ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

খালেদা জিয়া দণ্ডিত হলে কি নির্বাচন করতে পারবেন?

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

খালেদা জিয়া দণ্ডিত হলে কি নির্বাচন করতে পারবেন?

বিকাশ দত্ত ॥ দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়া দণ্ডিত হলে আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন কিনা এ নিয়ে চলছে বিতর্ক। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার জন্য ৮ ফেব্রুয়ারি দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। আইন অনুযায়ী নিম্ন আদালতের দণ্ড উচ্চ আদালত স্থগিত করলেই কেবল তিনি নির্বাচনে যেতে পারবেন। অন্যথায় তাকে নির্বাচন থেকে দূরেই থাকতে হবে। খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা বলছেন, যদি এমন রায় হয় তবে নিশ্চয়ই তারা উচ্চ আদালতে আপীল করবেন। উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ নিয়েই খালেদা জিয়া নির্বাচন করতে পারবেন। কোন কোন আইনজীবী অবশ্য এতে সন্দেহ প্রকাশ করে বলেন, উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ পাওয়ার জন্য একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া অবলম্বন করতে হয়। এই সময়ের মধ্যে হবে কিনা এ নিয়ে সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। সংবিধানের ৬৬ (২) (ঘ) অনুচ্ছেদে সংসদে নির্বাচিত হওয়ার যোগ্যতা ও অযোগ্যতার বিষয়ে বলা হয়েছে, ‘যদি কেউ নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে অন্যূন দুই বছরের কারাদ-ে দ-িত হন এবং তার মুক্তিলাভের পর পাঁচ বছরকাল অতিবাহিত না হয়ে থাকে, তবে তিনি সংসদ সদস্য থাকার যোগ্য হবেন না’। সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহম্মেদ এ সম্পর্কে জনকণ্ঠকে বলেন, রায়ে যদি খালেদা জিয়ার দণ্ড হয় তা হলে তাকে জেলে যেতে হবে। এর পর রায় স্থগিতের জন্য হাইকোর্টে আপীল করতে হবে এবং জামিনের আবেদন করতে হবে। উচ্চ আদালতে যদি রায় স্থগিত না হয় তাহলে তিনি নির্বাচন করতে পারবেন না। আর রায় যদি স্থগিত হয়ে যায় তাহলে তিনি নির্বাচন করতে পারবেন। নির্বাচিত হওয়ার পর যদি তার এই রায় আপীলে বহাল থাকে তাহলে তার সংসদ পদ বাতিল হয়ে যাবে। আর যদি দ-িত না হন তা হলে খালাস পাবেন। খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা বলছেন, তাদের নেত্রীর আশঙ্কা অনুযায়ী এই মামলার রায় তাদের বিরুদ্ধে গেলে উচ্চ আদালতে অবশ্যই আপীল করা হবে। জাতীয় নির্বাচনের আগে এই মামলার মীমাংসা উচ্চ আদালতে হয়ে যাবে বলে তারা মনে করেন না। বিচারিক আদালতের রায় বিরুদ্ধে গেলেও নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে কোন শঙ্কা থাকার কারণ নেই। খালেদা জিয়ার আইনজীবী আবদুর রেজ্জাক খান জনকণ্ঠকে বলেন, বিচারিক আদালতে সাজা হলেও বিএনপি নেত্রী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। কীভাবে নির্বাচন করতে পারবেন এমন প্রশ্নে রেজ্জাক খান বলেন, তাকে সাজা দেয়া হলে আমরা অবশ্যই আপীল করব। আর ফৌজদারি কার্যবিধির ৪২৬ ধারায় আছে, কনভিকশন এ্যান্ড সেনটেন্স (দণ্ড ও সাজা) সাসপেন্ড হলে তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম জনকণ্ঠকে বলেন, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া দ-িত হলে প্রথমে আত্মসমর্পণ করে তাকে জেলে যেতে হবে। এর পরই তিনি আপীলের আবেদন করার সুযোগ পাবেন। সাধারণ একজন অপরাধী যেভাবে আইনী প্রক্রিয়ায় যাবেন, খালেদা জিয়াকেও সেভাবেই যেতে হবে। প্রথমে আত্মসমর্পণ করে জেলে যেতে হবে। এরপর তিনি আপীলের আবেদন করতে পারবেন। