আপ করা হয়েছে প্রথম দিন। ফেসবুকের ওই পেজের ইনবক্সে শনিবারের প্রশ্ন চাওয়া হয়। তখন ইনবক্সে ০১৯০৭১২৪২০৫ নম্বরে ফোন করে কথা বলার জন্য বলা হয়। প্রথম দিন ওই নম্বরে ফোন করলে জয় পরিচয় দিয়ে একজন জানান, ‘আমার এই মোবাইল ফোনটি মোবাইল ব্যাংকিং নম্বর। এখানে এক হাজার টাকা দেয়া হলে সঙ্গে সঙ্গে বাংলা দ্বিতীয়পত্রের প্রশ্নপত্র ফেসবুকের ইনবক্সে দেয়া হবে।’ পরীক্ষা শুরু আগে ’@@@@ bangla 2nd Paper @@@@@’ নামে একটি মেসেঞ্জার গ্রুপে ইমেজ আকারে আসছে প্রশ্ন। ÔPSC · JSC · SSC · HSC Exam Helping Center’ নামের একটি ফেসবুক গ্রুপে Sadia Islam Setu নামের ফেসবুক আইডি থেকে প্রশ্ন ফাঁসের বিজ্ঞাপন দেয়া হয়। পোস্টে লেখা হয় ‘SSC Q 2018 BANGLA 1ST PAPER FREE TE DIBO. JADER LAGBE INBOX ME. ওই ফেসবুক আইডিতে শনিবার মেসেজের মাধ্যমে যোগাযোগ করা হলে ‘@@@@ bangla 2nd Paper @@@@@’ নামের একটি মেসেঞ্জার গ্রুপে যুক্ত হতে বলা হয়। ‘PSC JSC SSC HSC Real Question Out All Board 100% CommonÕ, ÔSSC Question OutÕ, ÔSSC Question Out 100% Common All BD & Reyult Change 2018+19+20All BoarD’ নামে ফেসবুক গ্রুপগুলোতেও প্রশ্ন ইমেজ আকারে পরীক্ষার আগেই দেয়া হয়েছে বিভিন্ন সময়। ÔPSC JSC SSC HSC ALL BOARD QUESTIONS 100% COMMON’ নামের একটি পেজে ’ýMD Rahim Khan’ নামের এক ফেসবুক আইডি থেকে বলা হয়েছে, ‘১০০% কমন পড়ার পর টাকা নেব। তার আগে এক টাকাও নেয়া হবে না।’ প্রশাসন কি কূলকিনারা করতে ব্যর্থ ॥ এটা এখন পরিষ্কার যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশ্নপত্র ফাঁস কোনভাবে রোধ করতে পারছে না শিক্ষা মন্ত্রণালয়, বিটিআরসি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। অপরাধীদের নাগাল না পাওয়ায় এখন প্রশ্ন সরবরাহের বিজ্ঞাপনে সয়লাব ভার্চুয়াল জগৎ। প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা থেকে শুরু করে জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষাসহ চাকরির নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র বিজ্ঞাপন আকারে প্রচার করা হলেও অপরাধীদের চিহ্নিত করার মাত্রা নগণ্য। মাঝে মাঝে কয়েকজনের আটকের খবর আসলেও তৎপর আরো অসংখ্য অপরাধী। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধারণা, সরকারকে বিপাকে ফেলতে বারবার চক্রটি প্রশ্নপত্র ফাঁস করছে। প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে কোচিং সেন্টারের শিক্ষক, রাজনৈতিক নেতা ও পরীক্ষা কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকরা জড়িত। প্রশ্ন ফাঁসের স্থল হতে পাতে জেলা প্রশাসনের ট্রেজারি কিংবা সরকারের অন্যান্য ট্রেজারি। হতে পারে পরীক্ষা কেন্দ্র। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ড. নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। কিন্তু সে সঙ্কট কেন উত্তরণ করা যাচ্ছে না? প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় অসহায়ত্বই প্রকাশ করেছেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মোহাম্মদ সোহরাব হোসাইন। তিনি বলেছেন, লাখ লাখ সৎ মানুষের মধ্যে যদি একজনও অসৎ হন, তাহলে সবার সততাকে ওই একজনই প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারেন। এ কারণে শতভাগ নিশ্চিত হয়ে বলতে পারি না, প্রশ্নফাঁস রোধ করা সম্ভব। ফলে এটি একটি অসহায় অবস্থা। যদি প্রশ্ন ফাঁস বন্ধ হয়, তাহলে সেটা হবে সৌভাগ্যের ব্যাপার। সোহরাব হোসাইন আরও বলেন, অধিকাংশ শিক্ষক, অভিভাবক, শিক্ষার্থী প্রশ্নপত্র ফাঁসকে ঘৃণা করেন। তারা বিষয়টিকে প্রশ্রয় দেন না। এরপরও এই পরীক্ষার প্রশ্নপত্র পাঠানোর সঙ্গে দশ হাজার শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী যুক্ত। একেক কেন্দ্রে একেকভাবে প্রশ্নপত্র যায়। এরমধ্যে রয়েছে স্পিড বোর্ড, রিক্সাও। এছাড়া কোন কোন কেন্দ্রে পায়ে হেঁটেও প্রশ্ন পৌঁছে দেয়া হয়। এজন্য কোথাও কোথাও ট্রেজারি বা থানা থেকে প্রশ্ন নিতে হয় সকাল ৯টা বা তারও আগে। কারণ সঠিক সময়ে কেন্দ্রে প্রশ্নপত্র পৌঁছাতে হবে। প্রত্যেক থানা বা ট্রেজারি থেকে কেন্দ্রে পৌঁছানোর আগে তিন জন সরাসরি এর দায়িত্বে থাকেন। এখন কাকে সন্দেহ করব? তিনি আরও বলেন, সকাল ৯টার মধ্যেই প্রশ্নপত্র কেন্দ্রে পৌঁছাতে হয়। এছাড়া বিজি প্রেসকেও আমরা অনেক নিয়ন্ত্রণে এনেছি। আগে বিজি প্রেসে প্রশ্নপত্র দেখতে পারতেন ২৮ জন। সেখান থেকে কমিয়ে ১৮ জনে আনা হয়েছে। সুতরাং সেখান থেকে হয়তো প্রশ্নপত্র ফাঁসটা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে। তবে শতভাগ নিশ্চিত হয়ে আমি বলতে পারবো না। এটা একটা অসহায় অবস্থা। যেসব ফেসবুক গ্রুপ ও পেজে প্রশ্ন আসছে, সেগুলোর পোস্টকারী তার ফোন নম্বরও দিয়ে দেন। তাহলে তাদের শনাক্ত করা কি অসম্ভব? শিক্ষা সচিব বলেন, সেটা কি বিটিআরসি দেখছে না? বিটিআরসির দায়িত্ব আছে না? তাদের মন্ত্রণালয় কি দেখছে না? ফেসবুক বন্ধ করা সম্ভব নয়। যখন একটি ফেসবুকে একটি প্রশ্ন আসছে, তখন থেকে বন্ধ করতে করতে এরই মধ্যে পরীক্ষা শেষ হয়ে যাচ্ছে। শুধু বাংলাদেশ থেকে নয়, বিশ্বের যেকোন জায়গা থেকেই ফেসবুক খোলা হয়। বাংলাদেশ থেকে খুললে হয়তো সেটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যায়। কিন্তু বাইরে থেকে যারা ফেসবুক এ্যাকাউন্ট খুলছেন, তাদের এ্যাকাউন্টগুলো বন্ধ করতে হলে অনেক ঝামেলা আছে। বিকাশসহ বাংলাদেশে যেসব ক্যাশ ট্রান্সফার এজেন্সি আছে, প্রত্যেকের স্টেটমেন্ট নিতে পুলিশকে বলেছি। কিন্তু নাম পরিচয় দিয়ে ফাঁস করা হলেও কেন কিছু করা যাচ্ছে না? ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সচিব শাহেদুল খবীর চৌধুরী বলছিলেন, আজকের (শনিবার) ঘটনা আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানিয়েছি। তথ্য দিয়েছি। তারাও কাজ করছেন। এটা সাইবার ক্রাইম। এটা পরিষ্কার যে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে এটা করা হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা পাক আর না পাক পরীক্ষার কিছু সময় আগে ফেসবুকে ছেড়ে দিয়ে সরকারকে সমালোচনায় ফেলতেই করা হচ্ছে। তবে আমরা বসে নেই। সরকার বসে নেই। এটা সাইবার ক্রাইম। এটা দেখার মতো ক্যাপাসিটি আছে আমাদের ডিবির। আমরা ডিবির সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। ইতোমধ্যেই এক অপরাধীকে চিহ্নিত করাও গেছে। তথ্য প্রযুক্তিবিদ সাব্বির আহমেদ সুমন বলছিলেন, আমাদের আইন শৃঙ্খলা বাহিনী চাইলে অপরাধীদের ধরা অসম্ভব কিছু না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অনেক বড় বড় অপরাধীকে ধরে ফেলছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কাজ করার মতো ক্যাপাসিটিও আছে তাদের। তারা না পারে কিছু নেই। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখন ফেসবুকের সঙ্গে আমাদের সরকারের চুক্তি আছে। ফেসবুকে যেসব আইডি থেকে প্রশ্ন ছাড়া হচ্ছে, বিজ্ঞাপন দেয়া হচ্ছে সরকার তাদের তথ্য চাইতে পারে ফেসবুকের কাছে। দেশের বাইরে থেকে কেউ অপরাধী করলে হয়তো তাকে ধরা একটু কঠিন তবু অসম্ভব নয়। তবে দেশের ভেতরে হলে শীঘ্রই সম্ভব বলে আমি মনে করি। তবে কেন পারছে না এটা সরকার, সরকারের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাই ভাল বলতে পারবেন। প্রযুক্তিবিদ সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ তানভীর হাসান জোহার মতে, এই প্রশ্ন সরবরাহকারী বিজ্ঞাপনদাতাদের ফেসবুক এ্যাকাউন্ট রিপোর্ট করে বন্ধ করানো হলেও, রিপোর্ট করে ফেসবুক গ্রুপ কিংবা প্রোফাইল বন্ধ করা যেতে পারে। কিন্তু বন্ধ করে লাভ কী? তারা ফের অন্য নামে আরেকটি এ্যাকাউন্ট খুলে একই কাজ শুরু করে। এক্ষেত্রে যা করা যায় তা হলো-মোবাইল নম্বর ট্র্যাক করা। মোবাইলের বায়োমেট্রিক ডেটা করা হয়েছে অপরাধীদের খুঁজে বের করার জন্য। সেটা কাজে লাগানো যেতে পারে। এসব বিজ্ঞাপনদাতাদের লেনদেনে মোবাইল একমাত্র সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এমনকি ভাইবার, হোয়াটস এ্যাপ এগুলো ব্যবহার করতেও প্রয়োজন হয় মোবাইল নম্বর। প্রশাসন চাইলেই এদের খুঁজে বের করতে পারে।
×