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় রায় ঘোষণার জন্য ৮ ফেব্রুয়ারি দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক শেষে বকশীবাজার কারা অধিদফতরের প্যারেড গ্রাউন্ডে স্থাপিত বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক ড. মোঃ আখতারুজ্জামান রায়ের জন্য এ দিন নির্ধারণ করেন। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা ছাড়াও বর্তমানে জিয়া চ্যারিটেবল দুর্নীতি মামলার যুক্তিতর্ক চলছে। বর্তমানে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ৩৭টি মামলা চলমান। মামলার অভিযোগে বলা হয়, এতিমদের জন্য বিদেশ থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাত করেছেন এ মামলার আসামিরা। মামলা হওয়ার পাঁচ বছর পর ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ খালেদাসহ ছয় আসামির বিরুদ্ধে ফৌজদারি দ-বিধির ১০৯, ৪০৯ এবং দুদক আইনের ৫(২) ধারায় অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করেন। দ-বিধির ৪০৯ -এ বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি তাহার সরকারী কর্মচারীজনিত ক্ষমতার বা একজন ব্যাংকার, বণিক, আড়তদার, দালাল, এ্যাাটর্নি বা প্রতিভূ হিসাবে তাহার ব্যবসায় যে কোন প্রকারে কোন সম্পত্তি বা কোন সম্পত্তির ওপর আধিপত্যের ভারপ্রাপ্ত হইয়া সম্পত্তি সম্পর্কে অপরাধমূলক বিশ্বাস ভঙ্গ করেন, সেই ব্যক্তি যাবজ্জীবন কারাদ-ে বা দশ বৎসর পর্যন্ত কারাদ-ে দ-িত হইবে এবং তদুপরি অর্থদ-ে দ-িত হইবে। অন্যদিকে দুদক আইনের ৫(২): কোন সরকারী কর্মচারী অপরাধমূলক অসদাচরণ করিলে বা করার উদ্যোগ গ্রহণ করিলে তিনি সাত বছর পর্যন্ত কারাদ- অথবা জরিমানা অথবা উভয় দ-ের যোগ্য হইবেন। অপরাধমূলক অসদাচরণ সংশ্লিষ্ট অর্থিক সম্পদ অথবা সম্পত্তি রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত হইবে। দুদকের প্রধান কৌঁসুলি মোশারফ হোসেন কাজল জনকণ্ঠকে বলেন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আমরা সকল প্রকার অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। মামলার রায়ে তার সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করছি। বিদেশী অনুদানের অর্থ এতিমদের কল্যাণে খরচ না করে আসামিরা বিভিন্ন পদ্ধতিতে হস্তান্তর, রূপান্তর করেছেন। বছরের পর বছর তারা ওই অর্থ পাচার করেছেন। সৌদি কমার্শিয়াল ব্যাংক থেকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের নামে যে অর্থ প্রাইম ব্যাংকে আসে, এ অর্থ দুই ভাগে ভাগ হয়। পরে আসামি মোস্তাফিজুর রহমান ও তারেক রহমানের যৌথ এ্যাকাউন্ট থেকে এ অর্থ উত্তোলন করা হয়। ৩২ সাক্ষীর জবানবন্দী উপস্থাপন করে আমি আদালতে যে বিবরণ দিয়েছি, এর মাধ্যমে আসামিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণ করতে পেরেছি বলে মনে করি। আর তাই জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ১০৯ ও ৪০৯ দ-বিধিতে আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি কামনা করেছি। অপরদিকে সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল জনকণ্ঠকে বলেন, এ মামলাটি একটি সারবত্তাহীন মামলা। রাষ্ট্রপক্ষ কোন অভিযোগই প্রমাণ করতে পারেনি। কোন এভিডেন্সেই মামলাটি প্রমাণিত হয়নি। কুয়েত থেকে আসা অর্থে খালেদা জিয়ার কোন সংশ্লিষ্টতাও প্রমাণ হয়নি। মামলায় বেগম খালেদা জিয়া খালাস পাবেন। বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে প্রায় ৩৭ টি মামলা রয়েছে। এসবই রাজনৈতিক মামলা। হয়রানি করার জন্যই এ সমস্ত মামলা দায়ের করা হয়েছে। আমরা আইনীভাবেই এসব মোকাবেলা করব।
×